ঢাকা ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দ্বি-খন্ডিত তাবলীগ জামায়ত: দায়ী কামাল-হাছান!

উৎপল দাস
  • সময় ০৮:২০:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪
  • / 243

বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের ভেতরে দু’টি গ্রুপের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। স্থান সংকুলানের কারণে প্রথমে জেলাভিত্তিক দুই ধাপে ইজতেমা পালনের সিদ্ধান্ত হয় ২০১১ সালে। এরপর রাজনৈতিক বাতাবরণে ২০১৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এই বিভক্তি এখনো চলমান। ২০১৮ সাল থেকে তাবলীগ জামাতকে দুইটি ভাগে ভাগ করে ইজতেমা পালনের নিয়ম করে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। ধর্মীয় একটি বিষয়কে নানাভাবে একই ছাতার তলে আনার চেষ্টা করলেও বারবার ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাবেক দুইজন মন্ত্রীকেই দায়ী করেছেন তাবলীগ সংশ্লিষ্টরা।

বাংলা অ্যাফেয়ার্সের সাথে আলাপকালে একাধিক তাবলীগ জামাতের সদস্য বলেছেন, একপক্ষকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিয়ন্ত্রণ করতেন। আরেক পক্ষকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতেন সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এই দুই মন্ত্রী গত ৬ বছরে বহুবার চেষ্টা করেও দুই পক্ষকে একসাথে করতে পারেনি। ফলে তাবলীগ জামাতের এই বিভক্তির পেছনে আওয়ামী লীগের সাবেক দুই মন্ত্রীকেই দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া তাবলীগ জামাতকে বিভক্ত করার নেপথ্যে আন্তজার্তিক ষড়যন্ত্রের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে নানা সময়। মাওলানা সাদকে ভারতপন্থী এবং মাওলানা জুবায়ের আহমেদকে পাকিস্তানপন্থী হিসাবেই বিবেচনা করা হতো। মাওলানা জুবায়েরের মূল শক্তির উৎসই হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম।

আখেরি মোনাজাত
আখেরি মোনাজাত

২০১৭ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমীর শাহ আহমদ শফী’র উপস্থিতিতে তাবলীগ জামাতের একাংশের এক সম্মেলন হয়। এতে সাদ কান্দালভিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ঢাকার মোহাম্মদপুরে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় – দিল্লিতে তাবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাদ কান্দালভির বক্তব্য ও মতবাদকে অনুসরণ করা হবে না, এবং আগামী বিশ্ব ইজতেমার সময় তাকে বাংলাদেশে আসতেও দেয়া হবে না। এরপর মাওলানা সাদ আর বাংলাদেশে একবার আসলেও বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে পারেননি।

কি বলেছিলেন মাওলানা সাদ:

বেশ কিছু কাল ধরেই মাওলানা সাদ কান্দালভি তাবলীগ জামাতে এমন কিছু সংস্কারের কথা বলছেন – যা এই আন্দোলনে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে।

সাদ কান্দালভি বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রচারণা অর্থের বিনিময়ে করা উচিত নয় – যার মধ্যে মিলাদ বা ওয়াজ মাহফিলের মতো কর্মকান্ড পড়ে বলে মনে করা হয়।

সাদ কান্দালভি আরো বলেন, মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকদের মাদ্রাসার ভেতরে নামাজ না পড়ে মসজিদে এসে নামাজ পড়া উচিত – যাতে মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়ে।

কিন্তু তার বিরোধীরা বলছেন, সাদ কান্দালভি যা বলছেন – তা তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের নির্দেশিত পন্থার বিরোধী

তাদের বক্তব্য, সাদ কান্দালভির কথাবার্তা আহলে সুন্নাত ওয়া’ল জামাতের বিশ্বাস ও আকিদার বাইরে।

কিন্তু সাদ কান্দালভির সমর্থকরা বলছেন,তাদের নেতার বক্তব্য বা সংস্কারের প্রস্তাব মানতে না পেরেই বাংলাদেশে সংগঠনটির কর্মকান্ডকে ‘রাজনৈতিক চেহারা’ দেয়া হয়েছে।

তবে সাদ কান্দালভির বিরোধী একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতার মতে, সাদ কান্দালভি এখনো এ মতবাদ ছাড়েন নি। তাই এটা যেন বাংলাদেশে ছড়াতে না পারে এবং মুসলিমরা যেন পথভ্রষ্ট না হয়, সে জন্য তারা কাজ করে চলেছেন। তিনি দাবি করেন, এর মধ্যে এক কণাও রাজনীতি নেই।

গেল কয়েক বছর ধরে চলমান এই দ্বন্ধ আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। কিন্তু সুশৃঙ্খল একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে কেন এই দ্বন্ধ – যা আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের বার্তা দিচ্ছে।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পট পরিবর্তনের পর আবারও তাবলীগ জামাতকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি দুই গ্রুপ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উভয়পক্ষকে আলোচনার জন্য ডাকা হলেও মাওলানা জুবায়েরপন্থীরা সেখানে যোগ দেননি। উল্টো পরের দিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামি মহাসমাবেশ করে মাওলানা জুবায়েরপন্থীরা। সেখানেও কারা আগে ইজতেমা পালন করবে তা নিয়ে বিরোধের কথা জানান দিয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে মাওলানা জুবায়ের পন্থীরাই প্রথমে ইজতেমা পালন করেন। দ্বিতীয় ধাপে মাওলানা সাদ পন্থীরা পালন করেন।

কিন্তু গত সোমবার আগামী বছরের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

গত কয়েক বছর ধরে তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে।

গত সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

জুবায়ের-পন্থীদের
জুবায়ের-পন্থীদের

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে মাওলানা সাদপন্থীরা প্রথম ধাপে ইজতেমা পালন করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। এ নিয়ে আবারও বিপত্তির শুরু। পরের দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমীপন্থী মাওলানা জুবায়েরর আলেমরা ইসলামিক মহাসম্মেলনে ঘোষণা করেন, তারাই প্রথম ধাপের ইজতেমা পালন করতে চান। এর ব্যতিক্রম ঘটলে তার জন্য সরকার এবং সাদপন্থীদেরও রুখে দেয়ার ঘোষণা দেন।

প্রায় শতবর্ষ আগে, ১৯২৭ সালে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর এলাকায় তাবলীগের আন্দোলন শুরু করেন। এর প্রায় দুই দশক পর ১৯৪৬ সালে ঢাকার রমনা পার্ক সংলগ্ন কাকরাইল মসজিদ থেকে বাংলাদেশে এই দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু হয়।

১৯৬৬ সালের পর থেকে প্রতি বছরই টঙ্গীর তুরাগ নদের উত্তর পূর্ব তীর সংলগ্ন ডোবা-নালা, উঁচু-নিচু জমি মিলিয়ে রাজউকের হুকুমদখলকৃত ১৬০ একর জায়গার বিশাল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এ ইজতেমা। যা বিশ্ব ইজতেমা নামে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পরিচিত।

অর্ধ শতক কাল পরে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে ২০১৮ সালে ইজতেমা আয়োজন নিয়ে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় দুই পক্ষ দুই বারে ইজতেমা করবে।

ভাগাভাগির ইজতেমার আগে ঢাকায় দুই পক্ষে মারামারিও হয়েছিল। এরপর আলাদা ইজতেমা আয়োজনের মধ্যদিয়ে পরিস্থিতি শান্তই ছিল। কিন্তু এবার এক পক্ষের সমাবেশ করে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদগার নতুন করে সামনে আনল পুরনো দ্বন্দ্ব।

গত ৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ওলামা মাশায়েখ’দের এক সমাবেশ থেকে তাবলীগ জামাতের দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি তোলা হয়।

কাকরাইল মসজিদ এবং টঙ্গীর ইজতেমায় সাদপন্থীদের কাজ দেওয়ার কোনও সুয্গো না দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে তারা।

তাবলীগে মাওলানা সাদের বিরোধী পক্ষ মাওলানা জুবায়ের আহমেদের অনুসারী। তারা নিজেদের ‘শুরায়ে নিজাম’ বলে পরিচয় দেন। অন্যদিকে সাদপন্থিরা নিজেদের ‘নিজামুদ্দিন মারকাজ’র অনুসারী বলে পরিচয় দেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৫০টির বেশি দেশে তাবলীগ জামাতের প্রায় ৮ কোটি অনুসারী আছে।

দ্বন্দ্বের আগে স্থানাভাবের কারণে ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো ২ ভাগে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে শুরু করে। তখন বাংলাদেশের জেলাগুলোকে ভাগ করে একেকটি ইজতেমায় ৩২টি জেলার সদস্যরা অংশ নিত।

ভারতে মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভির হাতে সৃষ্ট তাবলিগ জামাত শুরু থেকেই ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখেছিল কওমি মাদ্রাসাগুলোর সঙ্গে। বাংলাদেশেও সেভাবেই এর সূচনা হয়।

১৯৯৫ সালে মাওলানা ইনামুল হাসান কান্ধলভি মারা যাওয়ার আগে তাবলিগের ১০ সদস্যকে নিয়ে শূরা ব্যবস্থা প্রণয়ন করেন। যেন তার অনুপস্থিতিতে শূরা সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটি ২০১৫ সাল পর্যন্ত বলবৎ ছিল।

২০১৫ সালে ইলিয়াস কান্ধলভির প্রপৌত্র মাওলানা সাদ কান্ধলভিকে তাবলীগ জামাতের বিশ্ব আমির করা হয়। কিন্তু ২০১৭ সালে সাদ কান্ধলভির কয়েকটি বিবৃতি নিয়ে দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারীরা আপত্তি তোলে। তারা মাওলানা সাদের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

তখন তাবলীগ জামাতের ভেতরে চরম দ্বন্দ্ব শুরু হয় দিল্লির নিজামুদ্দিনে। মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে পৃথক ফতোয়া দিয়ে বৈশ্বিকভাবে দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি অনুসরণ করা হয় কওমি ও দেওবন্দি মাদ্রাসাগুলোয়। সেই বিরোধ বিশ্বের অন্য সব দেশেও তাবলিগ জামাতের অনুসারীদের দুই ভাগে ভাগ করে ফেলে।

দিল্লির দ্বন্দ্বের রেশ এসে পড়ে বাংলাদেশেও। দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসরণে বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার অনুসারীরাও মাওলানা সাদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তারা মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করে।

২০১৮ সালে সাদ কান্ধলভী ঢাকায় আসার দিন বিরোধী পক্ষ তাকে ঠেকাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে। তখন অন্য পক্ষের সঙ্গে তাদের মারামারি বাধে। তার আগে কাকরাইল মসজিদেও দুই পক্ষের হাতাহাতি হয়। এমনকি সেখানে জ্যামার বসানোও হয়েছিল।

মারামারির মধ্যে মাওলানা সাদ ঢাকায় আসার পর পুলিশের পাহারায় তাকে কাকরাইল মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। নিরাপত্তার কারণে সেবার তার ইজতেমায় যোগদানও হয়নি। দুই পক্ষকে মানাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বৈঠকও করেন। পরে সিদ্ধান্ত হয় যে দুই পক্ষের ইজতেমা আলাদাভাবে হবে।

নতুন বছরে ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় বৃহৎ জমায়েতকে ঘিরে আবারো বিশ্ব মুসলিম উম্মার সামনে এই বিভক্তি ইমেজ সংকটে ফেলতে পারে বলেই মনে করেন ধর্মপ্রাণ মানুষজন। তারা বলেছেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই বিশ্ব ইজতেমার মাধ্যমে বাংলাদেশের একটা পরিচিতি আছে। এই পরিচিতিকে ধ্বংস করার জন্যই বিভেদ সৃষ্টি করেছে। এখানে দায় উভয়পক্ষেরই আছে। তারা কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি না। আক্ষেপ নিয়ে উভয়পক্ষের কয়েকজন তাবলীগ জামাত করা মানুষ বলেছেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। যা আওয়ামী লীগ সরকার পারেনি। এই বিভক্তি দূর করার আহ্বানও জানান তারা।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ ই মে সংঘটিত ঘটনা, যার মাধ্যমে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের মহাসমাবেশ এবং নানা অপতৎপরতা থেকে শুরু করে আলেমদের ওপর প্রশসনিক হস্তক্ষেপের কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে থেকে নানা ধরণের সুবিধাও আদায় করেছিল হেফাজতে ইসলাম। কিন্তু ওই দিনের ঘটনা মনে রেখেছিল হেফাজত। পরবর্তী সময়ে মাওলানা সাদের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে যে বিভক্তি দেখা গিয়েছিল, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে খুব ঠান্ডা মাথায় প্রায় ১১ বছরের মাথায় বিশ্ব ইজতেমা নিজেরাই করতে চায় জুবায়ের পন্থীরা। সেখানে মাওলানা সাদের যোগদান করার কোনো সুযোগ থাকবে না বলেও জানা গেছে।

সাদপন্থীদের সংবাদ সম্মেলন
সাদপন্থীদের সংবাদ সম্মেলন

এদিকে, বিশ্ব ইজতেমায় তাবলীগ জামাতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তার অনুসারীরা। বুধবার প্রেসক্লাবে দাওয়াত ও তাবলীগের উলামায়ে কেরাম ও সাধারণ সাথীদের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি তুলে ধরা হয়।

লিখিত বক্তব্যে কাকরাইল মসজিদের খতিব আজিম উদ্দিন বলেন, তাবলীগ জামাতের আরেক পক্ষ জোবায়েরপন্থী দেশের কতিপয় উলামায়ে কেরামকে বিভ্রান্ত করে ও মাদ্রাসার কোমলমতি ছাত্রদের ব্যবহার করে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে। ইজতেমাকে কেন্দ্র করে একটি মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

আগামী পর্বে: ইজমেতাকে কেন্দ্র করে আর্থিক কেলেংকারির অভিযোগ!

শেয়ার করুন

দ্বি-খন্ডিত তাবলীগ জামায়ত: দায়ী কামাল-হাছান!

সময় ০৮:২০:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের ভেতরে দু’টি গ্রুপের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। স্থান সংকুলানের কারণে প্রথমে জেলাভিত্তিক দুই ধাপে ইজতেমা পালনের সিদ্ধান্ত হয় ২০১১ সালে। এরপর রাজনৈতিক বাতাবরণে ২০১৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এই বিভক্তি এখনো চলমান। ২০১৮ সাল থেকে তাবলীগ জামাতকে দুইটি ভাগে ভাগ করে ইজতেমা পালনের নিয়ম করে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। ধর্মীয় একটি বিষয়কে নানাভাবে একই ছাতার তলে আনার চেষ্টা করলেও বারবার ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাবেক দুইজন মন্ত্রীকেই দায়ী করেছেন তাবলীগ সংশ্লিষ্টরা।

বাংলা অ্যাফেয়ার্সের সাথে আলাপকালে একাধিক তাবলীগ জামাতের সদস্য বলেছেন, একপক্ষকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিয়ন্ত্রণ করতেন। আরেক পক্ষকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতেন সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এই দুই মন্ত্রী গত ৬ বছরে বহুবার চেষ্টা করেও দুই পক্ষকে একসাথে করতে পারেনি। ফলে তাবলীগ জামাতের এই বিভক্তির পেছনে আওয়ামী লীগের সাবেক দুই মন্ত্রীকেই দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া তাবলীগ জামাতকে বিভক্ত করার নেপথ্যে আন্তজার্তিক ষড়যন্ত্রের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে নানা সময়। মাওলানা সাদকে ভারতপন্থী এবং মাওলানা জুবায়ের আহমেদকে পাকিস্তানপন্থী হিসাবেই বিবেচনা করা হতো। মাওলানা জুবায়েরের মূল শক্তির উৎসই হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম।

আখেরি মোনাজাত
আখেরি মোনাজাত

২০১৭ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমীর শাহ আহমদ শফী’র উপস্থিতিতে তাবলীগ জামাতের একাংশের এক সম্মেলন হয়। এতে সাদ কান্দালভিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ঢাকার মোহাম্মদপুরে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় – দিল্লিতে তাবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাদ কান্দালভির বক্তব্য ও মতবাদকে অনুসরণ করা হবে না, এবং আগামী বিশ্ব ইজতেমার সময় তাকে বাংলাদেশে আসতেও দেয়া হবে না। এরপর মাওলানা সাদ আর বাংলাদেশে একবার আসলেও বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে পারেননি।

কি বলেছিলেন মাওলানা সাদ:

বেশ কিছু কাল ধরেই মাওলানা সাদ কান্দালভি তাবলীগ জামাতে এমন কিছু সংস্কারের কথা বলছেন – যা এই আন্দোলনে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে।

সাদ কান্দালভি বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রচারণা অর্থের বিনিময়ে করা উচিত নয় – যার মধ্যে মিলাদ বা ওয়াজ মাহফিলের মতো কর্মকান্ড পড়ে বলে মনে করা হয়।

সাদ কান্দালভি আরো বলেন, মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকদের মাদ্রাসার ভেতরে নামাজ না পড়ে মসজিদে এসে নামাজ পড়া উচিত – যাতে মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়ে।

কিন্তু তার বিরোধীরা বলছেন, সাদ কান্দালভি যা বলছেন – তা তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের নির্দেশিত পন্থার বিরোধী

তাদের বক্তব্য, সাদ কান্দালভির কথাবার্তা আহলে সুন্নাত ওয়া’ল জামাতের বিশ্বাস ও আকিদার বাইরে।

কিন্তু সাদ কান্দালভির সমর্থকরা বলছেন,তাদের নেতার বক্তব্য বা সংস্কারের প্রস্তাব মানতে না পেরেই বাংলাদেশে সংগঠনটির কর্মকান্ডকে ‘রাজনৈতিক চেহারা’ দেয়া হয়েছে।

তবে সাদ কান্দালভির বিরোধী একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতার মতে, সাদ কান্দালভি এখনো এ মতবাদ ছাড়েন নি। তাই এটা যেন বাংলাদেশে ছড়াতে না পারে এবং মুসলিমরা যেন পথভ্রষ্ট না হয়, সে জন্য তারা কাজ করে চলেছেন। তিনি দাবি করেন, এর মধ্যে এক কণাও রাজনীতি নেই।

গেল কয়েক বছর ধরে চলমান এই দ্বন্ধ আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। কিন্তু সুশৃঙ্খল একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে কেন এই দ্বন্ধ – যা আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের বার্তা দিচ্ছে।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পট পরিবর্তনের পর আবারও তাবলীগ জামাতকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি দুই গ্রুপ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উভয়পক্ষকে আলোচনার জন্য ডাকা হলেও মাওলানা জুবায়েরপন্থীরা সেখানে যোগ দেননি। উল্টো পরের দিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামি মহাসমাবেশ করে মাওলানা জুবায়েরপন্থীরা। সেখানেও কারা আগে ইজতেমা পালন করবে তা নিয়ে বিরোধের কথা জানান দিয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে মাওলানা জুবায়ের পন্থীরাই প্রথমে ইজতেমা পালন করেন। দ্বিতীয় ধাপে মাওলানা সাদ পন্থীরা পালন করেন।

কিন্তু গত সোমবার আগামী বছরের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

গত কয়েক বছর ধরে তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে।

গত সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

জুবায়ের-পন্থীদের
জুবায়ের-পন্থীদের

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে মাওলানা সাদপন্থীরা প্রথম ধাপে ইজতেমা পালন করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। এ নিয়ে আবারও বিপত্তির শুরু। পরের দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমীপন্থী মাওলানা জুবায়েরর আলেমরা ইসলামিক মহাসম্মেলনে ঘোষণা করেন, তারাই প্রথম ধাপের ইজতেমা পালন করতে চান। এর ব্যতিক্রম ঘটলে তার জন্য সরকার এবং সাদপন্থীদেরও রুখে দেয়ার ঘোষণা দেন।

প্রায় শতবর্ষ আগে, ১৯২৭ সালে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর এলাকায় তাবলীগের আন্দোলন শুরু করেন। এর প্রায় দুই দশক পর ১৯৪৬ সালে ঢাকার রমনা পার্ক সংলগ্ন কাকরাইল মসজিদ থেকে বাংলাদেশে এই দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু হয়।

১৯৬৬ সালের পর থেকে প্রতি বছরই টঙ্গীর তুরাগ নদের উত্তর পূর্ব তীর সংলগ্ন ডোবা-নালা, উঁচু-নিচু জমি মিলিয়ে রাজউকের হুকুমদখলকৃত ১৬০ একর জায়গার বিশাল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এ ইজতেমা। যা বিশ্ব ইজতেমা নামে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পরিচিত।

অর্ধ শতক কাল পরে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে ২০১৮ সালে ইজতেমা আয়োজন নিয়ে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় দুই পক্ষ দুই বারে ইজতেমা করবে।

ভাগাভাগির ইজতেমার আগে ঢাকায় দুই পক্ষে মারামারিও হয়েছিল। এরপর আলাদা ইজতেমা আয়োজনের মধ্যদিয়ে পরিস্থিতি শান্তই ছিল। কিন্তু এবার এক পক্ষের সমাবেশ করে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদগার নতুন করে সামনে আনল পুরনো দ্বন্দ্ব।

গত ৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ওলামা মাশায়েখ’দের এক সমাবেশ থেকে তাবলীগ জামাতের দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি তোলা হয়।

কাকরাইল মসজিদ এবং টঙ্গীর ইজতেমায় সাদপন্থীদের কাজ দেওয়ার কোনও সুয্গো না দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে তারা।

তাবলীগে মাওলানা সাদের বিরোধী পক্ষ মাওলানা জুবায়ের আহমেদের অনুসারী। তারা নিজেদের ‘শুরায়ে নিজাম’ বলে পরিচয় দেন। অন্যদিকে সাদপন্থিরা নিজেদের ‘নিজামুদ্দিন মারকাজ’র অনুসারী বলে পরিচয় দেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৫০টির বেশি দেশে তাবলীগ জামাতের প্রায় ৮ কোটি অনুসারী আছে।

দ্বন্দ্বের আগে স্থানাভাবের কারণে ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো ২ ভাগে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে শুরু করে। তখন বাংলাদেশের জেলাগুলোকে ভাগ করে একেকটি ইজতেমায় ৩২টি জেলার সদস্যরা অংশ নিত।

ভারতে মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভির হাতে সৃষ্ট তাবলিগ জামাত শুরু থেকেই ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখেছিল কওমি মাদ্রাসাগুলোর সঙ্গে। বাংলাদেশেও সেভাবেই এর সূচনা হয়।

১৯৯৫ সালে মাওলানা ইনামুল হাসান কান্ধলভি মারা যাওয়ার আগে তাবলিগের ১০ সদস্যকে নিয়ে শূরা ব্যবস্থা প্রণয়ন করেন। যেন তার অনুপস্থিতিতে শূরা সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটি ২০১৫ সাল পর্যন্ত বলবৎ ছিল।

২০১৫ সালে ইলিয়াস কান্ধলভির প্রপৌত্র মাওলানা সাদ কান্ধলভিকে তাবলীগ জামাতের বিশ্ব আমির করা হয়। কিন্তু ২০১৭ সালে সাদ কান্ধলভির কয়েকটি বিবৃতি নিয়ে দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারীরা আপত্তি তোলে। তারা মাওলানা সাদের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

তখন তাবলীগ জামাতের ভেতরে চরম দ্বন্দ্ব শুরু হয় দিল্লির নিজামুদ্দিনে। মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে পৃথক ফতোয়া দিয়ে বৈশ্বিকভাবে দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি অনুসরণ করা হয় কওমি ও দেওবন্দি মাদ্রাসাগুলোয়। সেই বিরোধ বিশ্বের অন্য সব দেশেও তাবলিগ জামাতের অনুসারীদের দুই ভাগে ভাগ করে ফেলে।

দিল্লির দ্বন্দ্বের রেশ এসে পড়ে বাংলাদেশেও। দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসরণে বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার অনুসারীরাও মাওলানা সাদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তারা মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করে।

২০১৮ সালে সাদ কান্ধলভী ঢাকায় আসার দিন বিরোধী পক্ষ তাকে ঠেকাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে। তখন অন্য পক্ষের সঙ্গে তাদের মারামারি বাধে। তার আগে কাকরাইল মসজিদেও দুই পক্ষের হাতাহাতি হয়। এমনকি সেখানে জ্যামার বসানোও হয়েছিল।

মারামারির মধ্যে মাওলানা সাদ ঢাকায় আসার পর পুলিশের পাহারায় তাকে কাকরাইল মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। নিরাপত্তার কারণে সেবার তার ইজতেমায় যোগদানও হয়নি। দুই পক্ষকে মানাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বৈঠকও করেন। পরে সিদ্ধান্ত হয় যে দুই পক্ষের ইজতেমা আলাদাভাবে হবে।

নতুন বছরে ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় বৃহৎ জমায়েতকে ঘিরে আবারো বিশ্ব মুসলিম উম্মার সামনে এই বিভক্তি ইমেজ সংকটে ফেলতে পারে বলেই মনে করেন ধর্মপ্রাণ মানুষজন। তারা বলেছেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই বিশ্ব ইজতেমার মাধ্যমে বাংলাদেশের একটা পরিচিতি আছে। এই পরিচিতিকে ধ্বংস করার জন্যই বিভেদ সৃষ্টি করেছে। এখানে দায় উভয়পক্ষেরই আছে। তারা কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি না। আক্ষেপ নিয়ে উভয়পক্ষের কয়েকজন তাবলীগ জামাত করা মানুষ বলেছেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। যা আওয়ামী লীগ সরকার পারেনি। এই বিভক্তি দূর করার আহ্বানও জানান তারা।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ ই মে সংঘটিত ঘটনা, যার মাধ্যমে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের মহাসমাবেশ এবং নানা অপতৎপরতা থেকে শুরু করে আলেমদের ওপর প্রশসনিক হস্তক্ষেপের কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে থেকে নানা ধরণের সুবিধাও আদায় করেছিল হেফাজতে ইসলাম। কিন্তু ওই দিনের ঘটনা মনে রেখেছিল হেফাজত। পরবর্তী সময়ে মাওলানা সাদের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে যে বিভক্তি দেখা গিয়েছিল, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে খুব ঠান্ডা মাথায় প্রায় ১১ বছরের মাথায় বিশ্ব ইজতেমা নিজেরাই করতে চায় জুবায়ের পন্থীরা। সেখানে মাওলানা সাদের যোগদান করার কোনো সুযোগ থাকবে না বলেও জানা গেছে।

সাদপন্থীদের সংবাদ সম্মেলন
সাদপন্থীদের সংবাদ সম্মেলন

এদিকে, বিশ্ব ইজতেমায় তাবলীগ জামাতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তার অনুসারীরা। বুধবার প্রেসক্লাবে দাওয়াত ও তাবলীগের উলামায়ে কেরাম ও সাধারণ সাথীদের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি তুলে ধরা হয়।

লিখিত বক্তব্যে কাকরাইল মসজিদের খতিব আজিম উদ্দিন বলেন, তাবলীগ জামাতের আরেক পক্ষ জোবায়েরপন্থী দেশের কতিপয় উলামায়ে কেরামকে বিভ্রান্ত করে ও মাদ্রাসার কোমলমতি ছাত্রদের ব্যবহার করে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে। ইজতেমাকে কেন্দ্র করে একটি মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

আগামী পর্বে: ইজমেতাকে কেন্দ্র করে আর্থিক কেলেংকারির অভিযোগ!