কুষ্টিয়া গণপূর্তের বেপোরোয়া জাহিদুলের নতুন টার্গেট যশোর!
- সময় ১২:২৫:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 207
কুষ্টিয়ায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে দাপট খাটিয়ে বিভিন্ন উন্নয়ণ প্রকল্পের পূর্ত কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের সরাসরি জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। ওই কর্মকর্তা বর্তমানে যশোর গণপূর্ত বিভাগে কর্মরত আছেন। একই টার্গেট নিয়ে তিনি যশোরে কাজ শুরু করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ ও তার চাচাতো ভাই কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার ছত্রছায়ায় ওই কর্মকর্তা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ছিলেন বেপরোয়া।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ সড়ক, সীমানা প্রাচীর ও ড্রেন নির্মাণ, লিফট ক্রয়সহ পুকুর খননের টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের রাস্তা, ড্রেন নির্মাণ ও পুকুর খননসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য ২০২১ সালের ডিসেম্বরে গণপূর্ত বিভাগ, কুষ্টিয়া ৭ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করে। এ কাজের জন্য দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। সর্বনিম্ন দরদাতা হয় মেসার্স শামীম এন্টারপ্রাইজ। অথচ তাদের বাদ দিয়ে গ্যালিক্সি অ্যাসোসিয়েটসকে কার্যাদেশ দেন নির্বাহী প্রকৌশলী। এই দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় নেন প্রায় চার মাস।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, নির্বাহী প্রকৌশলী ওই চার মাস সময় নেন কেবল তার পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য।
একইভাবে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজের জন্য ১৯ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করেন নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম। যেখানে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় কেএসএসই-এসএইচজে (জেভি) নামক একটি প্রতিষ্ঠান। এই কাজেও তিনি সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেন।
অভিযোগ রয়েছে, সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়ার পরেও কেএসএসই-এসএইচজে (জেভি) নামক প্রতিষ্ঠানটির কাছে আড়াই পার্সেন্ট কমিশন দাবি করেন ওই নির্বাহী প্রকৌশলী। তারা সেটি দিতে অস্বীকৃতি জানালে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কার্যাদেশ দেয়া হয়। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেওয়ায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় ২০ লাখ টাকার বেশি।
একই হাসপাতাল লিফটের জন্য তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে দরপত্র আহবান করা হয়। প্রতিটি প্যাকেজে ছয়টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করে।
হাসপাতালের একাডেমিক ভবনে লিফটের দরপত্রে সর্বনিম্ন ও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হন যথাক্রমে রওশন এলিবেটরস এবং রংপুর মেটাল ইন্ডাষ্ট্রিজ। কিন্তু এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে কার্যাদেশ দেয়া হয় তৃতীয় সর্বনিম্ন সুপার স্টার ইঞ্জিনিয়ারিং এর অনুকূলে।
আবার হাসপাতাল ভবনের লিফটের দরপত্রেও সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হন রওশন এলিবেটরস। এই কাজেও তিনি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা সুপার স্টার ইনঞ্জিনিয়ারিং এর অনুকূলে কার্যাদেশ দেন। এই কাজের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করতে প্রায় চার মাস সময় নেন।
হাসপাতাল ভবনের লিফটের জন্য অপর আরেকটি দরপত্রেও তিনি একই কাজ করেন। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন হওয়া প্রথম চারটি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে পঞ্চম সর্বনিম্ন দরদাতা ক্রিয়েটিভ ইনঞ্জিনিয়ারিংকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। তাও প্রায় চার মাস পর।
এতো গেল হাসপাতালের অনিয়মের চিত্র। খোদ কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগীয় ক্যাম্পাসের মধ্যে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর ৪০ বছরের বাসভবনের কাঠামোগত নকশা পরিবর্তন কাজেও অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
আবার জেলা প্রশাসক কমপাউন্ডে একই কাজের জন্য বছরের শুরুতে এবং শেষে ভিন্ন ভিন্ন দরপত্র আহ্বান করে অর্থ লোপাটেরও অভিযোগ রয়েছে জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। কুষ্টিয়া জেলা নতুন সার্কিট হাউজ নির্মান প্রকল্পের আসবাব পত্র সরবারহ কাজ ঢাকার গণপূর্ত কাঠের কারখানা বিভাগ হতে করার কথা থাকলেও; সেখানেও নির্বাহী প্রকৌশলী সুকৌশলে কাজ দিয়ে দেন স্থানীয় এক ঠিকাদারকে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কুষ্টিয়ার সিভিল, স্যানিটারি, রংকরন, অভ্যন্তরীণ প্রাচীর, রাস্তা এবং বৈদ্যুতিক কাজসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজেও ছিলো তার অনিয়মের ছাপ।
কুষ্টিয়া ডিসি কোর্ট চত্বরে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের নির্মিত সাবষ্টেশন ভবন থাকলেও সেখানে কোন যন্ত্রাংশের অস্থিত্ব মেলেনি মাস কয়েক পরেই। কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ হাসপাতাল ভবন নির্মাণ কাজের ফাইনাল বিল পরিশোধের আগেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ৭৫ লক্ষ টাকা অগ্রিম জামানত প্রদান করে।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল নিজের খেয়াল-খুশি মতো দপ্তর চালাতেন। এ নিয়ে প্রধান প্রকৌশলীসহ বিভিন্নস্থানে অভিযোগ জানানো হলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে জানান, কাগজ পত্রে ত্রুটির কারনে ওই সমস্ত কাজে সর্বনিম্ন হওয়ার পরেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া যায়নি। যারা পেয়েছেন তারা নিয়ম মেনে পেয়েছেন।
এদিকে, কুষ্টিয়া থেকে যশোর একই বিভাগের মধ্যে বদলি হওয়াতে আগের ঠিকাদারদের কথা জেনে যশোরের লোকজনও আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন। দুর্নীতির অভিযোগ থাকা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কেন কুষ্টিয়া থাকতেই ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। যশোরে তিনি দুর্নীতি করতেই গিয়েছেন বলে মনে করেন কুষ্টিয়ার একাধিক ঠিকাদার। তারা বলেছেন, প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের রক্তে মিশে গেছে দুর্নীতি। তার মতো বেপোরোয়া প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।