ঢাকা ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তালিকায় আরো ২৫ জন

বহিষ্কার হচ্ছেন ওবায়দুল কাদের!

উৎপল দাস
  • সময় ০৮:১৫:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪
  • / 283

ওবায়দুল কাদের

নানা সময়ে অরাজনৈতিক হুংকার দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হ্যাট্রিক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চরমভাবে সমালোচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সোনালী দু:সময়ের নেতা হিসাবে তার অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে খোদ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই তিনি ছিলেন চরম বিতর্কিত এবং অহংকারী। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ওবায়দুল কাদের বহিষ্কার হচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের।

বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে তারা বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেতার নাম বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখা হাসিনা। তার কাছে ইতিমধ্যেই বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। তিনিও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো মোকাবিলা করতে হলে; দলের মধ্যেই শুদ্ধি অভিযান জরুরি। হাইব্রিড মুক্ত আওয়ামী লীগ নিয়েই ফিরতে হবে ঐতিহ্যবাহী দলটিকে। দেশত্যাগী শেখ হাসিনাকে গত দেড় দশকে একটি অশুভ সিন্ডিকেট ঘিরে রেখেছিল। যার প্রধান হোতা ছিলেন ওবায়দুল কাদের। তাই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাওয়া হিসাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে যেকোনো মুহুর্তেই বহিষ্কার করা হতে পারে বলে জানিয়েছে দলটির একাধিক বিশস্ত সূত্র।

বর্তমানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কোথায় আছেন, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা ও রহস্য। এ অবস্থায় তাকে কিভাবে বহিষ্কার করা যায়, সেটি নিয়ে ভাবছে দলের হাই কমান্ড। এমনটাও দাবি করেছেন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে জন মানুষের দল। সেখানে দলের সাধারণ সম্পাদককে যদি ‘স্যার’ বলে সম্ভোধন করতে হয়; এটা আমাদের জন্য লজ্জার এবং বিব্রতকর। তিনি নানা সময়ে বেফাঁস কথা বলে দলকে বিপদে ফেলেছেন। আশা করছি, আমাদের নেত্রী (বঙ্গবন্ধু কন্যা) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং দেশের কল্যাণে এমন কাউকে বেছে নিবেন, যার গ্রহণযোগ্যতা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত রয়েছে। কোনো ব্যবসায়িক গোষ্ঠী বা অন্য কারো পরামর্শে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করবেন না।

সর্বশেষ ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের এমন পতনের আগেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে এককভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ বানিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তার নিদের্শনা পেয়েই বেপোরোয়া হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কতিপয় অতি উৎসাহী নেতা-কর্মী। যার খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে।

ফুলের বাগানে ওবায়দুল কাদের
ফুলের বাগানে ওবায়দুল কাদের

গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের অধ:পতনের নেপথ্যে খলনায়কদের মধ্যে ওবায়দুল কাদেরকেই শীর্ষে রাখছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। রমনীমোহন ওবায়দুল কাদেরদের বিরুদ্ধে নানা আর্থিক কেলেংকারির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সরব উপস্থিতি দেশের সাধারণ মানুষ থেকে আওয়ামী লীগেরই অনেক নেতাকর্মীকে বিনোদনের খোরাক দিতো।

তবে তার পূর্বসুরীদের মধ্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আব্দুল জলিল, জিল্লুর রহমানকে এদেশের মানুষ ‘ভাই’ বলেই সম্ভোধন করতেন। তারা ছিলেন রাজনৈতিকভাবে প্রজ্ঞাবান এবং বিরোধী দলের প্রতি সহনশীল। রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার এবং ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতকর্তা অবলম্বন করতেন জিল্লুর রহমান থেকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ আরো বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা।

পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় তাকে ‘কাউয়া’ হিসাবে স্লোগান শুনতে হয়েছিল তৃণমূলের কাছ থেকে। মজার তথ্য, তিনি গত বছর বলেছিলেন; আমরা এই দেশে জন্মেছি, এই দেশে মরব, পালাব না। কোথায় পালাব! পালাব না, প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠব’—বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি এ কথা বলেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কোথায়? তিনি দেশে, নাকি বিদেশে? এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্যসহ নানা আলোচনা রয়েছে। অবশ্য এর মধ্যেই ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগে নিজের সাংগঠনিক অবস্থান হারিয়েছেন। এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেওয়া না হলেও তার নামে দলের কোনো বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে না। এ থেকেই তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভাবতে শুরু করেছেন, এখানেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সোনালী দু:সময়ের নেতা ওবায়দুল কাদেরের রাজনৈতিক জীবনের ইতি ঘটেছে।

নিজ দলের মধ্যে তিনি আরেকটি উপদল করেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার দলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কমপক্ষে ২২-২৫ জন রয়েছেন। তাদের বিষয়েও নতুন করে ভাবতে হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ৫ আগস্ট পরবর্তী আওয়ামী লীগের এখনো পর্যন্ত কোনো মুখপাত্র আসেনি। এ নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ।

উল্লেখ্য, ৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যে কয়েকজন মৃদুভাষী, সৎ ও প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ ছিলেন; তাদের মধ্যে অন্যতম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র। ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং দলকে সামরিক শাসনের সংকট থেকে নেতৃত্ব দেন।

রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং ধৈর্যশীল নেতৃত্বের জন্য পরিচিত সৈয়দ আশরাফ চারবার কিশোরগঞ্জের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।

রমনী মোহন ওবায়দুল কাদের
রমনী মোহন ওবায়দুল কাদের

তাকে বিদায় করে আওয়ামী লীগ ওবায়দুল কাদেরকে পরপর তিন বার দলের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছিল, এই সিদ্ধান্তকে আত্নঘাতী হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন খোদ আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। ঘরোয়া আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, ওবায়দুল কাদেরকে তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক করার মতো কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না; কেন করা হয়েছিল, সেটা এখনো রহস্যময়। এমনকি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকেও আব্দুল হামিদ বলেছিলেন এই কথা, কিন্তু অদৃশ্য কোন কারণে ওবায়দুল কাদেরকেই দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল, সেটি এখন তৃণমূল জানতে চায়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী (চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক) তাদের কথাতেই নাকি ওবায়দুল কাদেরকে তৃতীয় বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল, বলে একাধিক সমর্থিত সূত্র জানিয়েছে বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে। গ্রুপটির নাম ধরেই আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, ব্যাংকিং খাতের লুটেরা এস আলম গ্রুপের কাছে আওয়ামী লীগ এক প্রকার জিম্মি হয়ে পরেছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি দলটি। যার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন।

আগামী পর্বে: আওয়ামী লীগের আরো ২৫ জন কেন্দ্রীয় নেতার কপাল পুড়ছে।

শেয়ার করুন

তালিকায় আরো ২৫ জন

বহিষ্কার হচ্ছেন ওবায়দুল কাদের!

সময় ০৮:১৫:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

নানা সময়ে অরাজনৈতিক হুংকার দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হ্যাট্রিক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চরমভাবে সমালোচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সোনালী দু:সময়ের নেতা হিসাবে তার অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে খোদ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই তিনি ছিলেন চরম বিতর্কিত এবং অহংকারী। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ওবায়দুল কাদের বহিষ্কার হচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের।

বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে তারা বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেতার নাম বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখা হাসিনা। তার কাছে ইতিমধ্যেই বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। তিনিও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো মোকাবিলা করতে হলে; দলের মধ্যেই শুদ্ধি অভিযান জরুরি। হাইব্রিড মুক্ত আওয়ামী লীগ নিয়েই ফিরতে হবে ঐতিহ্যবাহী দলটিকে। দেশত্যাগী শেখ হাসিনাকে গত দেড় দশকে একটি অশুভ সিন্ডিকেট ঘিরে রেখেছিল। যার প্রধান হোতা ছিলেন ওবায়দুল কাদের। তাই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাওয়া হিসাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে যেকোনো মুহুর্তেই বহিষ্কার করা হতে পারে বলে জানিয়েছে দলটির একাধিক বিশস্ত সূত্র।

বর্তমানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কোথায় আছেন, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা ও রহস্য। এ অবস্থায় তাকে কিভাবে বহিষ্কার করা যায়, সেটি নিয়ে ভাবছে দলের হাই কমান্ড। এমনটাও দাবি করেছেন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে জন মানুষের দল। সেখানে দলের সাধারণ সম্পাদককে যদি ‘স্যার’ বলে সম্ভোধন করতে হয়; এটা আমাদের জন্য লজ্জার এবং বিব্রতকর। তিনি নানা সময়ে বেফাঁস কথা বলে দলকে বিপদে ফেলেছেন। আশা করছি, আমাদের নেত্রী (বঙ্গবন্ধু কন্যা) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং দেশের কল্যাণে এমন কাউকে বেছে নিবেন, যার গ্রহণযোগ্যতা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত রয়েছে। কোনো ব্যবসায়িক গোষ্ঠী বা অন্য কারো পরামর্শে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করবেন না।

সর্বশেষ ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের এমন পতনের আগেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে এককভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ বানিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তার নিদের্শনা পেয়েই বেপোরোয়া হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কতিপয় অতি উৎসাহী নেতা-কর্মী। যার খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে।

ফুলের বাগানে ওবায়দুল কাদের
ফুলের বাগানে ওবায়দুল কাদের

গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের অধ:পতনের নেপথ্যে খলনায়কদের মধ্যে ওবায়দুল কাদেরকেই শীর্ষে রাখছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। রমনীমোহন ওবায়দুল কাদেরদের বিরুদ্ধে নানা আর্থিক কেলেংকারির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সরব উপস্থিতি দেশের সাধারণ মানুষ থেকে আওয়ামী লীগেরই অনেক নেতাকর্মীকে বিনোদনের খোরাক দিতো।

তবে তার পূর্বসুরীদের মধ্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আব্দুল জলিল, জিল্লুর রহমানকে এদেশের মানুষ ‘ভাই’ বলেই সম্ভোধন করতেন। তারা ছিলেন রাজনৈতিকভাবে প্রজ্ঞাবান এবং বিরোধী দলের প্রতি সহনশীল। রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার এবং ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতকর্তা অবলম্বন করতেন জিল্লুর রহমান থেকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ আরো বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা।

পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় তাকে ‘কাউয়া’ হিসাবে স্লোগান শুনতে হয়েছিল তৃণমূলের কাছ থেকে। মজার তথ্য, তিনি গত বছর বলেছিলেন; আমরা এই দেশে জন্মেছি, এই দেশে মরব, পালাব না। কোথায় পালাব! পালাব না, প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠব’—বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি এ কথা বলেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কোথায়? তিনি দেশে, নাকি বিদেশে? এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্যসহ নানা আলোচনা রয়েছে। অবশ্য এর মধ্যেই ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগে নিজের সাংগঠনিক অবস্থান হারিয়েছেন। এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেওয়া না হলেও তার নামে দলের কোনো বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে না। এ থেকেই তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভাবতে শুরু করেছেন, এখানেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সোনালী দু:সময়ের নেতা ওবায়দুল কাদেরের রাজনৈতিক জীবনের ইতি ঘটেছে।

নিজ দলের মধ্যে তিনি আরেকটি উপদল করেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার দলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কমপক্ষে ২২-২৫ জন রয়েছেন। তাদের বিষয়েও নতুন করে ভাবতে হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ৫ আগস্ট পরবর্তী আওয়ামী লীগের এখনো পর্যন্ত কোনো মুখপাত্র আসেনি। এ নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ।

উল্লেখ্য, ৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যে কয়েকজন মৃদুভাষী, সৎ ও প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ ছিলেন; তাদের মধ্যে অন্যতম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র। ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং দলকে সামরিক শাসনের সংকট থেকে নেতৃত্ব দেন।

রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং ধৈর্যশীল নেতৃত্বের জন্য পরিচিত সৈয়দ আশরাফ চারবার কিশোরগঞ্জের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।

রমনী মোহন ওবায়দুল কাদের
রমনী মোহন ওবায়দুল কাদের

তাকে বিদায় করে আওয়ামী লীগ ওবায়দুল কাদেরকে পরপর তিন বার দলের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছিল, এই সিদ্ধান্তকে আত্নঘাতী হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন খোদ আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। ঘরোয়া আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, ওবায়দুল কাদেরকে তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক করার মতো কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না; কেন করা হয়েছিল, সেটা এখনো রহস্যময়। এমনকি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকেও আব্দুল হামিদ বলেছিলেন এই কথা, কিন্তু অদৃশ্য কোন কারণে ওবায়দুল কাদেরকেই দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল, সেটি এখন তৃণমূল জানতে চায়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী (চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক) তাদের কথাতেই নাকি ওবায়দুল কাদেরকে তৃতীয় বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল, বলে একাধিক সমর্থিত সূত্র জানিয়েছে বাংলা অ্যাফেয়ার্সকে। গ্রুপটির নাম ধরেই আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, ব্যাংকিং খাতের লুটেরা এস আলম গ্রুপের কাছে আওয়ামী লীগ এক প্রকার জিম্মি হয়ে পরেছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি দলটি। যার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন।

আগামী পর্বে: আওয়ামী লীগের আরো ২৫ জন কেন্দ্রীয় নেতার কপাল পুড়ছে।