জাতীয় স্মৃতিসৌধে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা
- সময় ১২:০০:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 19
বাংলাদেশের ৫৪ তম বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সারাদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা সরকার স্বীকার না করলেও সার্বিক দিক বিবেচনায় এমন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্তারা।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি একেএম আওলাদ হোসেন বলেন, সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি সবাই যেন সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন সে লক্ষ্যে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশপাশের যেসব জেলা রয়েছে এগুলোও আমাদের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে চলে এসেছে। সারা দেশের মানুষ আনন্দঘন পরিবেশে বিজয় দিবস উদযাপন করবেন তাই এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শঙ্কা নেই।
সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় স্মৃতিসৌধের ১০৮ একর জায়গাজুড়েই জোরদার করা হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে স্মৃতিসৌধের বিভিন্ন স্থান।
পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শুধু সৌধ এলাকা নয়, পার্শ্ববর্তী জেলা মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও গাজীপুর মেট্রো নিরাপত্তার বলয়ে নেয়া হয়েছে। প্রায় ২৩ কিলোমিটার মহাসড়কে তিন হাজারের পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদনে প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। রঙ-তুলিতে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পুরো এলাকা। আল্পনায় উঠে এসেছে বিজয়ের আনন্দচিত্র। বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে বীর সন্তানদের শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাসহ দেশের বিশিষ্টজন। সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হবে স্মৃতিসৌধ। নামবে সাধারণ মানুষের ঢল। আয়োজনকে কেন্দ্র করে পুরোপুরি প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। রঙ-তুলির শেষ আঁচড়ে স্পষ্ট হয়েছে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। প্রধান ফটক থেকে বেদি পর্যন্ত সাজিয়ে তোলা হয়েছে নানা বর্ণের বর্ণিলতায়।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে সৌন্দর্যবর্ধনে কাজ করেন আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করি। জাতীয় স্মৃতিসৌধ হলো বাঙালির আবেগের স্থান, স্বাধীনতা অনুভবের স্থান। এখানেই শায়িত আছেন জাতিকে মুক্তি এনে দেওয়া শহীদরা। আমি তাদের খেদমতে কাজ করি। যা সবার ভাগ্যে এমন সুযোগ জোটে না। আমি গত দুই সপ্তাহ ধরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছি। আজ শ্রদ্ধা নিবেদনে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পুরোপুরি প্রস্তুত। আমি জাতীয় স্মৃতিসৌধে কাজ করতে পেরে গর্বিত।
রং ও তুলির আঁচড়ে বিজয়ের সাজে জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাজিয়ে তুলেছেন আল-আমিন। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এখানেই কাজ করি। আমার কাজ হলো রং ও তুলি দিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাজানো। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আমি এই কাজ করেছি। জাতির বীর সন্তানদের জীবনের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, তাদের শ্রদ্ধা জানাতে সৌধ প্রাঙ্গণ প্রস্তুত করার কাজ করতে পেরে আমি সত্যিই আপ্লুত। আমি বাকি জীবনটা যেন শহীদের খেদমতে কাটিয়ে দিতে পারি।
গেল এক মাস ধরে স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। সড়কের পাশে স্থাপন করা হয়েছে রঙিন গাছ। ছোট-বড় গাছ ও ফুলের গাছগুলো কেটেছেটে করা হয়েছে পরিপাটি।
গণপূর্ত অধিদপ্তর বলছে, বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতার জন্য প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ। নিরাপত্তার বিষয়টিও সর্বোচ্চ পর্যায়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ।
মহান বিজয় দিবসের সকালে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে শ্রদ্ধা নিবেদনের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে সৌধের ফটক।
স্মৃতিসৌধ চত্বরের বিভিন্ন সড়ক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নতুন ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছে। সড়কবাতিগুলোর লোহার পাইপে নতুন করে রঙের আঁচড় পড়েছে। স্মৃতিসৌধের ফটকে স্মৃতিসৌধ দেখতে ভিড় করেছেন অনেকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে জনসাধারণের প্রবেশ গত দুই সপ্তাহ আগেই বন্ধ করে দিয়েছিল।
এদিকে স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে নতুন সড়কবাতি লাগানো, সড়ক বিভাজকে নতুন করে রঙ দেওয়া ও সড়কে জমে থাকা ধুলোবালি সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইনচার্জ ও সাভার গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ১৬ ডিসেম্বর স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল নামবে। রাষ্ট্রপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এদিন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। আমরা গণপূর্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পুরো স্মৃতিসৌধ চত্বর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ নানাভাবে সাজিয়ে রেখেছি। সকাল থেকেই বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন।