নির্বাচনের সময় জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
- সময় ১০:৪০:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 27
আগামী বছর ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে দেশে জাতীয় নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের রূপরেখা তুলে ধরে এ কথা বলেন তিনি। জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণ একযোগে সম্প্রচার করে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যদি অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে আরও অন্তত ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।
দেশবাসীকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি সকল প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে বারবার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি।
সরকারের প্রধান আরও বলেন, প্রথমে সবচেয়ে বড় কাজ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। এটা এমনিতেই কঠিন কাজ। এখন কাজটা আরো কঠিন হলো এজন্য যে গত তিনটি নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ ছিল না। ভোটার তালিকা যাচাই করার সুযোগ হয়নি কারোর। গত ১৫ বছরে যারা ভোটার হবার যোগ্য হয়েছে তাদের সবার নাম ভোটার তালিকায় তোলা নিশ্চিত করতে হবে। এটা একটা বড় কাজ। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর এখানে গলদ রাখার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন পর এবার বহু তরুণ তরুণী জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবে। অতীতে তাদেরকে সে অধিকার এবং আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
এবারের নির্বাচনে তরুণদের ভোটদান একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অভিজ্ঞতাকে মসৃণ করার সমস্ত আয়োজন করতে হবে। আমার একান্ত ইচ্ছা এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের তরুণ-তরুণী ভোটারেরা শতকরা ১০০ ভাগের কাছাকাছি সংখ্যায় ভোট দিয়ে একটি ঐতিহ্য সৃষ্টি করুক। নির্বাচন কমিশন এবং সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলের প্রতি আমার আহ্বান সবাই মিলে আমরা যেন এই লক্ষ্য অর্জনে নানা প্রকার সৃজনশীল কর্মসূচি গ্রহণ করি। এখন থেকে সবাই মিলে এমন একটা ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে পারি যে স্থানীয় নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনে সকল কেন্দ্রে প্রথমবারের ভোটাররা ১০০ শতাংশের এর কাছাকাছি সংখ্যায় ভোটদান নিশ্চিত করবে। এটা নিশ্চিত করতে পারলে ভবিষ্যতে কোনো সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেবার সাহস করতে পারবে না।
আগামী নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটদান নিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অতীতে আমরা এ ব্যাপারে অনেকবার আশ্বাসের কথা শুনেছি। এই সরকারের আমলে এটা যেন প্রথমবারের মতো বাস্তবায়িত হয় এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এর জন্য একটা নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা করতে হবে। সবকিছুই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এর সঙ্গে যদি আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করতে চাই, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে চাই, তাহলে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিস্তৃতি ও গভীরতা অনুসারে নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে হবে।
এর আগে, ভোর সাড়ে ৬টার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। পরে বাংলাদেশ সফররত পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট রামোস হোর্তাকে সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রসঙ্গত, আজ মহান বিজয় দিবস। ৫৩ বছর পেরিয়ে ৫৪ তে পা দিল বাংলাদেশ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তে রাঙিয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা কেড়ে এনেছিল ফুটন্ত সকাল। আজ ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন।
বিজয় দিবস উপলক্ষে গেল এক মাস ধরে স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। সড়কের পাশে স্থাপন করা হয়েছে রঙিন গাছ। ছোট-বড় গাছ ও ফুলের গাছগুলো কেটেছেটে করা হয়েছে পরিপাটি।
এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছেন। একই সঙ্গে ১০ টাকা মূল্যমানের উদ্বোধনী খাম ও ৫ টাকা মূল্যমানের একটি ডাটাকার্ডও অবমুক্ত করেন তিনি।
মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গভবন, দেশব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান, জনসমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি উদ্যাপিত হবে।