ভারতীয় ফর্মুলা অনুসরণ
পাকিস্তানের টার্গেট বাংলাদেশের মেধাবীরা!
- সময় ১১:১১:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
- / 60
বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম; যারা কিনা পাকিস্তান বিদ্বেষী – সেই সমস্ত তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করেছে পাকিস্তান সরকার। দেশটির সরকার বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ বা বৃত্তি ঘোষণা করেছে। মূলত ভারতীয় পুরোনো ফুর্মলা অনুসরণ করেছে পাকিস্তান। ভারতীয় দূতাবাসের ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন ১০০ এর কার্যক্রম শুরু হলেও করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ ছিল। শেখ হাসিনার সরকারের পট পরিবর্তনের পর বর্তমানে ভারত ভিসা কার্যক্রম মোটামুটি বন্ধ রেখেছে। ফলে এ ধরণের প্রোগ্রাম ভেস্তে গেছে, সংশ্লিষ্টরা এমনটাই মনে করেন।
তবে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ স্কলারশিপে ১০০ বাংলাদেশিকে পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছেন। ২০ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের পড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর— সৌহার্য্যের অংশ হিসেবে ১০০ বাংলাদেশিকে শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। এতে করে বাংলাদেশিদের পাকিস্তানে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার পথ সুগম হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ও পাাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অথচ আর্থিক সমস্যার কারণে প্রতিবছর পাকিস্তান ছাড়ছেন দেশটির মেধাবীরা। যেখানে নিজেরা ভয়াবহ আর্থিক সংকটে; সেখানে পাকিস্তানের এই ঘোষণা বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের কৌশল হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ছিলো বহুদিন ধরে জটিল এবং সীমাবদ্ধ। তবে সাম্প্রতিককালে এই সম্পর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার নতুন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। বিশেষত, শিক্ষা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, ১০০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে পাকিস্তানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য স্কলারশিপ অনুমোদন করা হয়েছে। এই উদ্যোগ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
পাকিস্তানের গণমাধমের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরিপ্রেক্ষিতে, এই স্কলারশিপ সৌহার্য্যের অংশ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। এতে দুই দেশের শিক্ষাক্ষেত্রের সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা বেড়েছে।
এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে পাকিস্তানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নিজস্ব পোর্টাল খুলতে যাচ্ছে। এতে করে আবেদন প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ হবে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এর আগেও শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা ছিল। তবে গত কয়েক দশক ধরে এই সহযোগিতা স্থবির ছিল। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এ ক্ষেত্রে নতুন করে উষ্ণতা দেখা যাচ্ছে।
এদিকে দেশটির সর্বশেষ অর্থনৈতিক জরিপে দেখা গেছে, আগের বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে পাকিস্তান ছেড়ে যাওয়া দক্ষ মানুষের হার ১১৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতিবেদনে মেধাবীদের পাকিস্তান ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করা হয়েছে।
জরিপের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে কাজের সন্ধানে পাকিস্তান ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছে উচ্চদক্ষতা সম্পন্ন ৪৫ হাজার ৬৮৭ জন যুবক। অথচ এক বছর আগে ২০২২ সালে পাকিস্তান ছেড়েছিল উচ্চ দক্ষতার ২০ হাজার ৮৬৫ জন। এই যখন পাকিস্তানের অবস্থা; তখন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের স্কলারশীপ দেয়া কেবলই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শিক্ষার পাশাপাশি বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও দুই দেশের সম্পর্ক দৃঢ় হচ্ছে। ইতোমধ্যে করাচি থেকে একটি পণ্যবাহী জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রামে এসে নোঙর করেছে। এটি দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক যোগাযোগের একটি বড় পদক্ষেপ। ডিসেম্বরে আরো একটি পাকিস্তানি বাণিজ্যিক জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে বলে নিশ্চিত করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরাসরি বাণিজ্যের ফলে পরিবহন খরচ কমবে এবং দ্রুত পণ্য আদান-প্রদান সম্ভব হবে। এর ফলে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নের এই প্রচেষ্টা দুই দেশের জন্য সম্ভাবনাময় হলেও, এর কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ক্ষোভ এখনও অনেক মানুষের মনে রয়ে গেছে। এই ক্ষতগুলো মেরামত করতে সময় এবং আন্তরিকতা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষার্থী বিনিময় ও বাণিজ্য সহযোগিতা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করবে। তবে কূটনৈতিকভাবে সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, এই উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়।
এদিকে, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির অর্থনীতি, প্রযুক্তি, শিল্প-সংস্কৃতি ও ইতিহাসবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের ১০০ জন তরুণ প্রতিনিধিকে নির্বাচন করা হতো ২০১২ সাল থেকে। শুধু করোনো মহামারির কারণে ২০-২১ সালে স্থগিত ছিল। তবে সেটি আবারো শুরু করেছিল বাংলাদেশ ও ভারত। কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলের পর পাকিস্তান নতুন করে বাংলাদেশে মেধাবী শিক্ষার্থীদের যে স্কলারশিপ ঘোষণা করেছে সেটিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখলেও ভারত অনেক মেধাবী ও অভিভাবকের মনেই সংশয় রযেছে।
পাকিস্তানের নিরাপত্তার কথাটি তারা গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন। যেকোনো সময় পাকিস্তানের পরিস্থিতি উত্তাল হতে পারে, এমনকি জঙ্গি হামলার ভয়ও রয়েছে। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানে স্কলারশিপ পেলেও জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকেই পিছপা হবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও আওয়ামী লীগের শাসনামলেও পাকিস্তানে বিভিন্ন প্রতিনিধি দল সফর করেছে সে দেশের রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য সরাসরি স্কলারশিপ দেয়ার বিষয়টি ভিন্ন।
উল্লেখ্য, ভারতে বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন ১০০ এর মাধ্যমে সে দেশটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পরিদর্শন করার পাশাপশি ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাতের সুযোগ পেতেন।