ঢাকা ০২:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জিন্দা লাশের মানুষটি বেঁচে আছেন

বিনোদন প্রতিবেদক
  • সময় ০৪:২৭:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
  • / 35

বারী সিদ্দিকী

জিন্দা লাশের মানুষ স্বাভাবিকভাবেই বাঁচতে পারেন না। কিন্তু মানুষ মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকেন তার কর্মে। আজ এমন একজন মানুষের মৃত্যুবার্ষিকী, যিনি ৭ বছর আগে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। কিন্তু আজো তিনি বেঁচে আছেন লাখো কোটি ভক্ত অনুরাগী শ্রোতাদের হৃদয়ে। আজকের দিনে দেলোয়ার আরজুদা শরফ এর লেখা ‘আমি একটা জিন্দা লাশ’ গানটি খুবই প্রাসঙ্গিক।

বাংলাদেশের খ্যাতিমান সংগীত শিল্পী, গীতিকার ও বংশী বাদক বারী সিদ্দিকীকে হারানোর ৭ বছর পূর্ণ হলো রোববার (২৪ নভেম্বর)। ২০১৭ সালের আজকের দিনেই সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। তার কণ্ঠ শহর পেরিয়ে গ্রাম, সবখানে ছড়িয়ে গিয়েছিল। বারী সিদ্দিকীর গানের সুর খুব সহজেই গেঁথে যেত মানুষের হৃদয়ে।

১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন বারী সিদ্দিকী। মাত্র ১২ বছর বয়সে নেত্রকোণার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণী শিল্পীর সান্নিধ্য লাভ করেন তিনি। ভারত থেকেও গানের তালিম নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসংগীতেও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন প্রয়াত এই গায়ক।

বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী
বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী

উপমহাদেশের বিখ্যাত বংশীবাদক ছিলেন বারী সিদ্দিকী। ১৯৮০ সাল থেকে টানা দুই দশক বাঁশি বাজিয়ে বিশ্ব জয় করেছেন। তিনি যখন বাঁশি বাজাতেন, সামনে থাকা শ্রোতা-দর্শকদের হৃদয় শীতল হয়ে চোখের সীমানা বেয়ে জলের ঢল নামতো।

১৯৯৯ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ থেক একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে বারী সিদ্দিকী অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একটানা ৪৫ মিনিট বাঁশি বাজিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সবাইকে। অসাধারণ সেই পরিবেশনায় বিশ্ব শ্রোতা-দর্শকদের মুগ্ধ করেন তিনি। এরপর দেশ-বিদেশের বহু অনুষ্ঠানে বাঁশির সুরে হৃদয় স্পর্শ করেছেন এই শিল্পী।

গায়ক হিসেবে বারী সিদ্দিকী পরিচিতি পান নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের মাধ্যমে। তার পরিচালিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’সিনেমায় গান করেই দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা পান তিনি। দেশে একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, হুমায়ূন আহমেদ আমার গাওয়ার পেছনে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছিলেন। মূলত তার সাহস নিয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস পেয়েছি।

জিন্দা লাশের মানুষটি বেঁচে আছেন
জিন্দা লাশের মানুষটি বেঁচে আছেন

এরপর বেশ কিছু অ্যালবাম প্রকাশিত হয় বারী সিদ্দিকীর। এর মধ্যে রয়েছে- ‘দুঃখ রইলো মনে’, ‘অপরাধী হইলেও আমি তোর’, ‘সরলা’, ‘ভাবের দেশে চলো’, ‘সাদা রুমাল’, ‘মাটির মালিকানা’, ‘মাটির দেহ’, ‘মনে বড় জ্বালা’, ‘প্রেমের উৎসব’, ‘ভালোবাসার বসত বাড়ি’, ‘নিলুয়া বাতাস’ ও ‘দুঃখ দিলে দুঃখ পাবি’।

বারী সিদ্দিকীর গাওয়া কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘শুয়া চান পাখি’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘সাড়ে তিন হাত কবর’, ‘রজনী’, ‘আমি একটা জিন্দা লাশ’, ‘পুবালি বাতাসে’, মানুষ ধরো মানুষ ভজো’ ও ‘আমার মন্দ স্বভাব জেনেও’ ইত্যাদি।
বাংলা অ্যাফেয়ার্সের পক্ষ থেকে এই গুণী শিল্পীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

জিন্দা লাশের মানুষটি বেঁচে আছেন

সময় ০৪:২৭:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

জিন্দা লাশের মানুষ স্বাভাবিকভাবেই বাঁচতে পারেন না। কিন্তু মানুষ মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকেন তার কর্মে। আজ এমন একজন মানুষের মৃত্যুবার্ষিকী, যিনি ৭ বছর আগে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। কিন্তু আজো তিনি বেঁচে আছেন লাখো কোটি ভক্ত অনুরাগী শ্রোতাদের হৃদয়ে। আজকের দিনে দেলোয়ার আরজুদা শরফ এর লেখা ‘আমি একটা জিন্দা লাশ’ গানটি খুবই প্রাসঙ্গিক।

বাংলাদেশের খ্যাতিমান সংগীত শিল্পী, গীতিকার ও বংশী বাদক বারী সিদ্দিকীকে হারানোর ৭ বছর পূর্ণ হলো রোববার (২৪ নভেম্বর)। ২০১৭ সালের আজকের দিনেই সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। তার কণ্ঠ শহর পেরিয়ে গ্রাম, সবখানে ছড়িয়ে গিয়েছিল। বারী সিদ্দিকীর গানের সুর খুব সহজেই গেঁথে যেত মানুষের হৃদয়ে।

১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন বারী সিদ্দিকী। মাত্র ১২ বছর বয়সে নেত্রকোণার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণী শিল্পীর সান্নিধ্য লাভ করেন তিনি। ভারত থেকেও গানের তালিম নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসংগীতেও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন প্রয়াত এই গায়ক।

বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী
বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী

উপমহাদেশের বিখ্যাত বংশীবাদক ছিলেন বারী সিদ্দিকী। ১৯৮০ সাল থেকে টানা দুই দশক বাঁশি বাজিয়ে বিশ্ব জয় করেছেন। তিনি যখন বাঁশি বাজাতেন, সামনে থাকা শ্রোতা-দর্শকদের হৃদয় শীতল হয়ে চোখের সীমানা বেয়ে জলের ঢল নামতো।

১৯৯৯ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ থেক একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে বারী সিদ্দিকী অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একটানা ৪৫ মিনিট বাঁশি বাজিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সবাইকে। অসাধারণ সেই পরিবেশনায় বিশ্ব শ্রোতা-দর্শকদের মুগ্ধ করেন তিনি। এরপর দেশ-বিদেশের বহু অনুষ্ঠানে বাঁশির সুরে হৃদয় স্পর্শ করেছেন এই শিল্পী।

গায়ক হিসেবে বারী সিদ্দিকী পরিচিতি পান নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের মাধ্যমে। তার পরিচালিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’সিনেমায় গান করেই দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা পান তিনি। দেশে একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, হুমায়ূন আহমেদ আমার গাওয়ার পেছনে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছিলেন। মূলত তার সাহস নিয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস পেয়েছি।

জিন্দা লাশের মানুষটি বেঁচে আছেন
জিন্দা লাশের মানুষটি বেঁচে আছেন

এরপর বেশ কিছু অ্যালবাম প্রকাশিত হয় বারী সিদ্দিকীর। এর মধ্যে রয়েছে- ‘দুঃখ রইলো মনে’, ‘অপরাধী হইলেও আমি তোর’, ‘সরলা’, ‘ভাবের দেশে চলো’, ‘সাদা রুমাল’, ‘মাটির মালিকানা’, ‘মাটির দেহ’, ‘মনে বড় জ্বালা’, ‘প্রেমের উৎসব’, ‘ভালোবাসার বসত বাড়ি’, ‘নিলুয়া বাতাস’ ও ‘দুঃখ দিলে দুঃখ পাবি’।

বারী সিদ্দিকীর গাওয়া কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘শুয়া চান পাখি’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘সাড়ে তিন হাত কবর’, ‘রজনী’, ‘আমি একটা জিন্দা লাশ’, ‘পুবালি বাতাসে’, মানুষ ধরো মানুষ ভজো’ ও ‘আমার মন্দ স্বভাব জেনেও’ ইত্যাদি।
বাংলা অ্যাফেয়ার্সের পক্ষ থেকে এই গুণী শিল্পীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।