জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাহাউদ্দিন নাছিমের কড়া বিবৃতি
- সময় ০৭:৪৭:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 48
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর নজিরবিহীন জুলুম, নির্যাতন, হত্যা এবং অন্যায় ও অন্যায্যভাবে গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম কড়া বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ফ্যাসিস্ট ইউনূসের নেতৃত্বে এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী প্রগতিশীল ব্যক্তিদের উপর একচেটিয়া নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। কখনো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, আবার কখনো রাষ্ট্রক্ষমতার প্রচ্ছন্ন সমর্থনে দেশবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধী উগ্র-সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালন দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক এই সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ এবং সেটা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সরকার উদাসীন।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গভীরভাবে সংকটাপন্ন। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ অন্যান্য জাতি ও সম্প্রদায়ের মানুষের উপর নির্মম নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। অবৈধ দখলদার সরকার নানা উপায়ে মেরুকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাত দুষ্টু হয়ে বিভেদের বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। তারা দেশের বিরুদ্ধে দেশ, সমাজের বিরুদ্ধে সমাজ, সময়ের বিরুদ্ধে সময়, ইতিহাসের বিরুদ্ধে ইতিহাসকে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করছে। তাদের এই অপতৎপরতা বাস্তবায়নে এমন কোনো হীন পন্থা নেই যে তারা অবলম্বন করছে না।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট ইউনূসের নেতৃত্বে অবৈধ দখলদার সরকার বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধকে টার্গেট করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলতে তারা সব উপায় অবলম্বন করছে। যে কারণে আঘাতটা এসেছে বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের প্রতি সংবেদনশীল মানুষ এটা মেনে নিচ্ছে না। তারা এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে লড়াই জারি রেখেছে। অথচ সরকার তাদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টায় ব্যস্ত, তাদের কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করতে চায়। আমরা ইতিহাসের পরতে পরতে দেখতে পাই, বাংলা মায়ের কোমল কোলে বেড়ে ওঠা দামাল ছেলেরা রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সর্বদা দানবীয় শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে এনেছে। বার বার বুকের তাজা রক্ত দিয়ে উষর হয়ে যাওয়া মাটিকে উর্বরতা দান করেছে, মানবিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির চাষাবাদ করেছে।
এই সরকার যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে চলেছে, ‘জয় বাংলা’-কে জাতীয় স্লোগান থেকে বাদ দিয়েছে তখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তরুণ-যুবারা শহর, নগর, বন্দর, গ্রামগঞ্জ ও হাটবাজারে ‘জয় বাংলা’ শুব্দযুগল লেখে সমগ্র বাংলাদেশ ছেঁয়ে দিচ্ছে। তারা কোনো অন্যায় বা বেআইনি কাজ করছে না। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে পক্ষে তাদের দৃঢ়তার জানান দিচ্ছে। অথচ সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে তাদের উপর নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা হামলা করছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। গতকাল চাপাইনবাবগঞ্জে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ লেখার অপরাধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর ইলেকট্রনিক বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা এবং নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী রায়হানকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, শারীরিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে মারাত্মক জখম করছে, অন্যায় ও অন্যায্যভাবে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হচ্ছে। এ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীরাও রেহাই পাচ্ছে না।
আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই সকল অন্যায়, অবিচার ও বেআইনি অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই সরকার যে শুধু রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে যে বিভেদের বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে, তা নয়। সমগ্র জাতিকে বিভক্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে দেশের জনগণ একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। এমনকি আলেম সমাজের মধ্যেও তারা বিভেদের কার্ড খেলা হচ্ছে। যার ফলে আজ বিশ্ব ইজতেমা পালন করতে গিয়ে অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। আমরা জাতি ধ্বংসের এই পাঁয়তারা থেকে সরকারকে সরে আসার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক জনগণকে জাতির ক্রান্তিকালে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।