ঢাকা ১২:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
স্বাধীনতা বনাম নিরাপত্তা

সুইজারল্যান্ডে জানুয়ারি থেকে বোরকা নিষেধ

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০১:০৭:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪
  • / 105

সুইজারল্যান্ডে বোরকা নিষিদ্ধ

সুইজারল্যান্ডে বোরকা নিষিদ্ধকরণের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা। ২০২১ সালে গণভোটে সুইস জনগণের রায় অনুযায়ী ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পাবলিক প্লেসে মুখ ঢাকার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

এ বিধি ভঙ্গ করলে প্রায় ১ হাজার ১৫০ ডলার, যা বাংলাদেশি অর্থে দেড় লাখ টাকার সমান জরিমানা করা হবে। কেন এই সিদ্ধান্ত এবং এর পেছনে কোন কারণগুলো কাজ করেছে।

২০২১ সালের গণভোটে স্বল্প সংখ্যক ভোটের ব্যবধানে নিষেধাজ্ঞাটি পাস হয়। মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করলেও সুইস জনগণের একটি বড় অংশ নিরাপত্তার স্বার্থে এবং ঐতিহ্য রক্ষার্থে বোরকা নিষেধাজ্ঞার পক্ষে মত দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে সুইজারল্যান্ডের প্রধান কারণ ছিল নিরাপত্তার উদ্বেগ এবং মুখ দেখার প্রয়োজনীয়তা।

স্থানীয় মুসলিমরা বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না
স্থানীয় মুসলিমরা বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না

সুইস নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, “বেশ কিছু দেশে সহিংসতার আশঙ্কায় নিরাপত্তা জোরদার করতে মুখ খোলা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটি আইডেন্টিফিকেশন এবং সিসিটিভির মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্তকরণে সহায়তা করে।”

যদিও সুইজারল্যান্ডে খুব অল্প সংখ্যক নারীই বোরকা পরেন, তারপরও এই সিদ্ধান্তটি বেশ কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে। এই আইনটি তাদের ব্যক্তিগত ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আঘাত মনে হচ্ছে।

মুসলিম অধিকার কর্মীরা বলছেন, “এটি তাদের বিশ্বাস এবং সংস্কৃতির উপর হস্তক্ষেপ। তারা চায় মানুষ নিজের মতো করে নিজের ধর্ম পালন করতে পারুক। এমন নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্য সীমাবদ্ধতা তৈরি করছে।”

সুইজারল্যান্ডে কেবল নয়, বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশেই মুখ ঢাকার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের মতো দেশেও নিরাপত্তা এবং জনসাধারণের মিশ্রণের বাধ্যবাধকতার জন্য এই ধরনের বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে, সুইজারল্যান্ডের এই নিষেধাজ্ঞার ব্যতিক্রম হলো, সেখানে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে মুখ ঢাকার অনুমতি দেওয়া হবে।

এই নিষেধাজ্ঞা বিমান, কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার এলাকায় কার্যকর হবে না। এছাড়া ধর্মীয় ও পবিত্র স্থানগুলোতে মুখ ঢাকার অনুমতি থাকবে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যজনিত কারণ, আবহাওয়া, ট্র্যাডিশনাল অনুষ্ঠান বা বিনোদনমূলক ক্ষেত্রে মুখ ঢাকায় কোনো বাধা থাকবে না।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এই আইনের বিশেষ সুযোগগুলো আসলে একটি সমঝোতার প্রচেষ্টা, যাতে যারা মুখ ঢাকার পক্ষে আছেন তাদের জন্য কিছুটা সহজ হয়। তবে, নিরাপত্তার বিষয়টি এখনও এই সিদ্ধান্তের কেন্দ্রে রয়েছে।”

বহুজনের মতে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এই আইন সুইজারল্যান্ডে বৈধ এবং সাংবিধানিক। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এটি কি ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর এক প্রকার হস্তক্ষেপ নয়?

স্থানীয় নাগরিকরা বলছেন, “তারা মনে করেন, জনসমাগমে মুখ খোলা থাকা প্রয়োজন, বিশেষ করে যেখানে নিরাপত্তার বিষয় আছে। তবে, ধর্মীয় বিষয়গুলো ব্যক্তিগত এবং এতে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।”

এই আইন বাস্তবায়ন হলে কীভাবে সুইজারল্যান্ডে মুসলিম সম্প্রদায় এর সাথে খাপ খাইয়ে নেবে, সেটাই দেখার বিষয়। বোরকা নিষেধাজ্ঞা কেবল একটি আইনি পদক্ষেপ নয়, বরং এটি বহুমাত্রিক সামাজিক এবং ধর্মীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

শেয়ার করুন

স্বাধীনতা বনাম নিরাপত্তা

সুইজারল্যান্ডে জানুয়ারি থেকে বোরকা নিষেধ

সময় ০১:০৭:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪

সুইজারল্যান্ডে বোরকা নিষিদ্ধকরণের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা। ২০২১ সালে গণভোটে সুইস জনগণের রায় অনুযায়ী ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পাবলিক প্লেসে মুখ ঢাকার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

এ বিধি ভঙ্গ করলে প্রায় ১ হাজার ১৫০ ডলার, যা বাংলাদেশি অর্থে দেড় লাখ টাকার সমান জরিমানা করা হবে। কেন এই সিদ্ধান্ত এবং এর পেছনে কোন কারণগুলো কাজ করেছে।

২০২১ সালের গণভোটে স্বল্প সংখ্যক ভোটের ব্যবধানে নিষেধাজ্ঞাটি পাস হয়। মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করলেও সুইস জনগণের একটি বড় অংশ নিরাপত্তার স্বার্থে এবং ঐতিহ্য রক্ষার্থে বোরকা নিষেধাজ্ঞার পক্ষে মত দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে সুইজারল্যান্ডের প্রধান কারণ ছিল নিরাপত্তার উদ্বেগ এবং মুখ দেখার প্রয়োজনীয়তা।

স্থানীয় মুসলিমরা বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না
স্থানীয় মুসলিমরা বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না

সুইস নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, “বেশ কিছু দেশে সহিংসতার আশঙ্কায় নিরাপত্তা জোরদার করতে মুখ খোলা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটি আইডেন্টিফিকেশন এবং সিসিটিভির মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্তকরণে সহায়তা করে।”

যদিও সুইজারল্যান্ডে খুব অল্প সংখ্যক নারীই বোরকা পরেন, তারপরও এই সিদ্ধান্তটি বেশ কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে। এই আইনটি তাদের ব্যক্তিগত ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আঘাত মনে হচ্ছে।

মুসলিম অধিকার কর্মীরা বলছেন, “এটি তাদের বিশ্বাস এবং সংস্কৃতির উপর হস্তক্ষেপ। তারা চায় মানুষ নিজের মতো করে নিজের ধর্ম পালন করতে পারুক। এমন নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্য সীমাবদ্ধতা তৈরি করছে।”

সুইজারল্যান্ডে কেবল নয়, বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশেই মুখ ঢাকার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের মতো দেশেও নিরাপত্তা এবং জনসাধারণের মিশ্রণের বাধ্যবাধকতার জন্য এই ধরনের বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে, সুইজারল্যান্ডের এই নিষেধাজ্ঞার ব্যতিক্রম হলো, সেখানে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে মুখ ঢাকার অনুমতি দেওয়া হবে।

এই নিষেধাজ্ঞা বিমান, কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার এলাকায় কার্যকর হবে না। এছাড়া ধর্মীয় ও পবিত্র স্থানগুলোতে মুখ ঢাকার অনুমতি থাকবে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যজনিত কারণ, আবহাওয়া, ট্র্যাডিশনাল অনুষ্ঠান বা বিনোদনমূলক ক্ষেত্রে মুখ ঢাকায় কোনো বাধা থাকবে না।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এই আইনের বিশেষ সুযোগগুলো আসলে একটি সমঝোতার প্রচেষ্টা, যাতে যারা মুখ ঢাকার পক্ষে আছেন তাদের জন্য কিছুটা সহজ হয়। তবে, নিরাপত্তার বিষয়টি এখনও এই সিদ্ধান্তের কেন্দ্রে রয়েছে।”

বহুজনের মতে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এই আইন সুইজারল্যান্ডে বৈধ এবং সাংবিধানিক। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এটি কি ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর এক প্রকার হস্তক্ষেপ নয়?

স্থানীয় নাগরিকরা বলছেন, “তারা মনে করেন, জনসমাগমে মুখ খোলা থাকা প্রয়োজন, বিশেষ করে যেখানে নিরাপত্তার বিষয় আছে। তবে, ধর্মীয় বিষয়গুলো ব্যক্তিগত এবং এতে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।”

এই আইন বাস্তবায়ন হলে কীভাবে সুইজারল্যান্ডে মুসলিম সম্প্রদায় এর সাথে খাপ খাইয়ে নেবে, সেটাই দেখার বিষয়। বোরকা নিষেধাজ্ঞা কেবল একটি আইনি পদক্ষেপ নয়, বরং এটি বহুমাত্রিক সামাজিক এবং ধর্মীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।