ইজতেমায় প্রাণহানির শেষ কোথায়?
- সময় ০৬:১৮:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 29
বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের ভেতরে দু’টি গ্রুপের দ্বন্দ্ব আবারও প্রকাশ্যে এসেছে, এমনকি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণহানিও থেমে নেই। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা উভয় পক্ষের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তারপরও শঙ্কা রয়ে গেছে, ধর্মভিত্তিক এমন মহৎ আয়োজনে প্রাণহানির শেষ কোথায়?
ইজতেমা মাঠে হামলা ও সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। এ ঘটনায় আজ মামলা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, মামলার পর জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
আজ বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষ মাওলানা জুবায়েরপন্থী ও সাদপন্থীদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-টঙ্গী বিভাগ) এন এম নাসিরুদ্দিন আজ বেলা দুইটার দিকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত হয়েছি।’
অবশ্য বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মো. মামুনুল হক উল্লেখ করেছেন, নিহত হয়েছেন চারজন। তিনি বলেছেন, এটা সংঘর্ষে নিহত হওয়ার ঘটনা নয়। সাদপন্থীরা হামলা করে চারজনকে হত্যা করেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুই পক্ষের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জড়িত ব্যক্তিদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
সাদপন্থীরা বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা দুই পক্ষ যদি আলোচনা করে সমাধান করতে পারে, তাহলে সাদপন্থীরা ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন। ইজতেমার তারিখ সরকার বাতিল করেনি। তারা আলোচনা করুক।
টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখল নিয়ে হতাহতের ঘটনা “দুঃখ প্রকাশ” করে ইজতেমা মাঠ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা। তারা মাঠ ছাড়ার পর দায়িত্ব নেবে সরকার।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে পাঁচ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মাওলানা সাদের অনুসারীদের প্রতিনিধি রেজা আরিফ। এ ঘোষণার পর থেকে সেনা প্রহরায় ইজতেমা মাঠ ছাড়তে শুরু করেছেন সাদপন্থিরা।
সংবাদ সম্মেলনে রেজা আরিফ বলেন, আমরা মাঠ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে কোনো সমস্যা তৈরি না হয়। কারণ অতীতে আমরা সরকারের সব কথা রেখেছি। এবারও আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে সম্মান করেছি। আমরা যার যার মতো করে চলে যাবো। কামারপাড়া দিয়ে যাওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের যাবতীয় সহযোগিতা করবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে, অবশ্যই আমরা মুসলমান হিসেবে এবং দেশের নাগরিক হিসেবে দুঃখ প্রকাশ করছি। যা হয়েছে, অনুচিত হয়েছে। মুসলমান-মুসলমানের মধ্যে মারামারি, এটা একেবারে ঠিক হয়নি। আমরা এর জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ক ম খালিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে তাবলীগ জামাতের সাদপন্থিদের সন্ত্রাসী সংগঠন বলে মন্তব্য করেছেন জুবায়েরপন্থী আলেমরা। একইসঙ্গে সংগঠনটির নিষিদ্ধের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সাতজন উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক এ দাবি জানান।
সাদপন্থিরা সন্ত্রাসী বার্তা দিয়েছে মন্তব্য করে মামুনুল হক বলেন, জোবায়েরপন্থীরা কোনো বিশৃঙ্খলা চায় না। অনেকে এটাকে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বলছেন। কিন্তু তা নয়। বরং সাদপন্থিরা আমাদের হতাহত করেছে। এই হত্যায় জড়িতদের আজকের মধ্যেই গ্রেপ্তার করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন বলেন, জোবায়েরপন্থিদের ইজতেমা অবশ্যই হবে। কিন্তু সাদপন্থীদের ইজতেমার আর কোনো সুযোগ নেই।
এর আগে ইজতেমা মাঠের দখলকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে জুবায়েরপন্থী ও সাদপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন– কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দু গ্রামের আমিনুল ইসলাম বাচ্চু (৭০) এবং রাজধানীর দক্ষিণ খান এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে বেলাল হোসেন (৬০)।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টঙ্গীতে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের ভেতরে দু’টি গ্রুপের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসার পর স্থান সংকুলানের কারণে প্রথমে জেলাভিত্তিক দুই ধাপে ইজতেমা পালনের সিদ্ধান্ত হয় ২০১১ সালে। এরপর রাজনৈতিক বাতাবরণে ২০১৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এই বিভক্তি এখনো চলমান। ২০১৮ সাল থেকে তাবলীগ জামাতকে দুইটি ভাগে ভাগ করে ইজতেমা পালনের নিয়ম করে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।