মোদির হস্তক্ষেপ চাইলেন মমতা, কোন পথে বাংলাদেশ?
- সময় ০২:৪৪:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 66
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়োজনে বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে ভারত সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তিনি। পাশাপাশি মমতা বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। আজ সোমবার পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য আইনসভা বিধানসভায় দেওয়া ভাষণে তিনি এই আহ্বান জানান। ফলে চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার কিভাবে ভারতের এমন চাপ সামলাবেন এবং বাংলাদেশ কোন পথে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে মমতা ব্যানার্জির এ তথ্য জানা গেছে। এতে বলা হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন একসময়ে এই আহ্বান জানালেন যার মাত্র কয়েক দিন আগেই, বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতার মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সাবেক এক পুরোহিতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অবশ্য তার আগে থেকেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। বিশেষ করে গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং সরকার পতনের পর থেকে। শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হওয়ার পথে এগিয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সদস্য, সম্পত্তি এবং প্রিয়জনেরা বাংলাদেশে আছে। এই বিষয়ে ভারত সরকারের যে অবস্থানই হোক না কেন, আমরা তা মেনে নেব। তবে বিশ্বের যেকোনো স্থানে ধর্মের ভিত্তিতে নির্যাতনের আমরা নিন্দা জানাই এবং কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের আবেদন জানাই।’
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জানান, কলকাতার ইসকন ইউনিটের প্রধানের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন এবং সহানুভূতি ও সমর্থন জানিয়েছেন। মমতা আরও বলেন, ‘যদি বাংলাদেশে ভারতীয়দের ওপর আক্রমণ হয়, আমরা তা সহ্য করব না। আমরা সেখান থেকে আমাদের মানুষদের ফিরিয়ে আনতে পারি।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ভারত সরকার এই বিষয়টি জাতিসংঘের কাছে তুলে ধরতে পারে…যাতে একটি শান্তিরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশে পাঠানো যায়।’ তিনি জানান, অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চান না। তবে, যখন বাংলাদেশি জেলেরা ভুলবশত ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করেছে বা কোনো বাংলাদেশি ট্রলার ডুবে গেছে, তখন তাঁর সরকার তাঁদের উদ্ধার করেছে এবং ভালোভাবে দেখভাল করেছে।
এর আগে, গত ২৮ নভেম্বর বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা জানান, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে চলমান ঘটনাপ্রবাহ বা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) স্থানীয় শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। পাশাপাশি এই ঘটনায় তিনি উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন। তবে বলেছেন, এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের কেন্দ্র সরকারের নীতিমালাই মেনে চলবে।
মমতা বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ভিন্ন দেশ। ভারতের সরকার এটি দেখবে। এটি আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। আমাদের এ নিয়ে কথা বলা বা হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। যদিও আমরা মনে মনে দুঃখিত হই, তবু আমরা কেন্দ্রের নির্ধারিত নীতিগুলো অনুসরণ করব।’ বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, তিনি এ বিষয়ে ইসকনের পশ্চিমবঙ্গে প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে তিনি ইসকন নেতাদের সঙ্গে কী বিষয়ে আলোচনা করেছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
এর আগে, গত ২৬ নভেম্বর সাবেক ইসকন নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পশ্চিমবঙ্গের নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি সে সময় পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত ‘অবরোধ’ করার হুমকি দেন।
এদিকে, বাংলাদেশ ইস্যুতে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বৈঠকের পর তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। এ ছাড়া, বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধি এবং মন্দিরে হামলার ঘটনা নিয়ে ভারত সরকার গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর জয়শঙ্কর ভারতীয় পার্লামেন্টকে অবহিত করেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ে ভারত সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সব নাগরিকের, যার মধ্যে সংখ্যালঘুরাও অন্তর্ভুক্ত, জীবন ও স্বাধীনতা রক্ষার প্রধান দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের ওপর বর্তায়।’ এ ছাড়া তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
অপর দিকে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ় ভাষায় নিশ্চিত করেছে, ‘প্রত্যেক বাংলাদেশি, তার ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে, নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও প্রথা প্রতিষ্ঠা, বজায় রাখা বা সম্পাদন করার বা অবাধে মতপ্রকাশ করার অধিকার রাখে।’