সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামি মহাসম্মেলনের নেপথ্যে কি?
- সময় ১২:০৩:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪
- / 198
সূর্য উঠার আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) ভোর থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হতে থাকেন আলেম-ওলামারা। তবে এই জমায়েতের পেছনে রয়েছে পুরোনো সেই তাবলিগ জামায়াতের বিভক্তির বিষয়টি।
গত কয়েক বছর ধরে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তবে সেখানে ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ নিয়ে সচিবালয়ে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষকে আলোচনায় ডাকলেও সভায় উপস্থিত হন মাওলানা সাদ পন্থীরা। অনুপস্থিত ছিলেন মাওলানা জুবায়ের পন্থীরা।
জানা গেছে, তাবলিগ ও দাওয়াত, মাদারেসে কওমিয়া এবং দ্বীনের হেফাজতের লক্ষ্যে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই ইসলামি মহাসম্মেলন হচ্ছে। সকাল ৯টায় এই সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ফজরের পরপরই রাজধানী অভিমুখে ছুটে আসেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। সূর্য আলো ছড়ানোর আগেই ভরে যায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী ময়দান।
গত রোববার এক বিবৃতিতে জানানো হয়, দাওয়াত ও তাবলিগ, মাদারেসে কওমিয়া এবং দ্বীনের হেফাজতের লক্ষ্যে ওলামা-মাশায়েখ বাংলাদেশের উদ্যোগে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ইসলামী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশের সর্বস্তরের ওলামা-মাশায়েখ ও জনতাকে সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সম্মেলনে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন আল্লামা শাহ মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, আল্লামা খলিল আহমাদ কাসেমী হাটহাজারী, আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, আল্লামা আব্দুল রহমান হাফেজ্জী, আল্লামা নুরুল ইসলাম, আদিব সাহেব হুজুর, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা রশিদুর রহমান, আল্লামা শাইখ জিয়াউদ্দিন, আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান, আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, ফরিদাবাদ, আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আবু তাহের নদভী, মাওলানা আরশাদ রহমানি, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুস্তাক আহমদ, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা আনোয়ারুল করীম, মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলী, মাওলানা মুফতি মনসুরুল হক, মাওলানা মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, তাবলিগের দুই পক্ষের জন্য ২০১৯ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিবার দ্বিতীয় পর্বে ইজতেমা করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। এবার তারা প্রথম পর্বে ইজতেমা করার দাবি জানান। তারই বিরোধিতা করে এই মহাসম্মেলনের ডাক দেন কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক আলেমরা।
এই ইসলামি মহাসম্মেলন থেকে আসতে পারে, নতুন কোনো ঘোষণা। তাবলিগ জামায়াতের মধ্যে দুই গ্রুপের চলমান বিভেদ কি আরো বাড়বে, নাকি তা প্রশমিত হবে, সেটা নিয়েই ভাবা হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখার সময় মহাসম্মেলন চলছে।
উল্লেখ্য, ১৯২০ সালে ভারতের মেওয়াত অঞ্চলে তাবলিগের মূল কার্যক্রম শুরু করেছিলেন মাওলানা ইলিয়াস। তাবলিগের কাজ সম্প্রসারিত হলে তিনি এলাকাভিত্তিক সম্মিলন বা ইজতেমার আয়োজন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৬ সালে মাওলানা আবদুল আজিজের প্রচেষ্টায় ঢাকার কাকরাইল মসজিদে প্রথমবারের মতো বার্ষিক ইজতেমা আয়োজিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাবলিগের বিশ্ব আমির মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী।
১৯৫৪ সালে ঢাকায় লালবাগ শাহি মসজিদ ও এর আশপাশের এলাকায় অনুষ্ঠিত বার্ষিক ইজতেমায় যোগ দেন প্রায় ৫ হাজার মুসল্লি। ১৯৫৪ সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পেও তাবলিগের ইজতেমা আয়োজিত হয়। ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আয়োজিত হয় আরও একটি ইজতেমার। ১৯৬০ সালে ঢাকার রমনা উদ্যানে অনুষ্ঠিত ইজতেমাই ছিল প্রথমবারের মতো বড় পরিসরের আয়োজন। যেখানে যোগ দিয়েছিলেন প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি। এর পর ১৯৬২ ও ১৯৬৫ সালে রমনায় বার্ষিক ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৬৫ সালে রমনায় অনুষ্ঠিত ইজতেমায় সমাগম হয় প্রায় ২৫ হাজার মুসল্লির। সেখানে স্থান সংকুলান সম্ভব হয়নি। ইজতেমায় মুসল্লি ও অনুসারীদের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদের তীরে পাগার গ্রামের খেলার মাঠে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় বার্ষিক ইজতেমা।
১৯৬৬ সালের পর থেকে প্রতিবছরই ‘কহর দরিয়া’খ্যাত তুরাগ নদের উত্তর পূর্ব তীর সংলগ্ন ডোবা-নালা, উঁচু-নিচু জমি মিলিয়ে ১৬০ একর জায়গার বিশাল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এ ইজতেমা, যা বিশ্ব ইজতেমা নামে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পরিচিত।