মূলত খরচ কম হয়েছে ১০ কোটি টাকা
পদ্মা সেতুর খরচ: ইউনূস সরকারের দাবি কতটুকু সত্য?
- সময় ০৯:৪৭:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
- / 139
শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পে’ তাদের প্রচেষ্টায় এক হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত আগেই। বর্তমান সরকার কেবল ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল বিতর্ক চলছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ইউনূস সরকারের এ দাবি কতটুকু সত্য?
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। তখন ক্ষমতায় দেশত্যাগী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর কিভাবে অন্তবর্তী সরকার খরচ কমালো- সেই প্রশ্নও এসেছে ঘুরেফিরে।
গত ৩০ জুন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দকৃত ৩২ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা থেকে চূড়ান্ত বিলে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। এরমধ্যে মূল সেতুর ১৩ হাজার ১৩৩ কোটি খরচে সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ৫২৬ কোটি টাকা। তবে নদী শাসনে বেশি লেগেছে প্রায় ১৭১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
২৩ বছর আগে ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়ায় এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সরকারে ফিরে ২০০৯ সাল থেকে আবার পুরো দমে কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১০ সালের ১১ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করা হয়। পরের বছর ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল পদ্মার বুকে চলন্ত ফেরিতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পরবর্তীতে জাইকা, আইডিবি ও এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়।
২০১২ সালের ২৯ জুন বিশ্ব ব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করে। ২৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে কাজ চলমান রাখেন এবং ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মূল পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন তিনি।
বিশ্বকে তাক লাগিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ শেষে ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর স্বপ্ন জয়ের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
প্রকল্পের ১৩ হাজার ৬৫৯ কোটির সবশেষ বরাদ্দের বিপরীতে মূল সেতুতে খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ১৩৩ কোটি, সাশ্রয় ৫২৬ কোটি। অ্যাপ্রোচ রোডে সাশ্রয় ১৮৫ কোটি। আর প্রাইস কন্টিজেন্সি ও ফিজিক্যাল কন্টিজেন্সির ৫০০ কোটি করে ১০০০ কোটি টাকার পুরোটাই সাশ্রয় হয়েছে। তবে নদী শাসনে বরাদ্দের বেশি ১৭১ কোটি ২৭ লাখ টাকা বেশি খরচ হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দের বিপরীতে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ৯৯০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
তবে গত রবিবার ১৭ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, প্রধান উপদেষ্টার ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে পদ্মা সেতুর এই নির্মাণ ব্যয় সংকোচন করা হয়েছে। এতে সেতু নির্মাণে এক হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই সরকারের ব্যবধানে মূলত খরচ কম হয়েছে ১০ কোটি টাকার। কেননা শেখ হাসিনার সরকারের সময়েই দাবি করা হয়েছিলো, এই প্রকল্পে বরাদ্দ থেকে এক হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয় কম করা হয়েছে।