হারানো প্রতিষ্ঠানের দখলে নিতে মরিয়া জামায়াত
- সময় ১২:৩৩:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
- / 95
স্বাধীন বাংলাদেশে সরাসরি রাজনীতির সুযোগ পেয়েই; ৮০ দশকের শুরুতে আর্থিক নিশ্চয়তার ওপর জোর দেন জামায়াতে ইসলামি। কেবল যে আর্থিক নিশ্চয়তা তাও নয়; খৃষ্টান মিশনের মতো বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান খুলেন সমর্থক বাড়াতে। দিনে দিনে তা ফুলে ফেপে পরিনত হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদে।
এক সময় এসব প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনা করা হতো জামায়াতের অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির নিদর্শন হিসেবে। কিন্তু ২০১২ সালে মীর কাসেম আলীসহ দলটির আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে আটক ও পরে আদালতের রায়ে তাদের অনেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর থেকে পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসতে থাকে। গত এক যুগে ইসলামী ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ হারান জামায়াত নেতারা।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ দৃশ্যপটে আবার পরিবর্তন আসা শুরু হয়। হাতছাড়া হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন জামায়াতের নেতারা। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পর্ষদে নিজেদের অবস্থান শক্ত করাসহ হারানো অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি পুনর্গঠনে নানাভাবে কাজ করছেন তারা।
১৯৭৯ সাল থেকে বাংলাদেশে রাজনীতির মঞ্চে সরাসরি অংশগ্রহণ শুরু করে জামায়াতে ইসলামী। এর পরের বছর ১৯৮০ সালে মীর কাসেম আলী প্রতিষ্ঠা করেন ইবনে সিনা ট্রাস্ট।
প্রথমে দাতব্য প্রতিষ্ঠান হয়ে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে। দ্রুতই এটি শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে। ইবনে সিনা হাসপাতাল, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেডিকেল কলেজের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়।
ইবনে সিনা ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানগুলো জামায়াতের কর্মীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছেও পৌঁছে যায়। এছাড়া ১৯৮৩ সালে শরিয়াহ ভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
মীর কাসেম আলীর ফাঁসি হওয়ার পরও এই ব্যাংকের মালিকানা ইবনে সিনা ট্রাস্টেও হাতেই ছিল, যদিও পরবর্তীতে মালিকানা পরিবর্তন হয়। তবে কর্মীদের মধ্যে বড় একটি অংশ জামায়াতের আদর্শে বিশ্বাসী।
ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে নিজেদের জায়গা পাকা করেছে। সব ধরনের টেস্টে ২৫ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দিয়ে ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার দেশ জুড়ে ব্যাপক প্রসার লাভ করে।
স্বাস্থ্য খাত ছাড়াও শিক্ষা খাতেও জামায়াতের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। চট্টগ্রামের ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, মানারাত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, সাঈদীর বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
এর বাইরে আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেগুলোর মুল বা সিংহভাগ মালিক জামাত নেতারা। যেমন, নর্দান ইউনিভার্সিটি ও ইষ্টার্ণ ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে আয় হয় হাজার হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া তাদের সরাসরি পরিচালিত বেশ কিছু কোচিং সেন্টার রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ‘ফোকাস, মেডিকেলে ভর্তির জন্য ‘রেটিনা’, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির জন্য ‘কনক্রিট’, ‘কনসেপ্ট’ ও ‘এক্সিলেন্ট’ কোচিং সেন্টারগুলো মূলত জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের নামে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, দিগন্ত টেলিভিশন ও দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা জামায়াতের দলীয় পত্রিকা ও টেলিভিশন মাধ্যম।
মীর কাশেম আলীর কেয়ারি গ্রুপ রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে জড়িত। সেন্টমার্টিন যেতে যে কেয়ারি সিন্দবাদ নামের ফেরি জাহাজ আছে, সেটিও মীর কাশেম আলীর।
আবুল কাশেম হায়দার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের নেতা ছিলেন। তার ইয়ুথ গ্রুপ থেকে তৈরি হতো ভার্জিন ড্রিংকস। মেট্রো শপিং সেন্টারের মালিকও জামাত নেতারা। এছাড়া রিয়েল এস্টেট মিশন গ্রুপও জামায়াত নেতাদের।
ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টম্যান্ট লিমিটেড, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ইসলামী ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, তাকাফুল ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, কমিউনিটি হাসপাতাল, সোনারগাঁও হাউজিং, পাঞ্জেরী বাস সার্ভিস জামায়াত নেতাদের।
জামায়াত নেতারা বলছেন, মূলত সাংগঠনিকের পাশাপাশি আর্থিকভাবে জামায়াতকে দুর্বল করতেই তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্নভাবে দখলের চেষ্টা করে বিগত সরকার।