পোস্টকার্ডটি নিলামে উঠবে ১০ হাজার পাউন্ডের মতো
টাইটানিকের শেষ চিঠি !
- সময় ০৫:০৪:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪
- / 110
বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত জাহাজ টাইটানিকের কাহিনি যেন শত বছর পরও মানুষের হৃদয়ে অমর। এই তো কয়েকদিন আগেই নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করলেন টাইটানিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হারল্যান্ড অ্যান্ড উল্ফ। এবার আবারো খবরের শিরোনাম হয়ে ফিরে এলো টাইটানিক।
টাইটানিক যখন ঢুবে যায় তখন যাত্রীদের অনেকেই বিশ্বভ্রমণের আনন্দে ছিলেন উদ্বেলিত। তবে সেই আনন্দে মিশে ছিল মৃত্যুর আগমনী বার্তা। সেই দলে ছিলেন রিচার্ড উইলিয়াম স্মিথ নামের একজন। তারই একটি চিঠি; যেটি কিনা টাইটানিকের শেষ চিঠি- সেটি এবার নিলামে তোলা হয়েছে।
১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল। বৃটিশ যাত্রীবাহী জাহাজ টাইটানিক রওনা হলো যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে। যাত্রীরা কেউ জানত না, এই বিলাসবহুল জাহাজের ভাগ্যে লেখা রয়েছে গভীর সমুদ্রের অতল তলায় হারিয়ে যাওয়ার কথা।
১৫ এপ্রিলের সেই ট্র্যাজেডির দিন এসে পৌঁছার ঠিক তিনদিন আগে রিচার্ড উইলিয়াম স্মিথ তার বন্ধু অলিভ ডাকিনের উদ্দেশ্যে একটি পোস্টকার্ড লিখেছিলেন।
বৃটিশ ব্যবসায়ী রিচার্ড উইলিয়াম স্মিথ লিখেছিলেন, “কুইনস্টাউনে ভালো সময় কাটালাম। এখন ছুটছি তারার দেশের উদ্দেশ্যে।”
এই চিঠিতে তাঁর শেষ অনুভূতিগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। হয়তো তিনি আনন্দেই ভরপুর ছিলেন, হয়তো ভেতরে এক ধরণের বিচ্ছিন্নতাও কাজ করছিল।
চিঠির শেষে তিনি লিখেছিলেন, “আশা করি, তোমরা সবাই ভালো আছো। আন্তরিক শুভেচ্ছা, আর ডব্লিউ এস।”
স্মিথ ছিলেন একজন সফল চা ব্যবসায়ী। যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর বেশ কিছু ব্যবসায়িক যোগাযোগ ছিল। তিনি টাইটানিকে ছিলেন তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিসেস নিকোলসের সাথে। স্মিথের এই চিঠি যেন একটি জীবন্ত স্মৃতি, যে স্মৃতি আমাদের নিয়ে যায় সেই মহাকাব্যিক ট্র্যাজেডির প্রাক্কালে।
এই ঐতিহাসিক পোস্টকার্ডটি উঠছে যুক্তরাজ্যের হেনরি অলড্রিজ অ্যান্ড সনের নিলামে। নিলাম প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্ড্রু অলড্রিজ বলেন, “এটি খুবই শক্তিশালী এবং আবেগপ্রবণ একটি বস্তু, কারণ এটি মিস্টার স্মিথের শেষ লেখা জিনিসগুলোর মধ্যে একটি।”
পোস্টকার্ডটি পাঠানো হয়েছিল আয়ারল্যান্ডের কর্ক শহর থেকে, যা টাইটানিকের যাত্রাপথের শেষ যাত্রাবিন্দু ছিল। এটি যেন এক অমূল্য স্মৃতি, সেই সময়ের সাক্ষ্যবহনকারী।
আশা করা হচ্ছে, এই পোস্টকার্ডটি নিলামে উঠবে ১০ হাজার পাউন্ডের মতো, যা প্রায় ১৩ হাজার ডলার। এটি শুধু একটি পোস্টকার্ড নয়, এটি এক জীবন্ত ইতিহাস।
টাইটানিক ডুবে যাওয়ার ট্র্যাজেডির মধ্যে যে মানবিক আবেগ, ভালোবাসা আর শেষ মুহূর্তের স্মৃতিগুলো বেঁচে আছে, তা যেন আজও এই চিঠির মধ্যে রয়ে গেছে।
টাইটানিকের সেই যাত্রায় ১,৫০০ জনের বেশি মানুষ তাদের জীবন হারিয়েছিল। স্মিথ ছিলেন সেই সব সাহসী মানুষদের একজন, যিনি ভবিষ্যতের দুঃস্বপ্নের আগেই নিজের অনুভূতিগুলো রেখে গিয়েছিলেন তার বন্ধু অলিভ ডাকিনের কাছে। এই পোস্টকার্ডে যেন বন্দি রয়েছে সেই সময়ের একটি অংশ, একটি আবেগের ছোঁয়া।
১৬ নভেম্বর ‘টাইটানিক, হোয়াইট স্টার এবং পরিবহন স্মারক’ শিরোনামের এই নিলামে অংশ নেবে অনেক সংগ্রাহক, ইতিহাস প্রেমী। প্রত্যেকেই চান এই বিশেষ পোস্টকার্ডটি হাতে নিতে, যা শুধুমাত্র একটি চিঠি নয় বরং একটি সময়ের সাক্ষী।
টাইটানিকের গল্প কখনো শেষ হবে না। এই চিঠিটি যেন সেই কাহিনিরই একটি অংশ, একটি ইতিহাসের অনন্য স্রোত, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদের মনে থাকবে।