ঢাকা ০৫:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেগম জিয়ার লন্ডন যাত্রা স্থগিতের নেপথ্যে !

বিশেষ প্রতিনিধি
  • সময় ১১:২৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪
  • / 107

বেগম-জিয়ার-লন্ডন-যাত্রা-স্থগিতের-নেপথ্যে-কারন

বিগত সরকারের সময়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বারবার আবেদন করেও সাড়া মেলেনি। কিন্তু এবার সুযোগ পেয়েও বিদেশ যাত্রা স্থগিত করলেন বিএনপির এই নেত্রী। কিন্তু কেন ? এমন কোন শংকা তাকে পেয়ে বসেছে – এমন প্রশ্ন জনমনে।

শুক্রবার ৮ নভেম্বর চিকিৎসার জন্য বেগম জিয়া লন্ডনে যাবেন, এমন খবর আগেই বলা হয়েছিল। হঠাৎ করেই সিদ্ধান্তে ইউটার্ণ।

কেন এই মুহুর্তে তিনি লন্ডনে যাচ্ছেন না; সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলছে না দলটি। পরবর্তীতে কবে যাবেন, তা-ও কেউ নিশ্চিত করতে পারছেন না।

খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে সিসিইউতে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাইকোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় তার।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। এরপর থেকেই গুলশানের বাসা ফিরোজায় আছেন তিনি।

এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছিল বিগত সরকার। এর মধ্যে তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও বারবার তা প্রত্যাখ্যান করা হয়।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বিশেষ ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন। এভারকেয়ার হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসাধীন থেকে সর্বশেষ ২১ আগস্ট গুলশানের বাসায় ফেরেন তিনি।

অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গুঞ্জণ ওঠে ‘মাইনাস থ্রি ফর্মুলা’। অর্থাৎ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাদ দিয়েই সামনের রাজনীতি।

এর আগে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নিয়ে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা নেয়। যেটি “মাইনাস টু ফর্মুলা” নামে পরিচিতি পায়। এই ফর্মুলার মূল লক্ষ্য ছিল দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।

সেবারও দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু ‘মাইনাস টু’ আঁচ করতে পেরে বেকে বসেন দুই নেত্রীই। তারা কেউই বিদেশে যেতে সম্মত হয়নি। যদিও তাদের শারীরিক অবস্থা তখনও ভালো ছিলো না।

শেষ পর্যন্ত, মাইনাস টু ফর্মুলা কার্যকর হয়নি। দুই দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে তীব্র জনমত, রাজনৈতিক চাপ গড়ে তোলেন। এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়।

২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা বিপুল ভোটে বিজয়ী হন এবং প্রধানমন্ত্রী হন, অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া বিরোধী দলের নেতৃত্বে ফিরে আসেন।

গুঞ্জণ রয়েছে, এবারও পরিস্থিতি সেদিকেই গড়াচ্ছে। ধারনা করা হয়েছিল ৫ আগস্টের পরপরই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান; কিন্তু তা হয়নি। ঘোষণা হয়নি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখও। যা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বিএনপি’র।

এই অবস্থায় বেগম জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেলে দেশে বিএনপি জিয়া পরিবার শূণ্য হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে দলের সংস্কারপন্থী গ্রুপ আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে – এমন নানাসব চিন্তা থেকে আপাতত বিদেশ যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সংশ্লিষ্টরা।

শেয়ার করুন

বেগম জিয়ার লন্ডন যাত্রা স্থগিতের নেপথ্যে !

সময় ১১:২৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪

বিগত সরকারের সময়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বারবার আবেদন করেও সাড়া মেলেনি। কিন্তু এবার সুযোগ পেয়েও বিদেশ যাত্রা স্থগিত করলেন বিএনপির এই নেত্রী। কিন্তু কেন ? এমন কোন শংকা তাকে পেয়ে বসেছে – এমন প্রশ্ন জনমনে।

শুক্রবার ৮ নভেম্বর চিকিৎসার জন্য বেগম জিয়া লন্ডনে যাবেন, এমন খবর আগেই বলা হয়েছিল। হঠাৎ করেই সিদ্ধান্তে ইউটার্ণ।

কেন এই মুহুর্তে তিনি লন্ডনে যাচ্ছেন না; সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলছে না দলটি। পরবর্তীতে কবে যাবেন, তা-ও কেউ নিশ্চিত করতে পারছেন না।

খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে সিসিইউতে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাইকোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় তার।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। এরপর থেকেই গুলশানের বাসা ফিরোজায় আছেন তিনি।

এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছিল বিগত সরকার। এর মধ্যে তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও বারবার তা প্রত্যাখ্যান করা হয়।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বিশেষ ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন। এভারকেয়ার হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসাধীন থেকে সর্বশেষ ২১ আগস্ট গুলশানের বাসায় ফেরেন তিনি।

অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গুঞ্জণ ওঠে ‘মাইনাস থ্রি ফর্মুলা’। অর্থাৎ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাদ দিয়েই সামনের রাজনীতি।

এর আগে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নিয়ে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা নেয়। যেটি “মাইনাস টু ফর্মুলা” নামে পরিচিতি পায়। এই ফর্মুলার মূল লক্ষ্য ছিল দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।

সেবারও দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু ‘মাইনাস টু’ আঁচ করতে পেরে বেকে বসেন দুই নেত্রীই। তারা কেউই বিদেশে যেতে সম্মত হয়নি। যদিও তাদের শারীরিক অবস্থা তখনও ভালো ছিলো না।

শেষ পর্যন্ত, মাইনাস টু ফর্মুলা কার্যকর হয়নি। দুই দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে তীব্র জনমত, রাজনৈতিক চাপ গড়ে তোলেন। এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়।

২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা বিপুল ভোটে বিজয়ী হন এবং প্রধানমন্ত্রী হন, অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া বিরোধী দলের নেতৃত্বে ফিরে আসেন।

গুঞ্জণ রয়েছে, এবারও পরিস্থিতি সেদিকেই গড়াচ্ছে। ধারনা করা হয়েছিল ৫ আগস্টের পরপরই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান; কিন্তু তা হয়নি। ঘোষণা হয়নি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখও। যা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বিএনপি’র।

এই অবস্থায় বেগম জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেলে দেশে বিএনপি জিয়া পরিবার শূণ্য হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে দলের সংস্কারপন্থী গ্রুপ আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে – এমন নানাসব চিন্তা থেকে আপাতত বিদেশ যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সংশ্লিষ্টরা।