১৬ বছর ধরে সাইনবোর্ডেই আটকে আছে বাউবি কুষ্টিয়া উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র
- সময় ০৯:৫০:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 30
জমি অধিগ্রহণের পরেও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)’র কুষ্টিয়া উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ দীর্ঘ ১৬বছরেও শুরু হয়নি। এতে ভাড়া ভবনে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কেন্দ্রটির। বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে সরকারের। ভবন নির্মাণ না হওয়াতে শুধু একটি সাইনবোর্ডেই আটকে আছে এ কেন্দ্রের কার্যক্রম।
কেন্দ্রটি নির্মাণের লক্ষে ২০০৮সালে কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকায় ৩৩ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা।
বাউবির অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় আংশিক সীমানা প্রাচীর। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় অপেক্ষমাণ থাকে ভবন নির্মাণের কাজ। এই সুযোগে ওই জমি পুনরায় ফিরে পেতে আদালতে রিট করেন পূর্ব মালিকরা। এতেই মূলত আটকে যায় কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ। আইনি জটিলতা ও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় অন্ধকারে চলে যায় বাউবির এই উপকেন্দ্রের কাজ। সড়কের পাশে একখানা সাইনবোর্ডেই আটকে আছে প্রকল্পটি।
জানা গেছে, চৌড়হাস মৌজার আরএস ৫১৭ খতিয়ানের-২৬৬৮, ২৬৬৯, ২৬৯৪ দাগের সর্বমোট- ৩৩শতক জমি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ করে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা। এরপর ৩৩ শতাংশ জমি বাউবির অনুকূলে ২০০৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী বুঝিয়ে দেয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। জমি বুঝে পেয়ে বাউবির অর্থায়নে আংশিক সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। ওই সময় বরাদ্দ না থাকায় অপেক্ষামান থাকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ। এতেই অধিগ্রহণকৃত ওই জমির আগের মালিকগণের একজন আংশিক সম্পত্তির মালিক হিসেবে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন করলে ওই জমির এল, এ. কেস নং-০১/২০০৭- ০৮ এর মাধ্যমে অধিগ্রহণকৃত ০.৩৩ একর জমির মধ্যে ০.২৫ শতাংশ জমি ২০১৯ সালে ৩ জানুয়ারি তারিখে জমির মালিকদের দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়। অবশিষ্ট ০.৮ শতাংশ জমি উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রটির অনুকূলে থাকে। ওই জমিতে উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র নির্মাণকাজ সম্ভব না বলে সর্বশেষ গত ২ মার্চ ২০২২ সালে জেলা প্রশাসক কাছে বাউবির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বাউবি’র কুষ্টিয়া উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ ও বরাদ্দ প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ জানানো হয়। তবুও সময় ক্ষেপণ করা হয়েছে। এতে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ও সংশ্লিষ্টদের গড়িমসি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শেখ রাসেল বলেন, বাউবি’র উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রের স্থানীয় ভবন না থাকায় নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।তাই দ্রুতই এই উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রটি নির্মাণ হলে এই সমস্যার সমাধান হবে।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, স্থানীয় ভবন না থাকায় আজ এখানে কাল সেখানে এমন হয়রানি হতে হয়। এতে বিপাকে পড়েন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এমন সমস্যা নিরসনে স্থায়ীভাবে উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রটি নির্মাণ হলে ভোগান্তি দূর হবে।
কুষ্টিয়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আঞ্চলিক পরিচালক মো, শামীমুর রহমান বলেন, এখন আমরা ভাড়া করা একটি ভবনে কার্যক্রম পরিচালিত করে থাকি,এতে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রটি নির্মাণ হলে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার ট্রেনিং, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সহ নানামুখী শিক্ষা কার্যক্রমে সেবা পাবে। আরো সমৃদ্ধ হবে এ জেলায় উন্মুক্ত’র শিক্ষা কার্যক্রমও।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার খাদিজা আক্তার বলেন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রের ৩৩ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হলেও মামলা চলমান থাকার কারণে গেজেট হয়নি।আমি এ বছরে যোগদান করার পরই উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রের ০.৮ শতাংশ জায়গা আছে সেটি গেজেটের জন্য মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠিয়েছি। গেজেট হলেই বিষয়টি আমি জানতে পারবো। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লানিং ডিরেক্টর মাহফুজুল আলম বলেন, আমার যোগদানের পর থেকেই কাজগুলো ত্বরান্বিত করতে যোগাযোগ স্থাপন করে চলেছি। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে দ্রুতই উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রটির নির্মাণকাজের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো: তৌফিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না।খোঁজখবর নিয়ে তারপরই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবো।