ঢাকা ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেভাবে আসলো জয় বাংলা স্লোগান

বিশেষ প্রতিনিধি
  • সময় ০৬:১৯:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 62

জয় বাংলা

‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। ১০ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন। এর আগে ২০২০ সালে হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিলো, ‘জয় বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে। কিন্তু কোথা থেকে আসলো এই স্লোগান।

জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করা হলেও এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্যে ব্যবহৃত হয়। ১৯২২ সালে কাজী নজরুল ইসলাম তার ভাঙার গান কাব্যে ‘পূর্ণ-অভিনন্দন’ কবিতায় সর্বপ্রথম “জয় বাঙলা” শব্দ যুগল ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে কালক্রমে এটি স্লোগানে পরিণত হয়। আবার অনেকেই বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “বাংলার জয়” কবিতার অনুপ্রেরণায় এই শ্লোগান তৈরি হয়।

পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা দিবসের কর্মসূচীতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ-এর সভায় তৎকালীন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আফতাব আহমেদ ও চিশতী হেলালুর রহমান “জয় বাংলা” স্লোগানটি সর্বপ্রথম উচ্চারণ করেন।

জয় বাংলা স্লোগান
জয় বাংলা স্লোগান

এর এক বছর পর ১৯৭০ সালে ঢাকা শহরের পল্টনের এক জনসভায় ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান তার ভাষণে সর্বপ্রথম “জয় বাংলা” স্লোগানটি উচ্চারণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে প্রথম “জয় বাংলা” স্লোগানটি উচ্চারণ করেন ৭ মার্চ ১৯৭১-এ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসভার ভাষণে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই স্লোগান জনগণকে তাদের মুক্তিসংগ্রামে প্রবলভাবে প্রেরণা যুগিয়েছিল। ভারতের বাঙালি অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, বরাক উপত্যকার লোকেরাও বাঙালির ঐক্য বোঝাতে এর ব্যবহার করে থাকে।

জয় বাংলা স্লোগান ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন বাঙালির প্রেরণার উৎস। সফল অপারেশন শেষে বা যুদ্ধ জয়ের পর অবধারিত ভাবে মুক্তিযোদ্ধারা চিৎকার করে “জয় বাংলা” স্লোগান দিয়ে জয় উদ্‌যাপন করত।

ইতিহাসবিদরা বলছেন, ১৯৬০-এর দশক। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলছিল বাঙালির সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ। এই সময় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেড়ে উঠছিল নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, আর অধিকার রক্ষার আগ্রহ।

ধারণা করা হয়, ‘জয় বাংলা’ শব্দগুচ্ছের প্রথম ব্যবহার হয় ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময়। এই সময় ছাত্র সমাজ ও সাধারণ মানুষ এই শ্লোগানকে গ্রহণ করে একতার প্রতীক হিসেবে।

‘জয় বাংলা’ ছিল সব বয়স, সব শ্রেণির মানুষের কাছে বোধগম্য। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি হয়ে ওঠে যুদ্ধের মন্ত্র। এটি তাদের মানসিক শক্তি যোগাতো, তাদের মনে করিয়ে দিতো কেন তারা যুদ্ধ করছে।

স্লোগানটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, তা কেবল বাংলাদেশের মধ্যেই নয়, সারা বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়ে। এটি বিশ্বব্যাপী বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের প্রতীক হয়ে ওঠে।

জয় বাংলা স্লোগান
জয় বাংলা স্লোগান

“জয় বাংলা” হল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক স্লোগান। কোন বক্তৃতা ও বার্তা শেষে দলটির সদস্যরা বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি প্রেম দেখাতে “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন।

পশ্চিমবঙ্গে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথমবারের জন্য ভারতে বাঙালির জাতীয় সংগঠন “বাংলা পক্ষ” জয় বাংলা স্লোগান দেয়। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে, বিজেপির স্লোগান জয় শ্রীরাম স্লোগানের বিকল্প হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেস জয় বাংলা স্লোগানটি ব্যবহার শুরু করে। নির্বাচনে বিজয়ের পর তিনি এই স্লোগান জয়ে সাহায্য করেছে বলে কৃতিত্বও দেন।

শেয়ার করুন

যেভাবে আসলো জয় বাংলা স্লোগান

সময় ০৬:১৯:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। ১০ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন। এর আগে ২০২০ সালে হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিলো, ‘জয় বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে। কিন্তু কোথা থেকে আসলো এই স্লোগান।

জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করা হলেও এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্যে ব্যবহৃত হয়। ১৯২২ সালে কাজী নজরুল ইসলাম তার ভাঙার গান কাব্যে ‘পূর্ণ-অভিনন্দন’ কবিতায় সর্বপ্রথম “জয় বাঙলা” শব্দ যুগল ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে কালক্রমে এটি স্লোগানে পরিণত হয়। আবার অনেকেই বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “বাংলার জয়” কবিতার অনুপ্রেরণায় এই শ্লোগান তৈরি হয়।

পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা দিবসের কর্মসূচীতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ-এর সভায় তৎকালীন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আফতাব আহমেদ ও চিশতী হেলালুর রহমান “জয় বাংলা” স্লোগানটি সর্বপ্রথম উচ্চারণ করেন।

জয় বাংলা স্লোগান
জয় বাংলা স্লোগান

এর এক বছর পর ১৯৭০ সালে ঢাকা শহরের পল্টনের এক জনসভায় ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান তার ভাষণে সর্বপ্রথম “জয় বাংলা” স্লোগানটি উচ্চারণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে প্রথম “জয় বাংলা” স্লোগানটি উচ্চারণ করেন ৭ মার্চ ১৯৭১-এ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসভার ভাষণে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই স্লোগান জনগণকে তাদের মুক্তিসংগ্রামে প্রবলভাবে প্রেরণা যুগিয়েছিল। ভারতের বাঙালি অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, বরাক উপত্যকার লোকেরাও বাঙালির ঐক্য বোঝাতে এর ব্যবহার করে থাকে।

জয় বাংলা স্লোগান ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন বাঙালির প্রেরণার উৎস। সফল অপারেশন শেষে বা যুদ্ধ জয়ের পর অবধারিত ভাবে মুক্তিযোদ্ধারা চিৎকার করে “জয় বাংলা” স্লোগান দিয়ে জয় উদ্‌যাপন করত।

ইতিহাসবিদরা বলছেন, ১৯৬০-এর দশক। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলছিল বাঙালির সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ। এই সময় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেড়ে উঠছিল নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, আর অধিকার রক্ষার আগ্রহ।

ধারণা করা হয়, ‘জয় বাংলা’ শব্দগুচ্ছের প্রথম ব্যবহার হয় ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময়। এই সময় ছাত্র সমাজ ও সাধারণ মানুষ এই শ্লোগানকে গ্রহণ করে একতার প্রতীক হিসেবে।

‘জয় বাংলা’ ছিল সব বয়স, সব শ্রেণির মানুষের কাছে বোধগম্য। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি হয়ে ওঠে যুদ্ধের মন্ত্র। এটি তাদের মানসিক শক্তি যোগাতো, তাদের মনে করিয়ে দিতো কেন তারা যুদ্ধ করছে।

স্লোগানটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, তা কেবল বাংলাদেশের মধ্যেই নয়, সারা বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়ে। এটি বিশ্বব্যাপী বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের প্রতীক হয়ে ওঠে।

জয় বাংলা স্লোগান
জয় বাংলা স্লোগান

“জয় বাংলা” হল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক স্লোগান। কোন বক্তৃতা ও বার্তা শেষে দলটির সদস্যরা বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি প্রেম দেখাতে “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন।

পশ্চিমবঙ্গে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথমবারের জন্য ভারতে বাঙালির জাতীয় সংগঠন “বাংলা পক্ষ” জয় বাংলা স্লোগান দেয়। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে, বিজেপির স্লোগান জয় শ্রীরাম স্লোগানের বিকল্প হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেস জয় বাংলা স্লোগানটি ব্যবহার শুরু করে। নির্বাচনে বিজয়ের পর তিনি এই স্লোগান জয়ে সাহায্য করেছে বলে কৃতিত্বও দেন।