ঢাকা ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘পতাকা বিক্রিতে ভাটা, দেশপ্রেম কমে গেছে ‘

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সময় ০৩:১৬:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 22

পাতাকা বিক্রি

১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে সামনে রেখে ঢাকায় জাতীয় পতাকা বিক্রেতারা পড়েছেন চরম বিপাকে। পতাকা বিক্রির সেই চিরচেনা দৃশ্য এ বছর যেন ম্লান হয়ে গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের মিজানুর রহমান, যিনি ২২ বছর ধরে ঢাকায় ফেরি করে জাতীয় পতাকা বিক্রি করেন, এবার তার আয় এতটাই কম যে নিজের খরচই মেটাতে পারছেন না।

এই বিক্রেতা জানান, এবার পতাকা কিনার মানুষ পাইতেছি না। সারাদিন ঘুরেও নিজের খরচের টাকাই উঠতেছে না, বাড়িত কী পাঠামু! মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, আগের বছর দিনে ৩ হাজার টাকার বেশি বিক্রি করতাম। এখন সারাদিনে ৯০০ টাকার বেশি বিক্রি হয় না।

মিরপুরের আড়ত থেকে বাকিতে পতাকা নিয়ে এসে ফেরি করে বিক্রি করেন তিনি। ছোট-বড় সব ধরনের পতাকা ও লাল-সবুজ রঙের ব্যান্ড বিক্রি করলেও বিক্রির হার এতটাই কম যে ৪ দিনেও সব মাল শেষ করতে পারেননি।

একই চিত্র কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের নুরুল ইসলামের ক্ষেত্রেও। ২০ বছর ধরে বিজয় দিবসের আগে ঢাকায় পতাকা বিক্রি করেন তিনি। এবার বিক্রি এতটাই কম যে দুপুরে খাবার জোগাড় করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

মহাখালীতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, এবার ঢাকা আইসা মনে হয় ধরা খাইলাম। ৫ দিন হয়ে গেল তেমন বেচা-বিক্রি নাই। চিতই পিঠা খায়া পেট ভরাইতেছি।

জাতীয় পাতাকা বিক্রি
জাতীয় পাতাকা বিক্রি

পতাকার কম বিক্রির কারণ ব্যাখ্যা করতে না পারলেও নুরুল বলেন, আগে বিজয় দিবসে মানুষ শখ কইরা গাড়ি, বাড়ি, দোকানে পতাকা টানাইতো। এবার কয়টা গাড়ি-বাড়িতে পতাকা দেখছেন? লোকের মধ্যে আবেগ কইমা যাইতাছে মনে হয়।

গুলিস্তানের পাইকারি বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন সাগরও পতাকা বিক্রির এমন মন্দা দেখে হতাশ। আগে দিনে ৫০ হাজার টাকার বিক্রি হলেও এবার তা নেমে এসেছে মাত্র ১৭ হাজারে। বললেন, আগে ডিসেম্বরের শুরু থেকে দম ফেলার সময় পাইতাম না। আর এখন দুপুর হলেও বনি করতে পারি না।

আরেক পাইকারি বিক্রেতা আল আমীনের বক্তব্যেও একই সুর, জানালেন, এবার মানুষজনের মধ্যে বিজয়ের উল্লাস কম মনে হইতেছে। বাড়ি-গাড়ি, অফিস কোথাও পতাকা টানানোর আগ্রহ নাই।

পতাকা তৈরির কারখানার মালিক কামাল হোসেন মোল্লা, যিনি ‘পতাকা কামাল’ নামে পরিচিত, জানালেন, এ বছর তার কারখানার শ্রমিকদের বেতনও বকেয়া। দিনে দেড় লাখ টাকার পতাকা বিক্রির জায়গায় এখন মাত্র ৩৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে। বললেন, পাইকাররা মাল নিতে আসছে না। স্কুল-কলেজ থেকেও আগের মতো পতাকা কেনার বায়না নাই।

সব বিক্রেতাই এবার পতাকা বিক্রির মন্দার পেছনে জাতীয় পতাকার প্রতি মানুষের আগ্রহ এবং দেশপ্রেম কমে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করছেন। কামাল হোসেন বলেন, আগে রিকশাওয়ালা-ড্রাইভাররাও আবেগে পতাকা কিনতো। এবার সেটা চোখে পড়ে না। মনে হয় মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম কমতেছে।

বিজয় দিবসের আগে এমন এক সময়ে জাতীয় পতাকার বিক্রিতে এমন মন্দাভাব শুধু বিক্রেতাদের আয় কমায়নি, বরং সাধারণ মানুষের বিজয়ের উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

শেয়ার করুন

‘পতাকা বিক্রিতে ভাটা, দেশপ্রেম কমে গেছে ‘

সময় ০৩:১৬:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে সামনে রেখে ঢাকায় জাতীয় পতাকা বিক্রেতারা পড়েছেন চরম বিপাকে। পতাকা বিক্রির সেই চিরচেনা দৃশ্য এ বছর যেন ম্লান হয়ে গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের মিজানুর রহমান, যিনি ২২ বছর ধরে ঢাকায় ফেরি করে জাতীয় পতাকা বিক্রি করেন, এবার তার আয় এতটাই কম যে নিজের খরচই মেটাতে পারছেন না।

এই বিক্রেতা জানান, এবার পতাকা কিনার মানুষ পাইতেছি না। সারাদিন ঘুরেও নিজের খরচের টাকাই উঠতেছে না, বাড়িত কী পাঠামু! মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, আগের বছর দিনে ৩ হাজার টাকার বেশি বিক্রি করতাম। এখন সারাদিনে ৯০০ টাকার বেশি বিক্রি হয় না।

মিরপুরের আড়ত থেকে বাকিতে পতাকা নিয়ে এসে ফেরি করে বিক্রি করেন তিনি। ছোট-বড় সব ধরনের পতাকা ও লাল-সবুজ রঙের ব্যান্ড বিক্রি করলেও বিক্রির হার এতটাই কম যে ৪ দিনেও সব মাল শেষ করতে পারেননি।

একই চিত্র কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের নুরুল ইসলামের ক্ষেত্রেও। ২০ বছর ধরে বিজয় দিবসের আগে ঢাকায় পতাকা বিক্রি করেন তিনি। এবার বিক্রি এতটাই কম যে দুপুরে খাবার জোগাড় করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

মহাখালীতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, এবার ঢাকা আইসা মনে হয় ধরা খাইলাম। ৫ দিন হয়ে গেল তেমন বেচা-বিক্রি নাই। চিতই পিঠা খায়া পেট ভরাইতেছি।

জাতীয় পাতাকা বিক্রি
জাতীয় পাতাকা বিক্রি

পতাকার কম বিক্রির কারণ ব্যাখ্যা করতে না পারলেও নুরুল বলেন, আগে বিজয় দিবসে মানুষ শখ কইরা গাড়ি, বাড়ি, দোকানে পতাকা টানাইতো। এবার কয়টা গাড়ি-বাড়িতে পতাকা দেখছেন? লোকের মধ্যে আবেগ কইমা যাইতাছে মনে হয়।

গুলিস্তানের পাইকারি বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন সাগরও পতাকা বিক্রির এমন মন্দা দেখে হতাশ। আগে দিনে ৫০ হাজার টাকার বিক্রি হলেও এবার তা নেমে এসেছে মাত্র ১৭ হাজারে। বললেন, আগে ডিসেম্বরের শুরু থেকে দম ফেলার সময় পাইতাম না। আর এখন দুপুর হলেও বনি করতে পারি না।

আরেক পাইকারি বিক্রেতা আল আমীনের বক্তব্যেও একই সুর, জানালেন, এবার মানুষজনের মধ্যে বিজয়ের উল্লাস কম মনে হইতেছে। বাড়ি-গাড়ি, অফিস কোথাও পতাকা টানানোর আগ্রহ নাই।

পতাকা তৈরির কারখানার মালিক কামাল হোসেন মোল্লা, যিনি ‘পতাকা কামাল’ নামে পরিচিত, জানালেন, এ বছর তার কারখানার শ্রমিকদের বেতনও বকেয়া। দিনে দেড় লাখ টাকার পতাকা বিক্রির জায়গায় এখন মাত্র ৩৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে। বললেন, পাইকাররা মাল নিতে আসছে না। স্কুল-কলেজ থেকেও আগের মতো পতাকা কেনার বায়না নাই।

সব বিক্রেতাই এবার পতাকা বিক্রির মন্দার পেছনে জাতীয় পতাকার প্রতি মানুষের আগ্রহ এবং দেশপ্রেম কমে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করছেন। কামাল হোসেন বলেন, আগে রিকশাওয়ালা-ড্রাইভাররাও আবেগে পতাকা কিনতো। এবার সেটা চোখে পড়ে না। মনে হয় মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম কমতেছে।

বিজয় দিবসের আগে এমন এক সময়ে জাতীয় পতাকার বিক্রিতে এমন মন্দাভাব শুধু বিক্রেতাদের আয় কমায়নি, বরং সাধারণ মানুষের বিজয়ের উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।