ঢাকা ০১:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সাবেক স্বাস্থ্য সচিবের সম্পদের পাহাড়

সচিবের আর্শিবাদে বন্ধুও ধনবান!

আব্দুস সালাম মিতুল ও এসএমআর শহীদ
  • সময় ০২:০০:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪
  • / 209

সচিবের আর্শিবাদে বন্ধুও ধনবান!

মো. সিরাজুল হক খান। গোপালগঞ্জে জন্ম নেয়া প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তা এখন অবসরে। ২০১০ সালের মে থেকে ২০১৩ সালের ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন। পরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব থেকে ওএসডি হয়ে নিজের ক্যারিয়ারের ইতি টানেন এই কর্মকর্তা। তার মেয়াদকালে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালী এই সচিব কেবল নিজে না; তার সানিধ্য পেয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তার বন্ধুরাও। তাদেরই একজন সেবা গ্রীন লাইন ও মাসুদ স্টিল ডিজাইন বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম মাসুদুর রহমান মাসুদ।

স্থানীয়রা বলছেন, এই মাসুদের হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ার পেছনে রয়েছেন সিরাজুল হকের আর্শিবাদ। যিনি মাসুদকে ব্যাপক সহায়তা করেছেন এবং এক পর্যায়ে উক্ত সচিব মাসুদের ব্যবসায়ীক পার্টনার হয়েছেন।

১৯৮৪ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডার এই সচিব নিজ এলাকা গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ব্যাসপুরের সৈয়দ আলী খানের চতুর্থ সন্তান। সেখানে তার প্রসাদসম বহুতল ভবন বহু দুর থেকেই স্থানীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিন বছর আগেও এখানে কাচাপাকা ঘর থাকলেও দুর্নীতির এই বরপুত্রের হাতের ছোয়ায় পুরো এলাকা যেন বদলে গেছে। গড়েছেন ২০ শয্যার হাসপাতাল, বাবার নামে কমিউনিটি ক্লিনিক, ফাউন্ডেশন, সুপেয় পানির হাউজ। এলাকায় দানবীর হিসেবে জানান দিচ্ছে অনেক কিছু।

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক এমপি কর্নেল ফারুক খানের ভোট ডাকাতির অন্যতম কারিগর সচিব তিনি। স্থানীয় রাজনৈতিক বলয়েও ছিলো তার প্রভাব।

চাকুরী জীবনে যখন যেখানে গিয়েছেন গড়েছেন সম্পদ। চট্টগ্রামে স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট কিনেছেন। ২০১০ থেকে ২০১৩ সালে বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে থাকাকালীন কক্সবাজারে আরো একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে জানা যায়।

সচিব
ছবি: সংগৃহীত

সচিবের বাড়ি পার হতেই বিতর্কিত ব্যাবসায়ী কে এম মাসুদুর রহমানের নির্মাণাধীন বহুতল ভবন। বলা হয় সচিবের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের দেখভালের দায়িত্ব ছিলো বিশ্বস্ত মাসুদের হাতে। সচিবের ঘনিষ্ঠতায় মাসুদ ঠিকাদারিতে প্রভাব খাঁটিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে সকল কাজ চলতো তাদের ইশারায়। ক্যাসিনো কেলেংকারীতে জোরেসোরে নাম ডাক চাউর হলে প্রথমবারের মতো মাসুদ ও তার পার্টনার সচিব সিরাজুল হকের সম্পদ সামনে আসতে শুরু করে।

উত্তরার আশুলিয়া বেরিবাধ রোডে সেবা ফিলিং স্টেশন করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সড়ক ও জনপদের সরকারী জমি দখল করে সচিব সিরাজুল ইসলাম খান উদ্বোধন করেন এই তেল পাম্প। এছাড়াও গাজীপুরের হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিমে পিরাজালি নামক এলাকায় প্রায় আড়াইশ একর জমিতে মাসুদ স্টিল ডিজাইন বিডি লিমিটেড নামে রডের কোম্পানির অলিখিত বড়ো বিনিয়োগ রয়েছে তার। সেবা গ্রীন লাইন নামের পরিবহন ব্যবসাসহ হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া মাসুদ একসময় সচিবের আস্থাভাজন সহচর থাকলেও সম্প্রতি সম্পদ নিয়ে বেড়েছে দুরত্ব।

অভিযোগ রয়েছে, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের দাসের হাটে সরকারি জায়গাসহ বাচ্চাদের খেলার মাঠ দখল করে এবং পূজা মন্ডপের জায়গা দখলের অভিযোগ রয়েছে।

গোপালগঞ্জ খুলনা হাইওয়ে রোডের ভ্রমরগ্রাম, সালিনা বক্সা, মুকসুদপুরে সেবা গ্রীন মডেল ফিলিং এন্ড অটো গ্যাস স্টেশন নির্মানে কোটি টাকা কোথা থেকে আসলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এসব বিষয়ে মুখ খুললে বিপদ আছে, এমন ভয়ে মুখ খুলছে না কেউই।

এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের দাবী জ্ঞাত আয় বহির্ভূত এমন সম্পদ অর্জন সঠিক পথে করা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ খোঁজ নিলে মিলবে আরো সম্পদ।

শেয়ার করুন

সাবেক স্বাস্থ্য সচিবের সম্পদের পাহাড়

সচিবের আর্শিবাদে বন্ধুও ধনবান!

সময় ০২:০০:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

মো. সিরাজুল হক খান। গোপালগঞ্জে জন্ম নেয়া প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তা এখন অবসরে। ২০১০ সালের মে থেকে ২০১৩ সালের ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন। পরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব থেকে ওএসডি হয়ে নিজের ক্যারিয়ারের ইতি টানেন এই কর্মকর্তা। তার মেয়াদকালে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালী এই সচিব কেবল নিজে না; তার সানিধ্য পেয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তার বন্ধুরাও। তাদেরই একজন সেবা গ্রীন লাইন ও মাসুদ স্টিল ডিজাইন বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম মাসুদুর রহমান মাসুদ।

স্থানীয়রা বলছেন, এই মাসুদের হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ার পেছনে রয়েছেন সিরাজুল হকের আর্শিবাদ। যিনি মাসুদকে ব্যাপক সহায়তা করেছেন এবং এক পর্যায়ে উক্ত সচিব মাসুদের ব্যবসায়ীক পার্টনার হয়েছেন।

১৯৮৪ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডার এই সচিব নিজ এলাকা গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ব্যাসপুরের সৈয়দ আলী খানের চতুর্থ সন্তান। সেখানে তার প্রসাদসম বহুতল ভবন বহু দুর থেকেই স্থানীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিন বছর আগেও এখানে কাচাপাকা ঘর থাকলেও দুর্নীতির এই বরপুত্রের হাতের ছোয়ায় পুরো এলাকা যেন বদলে গেছে। গড়েছেন ২০ শয্যার হাসপাতাল, বাবার নামে কমিউনিটি ক্লিনিক, ফাউন্ডেশন, সুপেয় পানির হাউজ। এলাকায় দানবীর হিসেবে জানান দিচ্ছে অনেক কিছু।

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক এমপি কর্নেল ফারুক খানের ভোট ডাকাতির অন্যতম কারিগর সচিব তিনি। স্থানীয় রাজনৈতিক বলয়েও ছিলো তার প্রভাব।

চাকুরী জীবনে যখন যেখানে গিয়েছেন গড়েছেন সম্পদ। চট্টগ্রামে স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট কিনেছেন। ২০১০ থেকে ২০১৩ সালে বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে থাকাকালীন কক্সবাজারে আরো একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে জানা যায়।

সচিব
ছবি: সংগৃহীত

সচিবের বাড়ি পার হতেই বিতর্কিত ব্যাবসায়ী কে এম মাসুদুর রহমানের নির্মাণাধীন বহুতল ভবন। বলা হয় সচিবের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের দেখভালের দায়িত্ব ছিলো বিশ্বস্ত মাসুদের হাতে। সচিবের ঘনিষ্ঠতায় মাসুদ ঠিকাদারিতে প্রভাব খাঁটিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে সকল কাজ চলতো তাদের ইশারায়। ক্যাসিনো কেলেংকারীতে জোরেসোরে নাম ডাক চাউর হলে প্রথমবারের মতো মাসুদ ও তার পার্টনার সচিব সিরাজুল হকের সম্পদ সামনে আসতে শুরু করে।

উত্তরার আশুলিয়া বেরিবাধ রোডে সেবা ফিলিং স্টেশন করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সড়ক ও জনপদের সরকারী জমি দখল করে সচিব সিরাজুল ইসলাম খান উদ্বোধন করেন এই তেল পাম্প। এছাড়াও গাজীপুরের হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিমে পিরাজালি নামক এলাকায় প্রায় আড়াইশ একর জমিতে মাসুদ স্টিল ডিজাইন বিডি লিমিটেড নামে রডের কোম্পানির অলিখিত বড়ো বিনিয়োগ রয়েছে তার। সেবা গ্রীন লাইন নামের পরিবহন ব্যবসাসহ হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া মাসুদ একসময় সচিবের আস্থাভাজন সহচর থাকলেও সম্প্রতি সম্পদ নিয়ে বেড়েছে দুরত্ব।

অভিযোগ রয়েছে, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের দাসের হাটে সরকারি জায়গাসহ বাচ্চাদের খেলার মাঠ দখল করে এবং পূজা মন্ডপের জায়গা দখলের অভিযোগ রয়েছে।

গোপালগঞ্জ খুলনা হাইওয়ে রোডের ভ্রমরগ্রাম, সালিনা বক্সা, মুকসুদপুরে সেবা গ্রীন মডেল ফিলিং এন্ড অটো গ্যাস স্টেশন নির্মানে কোটি টাকা কোথা থেকে আসলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এসব বিষয়ে মুখ খুললে বিপদ আছে, এমন ভয়ে মুখ খুলছে না কেউই।

এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের দাবী জ্ঞাত আয় বহির্ভূত এমন সম্পদ অর্জন সঠিক পথে করা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ খোঁজ নিলে মিলবে আরো সম্পদ।