কোন আশ্বাসে রাজনীতিতে সক্রিয় শেখ হাসিনা!
- সময় ১০:৪৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 70
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বলা হয়েছিল, আর হয়তো রাজনীতিতে ফিরবেন না সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেক্ষেত্রে কে বা কারা ধরতে পারে আওয়ামী লীগের হাল—এ নিয়েও নানা বিশ্লেষণ হয়েছে। কোন আশ্বাসেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন, তা নিয়েও চলছে নানামূখী বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা
শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের কেউ আর রাজনীতিতে আসবেন না। কিন্তু কয়েকদিন পরই জয় তার বক্তব্য থেকে ফিরে আসেন। অবস্থান পরিবর্তন করে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এভাবেই চলে যায় চার মাস। এবার শুধু তিনি নন, স্বয়ং ভারতে অবস্থানরত দেশত্যাগী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন।
কিন্তু নীরবতা ভেঙে শেখ হাসিনা নিজেই ফের নেমে পড়েছেন দল সংগঠিত করতে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই বাংলাদেশ ও বিদেশে দল সংগঠিত করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
তার এই রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ইতোমধ্যেই নানা আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। ভারতে অবস্থান করে কিভাবে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন তা নিয়ে খোদ প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যম। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেছেন, বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকার। ভারতের কাছে এখনো বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানতে চাওয়া হয়নি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) ভারতে অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি কি মর্যাদায় আছেন, সেটা ভারত সরকার জানে। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের নানা বিষয়ে কথা বলছেন, এমন কলরেকর্ডও ফাঁস হয়েছে। সেগুলো নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট কথিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তার সরকার তখন কঠোর সমালোচনার মুখে। এরপর তিনি ভারত সরকারের সহযোগিতায় দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন।
প্রায় চার মাসের নির্বাসিত জীবনে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভূমিকা অনেকটাই নীরব ছিল। তবে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাপ্রবাহ এবং তার সরাসরি বক্তব্য দেওয়া এই নীরবতা ভেঙে দিল।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ আয়োজিত একটি সভায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি সংখ্যালঘু নিপীড়ন এবং তার জীবনের প্রতি ষড়যন্ত্র নিয়ে আলোচনা করেন। একইসাথে, দেশের বর্তমান অবস্থার ওপর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
নিউইয়র্কের ওই জনসভার পর শেখ হাসিনা লন্ডনের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এর আগে ইউরোপের আরও দুটি দেশে তিনি এভাবে বক্তব্য দিয়েছেন। বিএনপি মনে করছে, এগুলো তার রাজনীতিতে টিকে থাকার কৌশল।
সব সভার ব্যানারে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। এ নিয়েও দেশে ও বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
শেখ হাসিনার এসব বক্তব্যের পর নড়ে চড়ে বসেছে ইউনূস প্রশাসনও। তার বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল; যে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠন করেছিলেন।
এই আদেশের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা, যাকে তারা বাকস্বাধীনতার ওপর আঘাত হিসেবে দেখছেন।
এর আগে পাঁচই আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কিছু ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। যদিও সেগুলো সত্যিই তার কথোপকথন কি না, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
সেসব রেকর্ডগুলোতে তার দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নানা ধরনের রাজনৈতিক নির্দেশনা দিতে শোনা গেছে তাকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পরও তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী দাবি করে অভিনন্দন বার্তা পাঠান।
বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে বর্তমানে যেধরনের টানাপোড়েনপূর্ণ সম্পর্ক চলছে, এর মাঝে হঠাৎ করে শেখ হাসিনার সরাসরি বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি অনেকেই মনে করছেন যে শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগ বিরতি ভেঙে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিদেশে অবস্থানরত দলটির সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, শেখ হাসিনা এখনো বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভারতে অবস্থান করলেও দেশে বর্তমানে অনির্বাচিত অন্তর্বতীকালীন সরকার যে অপকর্ম করছে, দেশের সাধারণ মানুষের ওপর যে জুলুম নির্যাতন হচ্ছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিষয়াদি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতেই ইউরোপ-আমেরিকায় ভাচুর্য়ালি যোগ দিচ্ছেন।
তিনি কার আশ্বাসে রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, কারো আশ্বাসেই নয়; বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসেন এবং বিশ্বাস করেন। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে তিনি আর চুপ করে থাকতে পারেন না। তাই তিনি সরব হয়েছেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আশ্বাসেই।