ভোল পাল্টাচ্ছেন অধ্যক্ষ সোহাগ, আ.লীগ নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা!
- সময় ০৫:০৭:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪
- / 249
নাম তার আনিসুর রহমান সোহাগ। রাজধানীর লালমাটিয়ায় অবস্থিত এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ তিনি। তার বিবিএ, এমবি থেকে শুরু করে প্রায় সকল সার্টিফিকেট ভুয়া। তার বিবিএ, এমবি ভুয়া সার্টিফিকেটের বিষয়ে কাজ করেছে শিক্ষা বোর্ড। ইউজিসি বোর্ডকে জানিয়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সময়ের সার্টিফিকেটের বৈধতা নেই।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে জাল সনদ এবং আয়কর নথিতে তার কোটি কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির খবরও প্রমানসহ বেড়িয়ে এসেছে গণমাধ্যমে। ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে তিনি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করছেন। নিজের জাল সনদের কথা স্বীকার করেছেন গণমাধ্যমের কাছে।
কারণ গত আমলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘জামাইয়ের বন্ধু’ পরিচয়ে বেপরোয়া ছিলেন তিনি। শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা অধিদদফতর, ইউজিসি কেউই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এখন নতুন প্রেক্ষাপটে আগের তথ্য লুুকিয়ে বর্তমান সরকারের কাছের দলগুলোর নেতাদের নিয়ে দাপট অব্যাহত রাখার কৌশল নিয়েছেন তিনি।
যে দলগুলোর নেতারা অনেকেই জানেন না তার আগের কর্মকান্ড। তার ওঠাবসা কাদের সঙ্গে ছিলো তাও জানেন না অনেকে। তবে এবার তার অতীত কর্মকান্ড সামনে আসছে। ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। বাংলা অ্যাফেয়ার্সের পাঠকদের জন্য আগের আমলে প্রভাবশালীদের সঙ্গে অভিযুক্ত এ অধ্যক্ষের ওঠাবসার কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো। অভিযোগের বিষয়ে আনিসুর রহমান সোহাগের সঙ্গে কয়েকদিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার স্কুলে কয়েক দফা গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
অফিস থেকে বলা হয়েছে, ‘স্যার ব্যস্ত মানুষ। বাইরে আছেন।’ এরপর কয়েকদিন ধরে তার সেলফোনে কল ও এসএমএস করা হলেও তিনি সারা দেননি। পরিচয় দিয়ে এসএমএস দিলে তিনি বিভিন্ন লোক দিয়ে রিপোর্ট না করার জন্য অনুরোধ করেন। এক অভিভাবক যিনি নিজেকে অধ্যক্ষের বন্ধু বলে পরিচয় দিয়ে রিপোর্ট না করার অনুরোধ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম অফিসে আসেন। বলেন, ‘সোহাগের বিরুদ্ধে রিপোর্ট না করলে সে আপনার সঙ্গে বসবেন। যা করা লাগুগ সে করবে এজন্য।’ তবে রিপোর্ট বন্ধ করা যাবেনা জানালে ওই অভিভাবক ফিরে যান।
আনিসুর রহমান সোহাগ বিপুল অঙ্কের টাকা গোপন করতে আয়কর নথিতে ঠিকানাও গোপন করেছেন। এছাড়া কোটি টাকা খরচ করে গ্রামের বাড়িতে করেছেন দোতলা বাড়ি। রাজধানীতে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের ২২’শ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ব্যক্তিগত গাড়ি, ২২ বিঘা জমিতে ‘যমুনা ব্রিকস’ নামে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ইটভাটা এবং পিলারস পাবলিকেশন্স নামে প্রকাশনীও আছে তার। অথচ ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া তেমন কিছুই উল্লেখ নেই আয়কর নথিতে। স্ত্রীর নামে টিআইএন থাকলেও সংশ্লিষ্ট সার্কেলে আয়কর দাখিলের তথ্য নেই।
বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ স্কুল থেকেই বছরে তিনি নেন প্রায় ৬০ লাখ টাকা। ২০২১ অর্থবছরের আয়কর নথিতে দেখানো হয়েছে আট লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে ৯ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ টাকা হলেও, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে আট লাখ ৯৬ হাজার টাকা। অথচ ২০২২ সালে ১১ লাখ ৮৮ হাজার টাকায় ৭৫ শতক জমি কিনেছেন বলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আয়কর নদিতে উল্লেখ করেছেন। মেঘনা ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় তার নিজের অ্যাকাউন্টে ৯০ লাখ টাকা লেনদেন হলেও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আরেক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট দাখিল করে লেনদেন দেখিয়েছেন মাত্র ১২শ’ টাকা।
ধানমন্ডি এলাকার সংশ্লিষ্ট ট্যাক্স সার্কেলে ব্যক্তিগত টিআইএন চালু করে সেটি ২০১৬ সালে সার্কেল-ও এ স্থানান্তর করেন। তবে এখন আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন সার্কেল-২৩১ এ। সেখানে ঢাবির কাঁটাবন মার্কেটের আর্ট অ্যান্ড গিফটের একটি দোকানকে বর্তমান ঠিকানা হিসাবে দেখানো হয়েছে। অথচ গত পাঁচ বছর ধরে স্থায়ীভাবে নিজের ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন এই আনিসুর রহমান সোহাগ।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, সার্কেল-২৭৭ এ তার আরেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এক্সপ্রিমেন্টাল এক্সপ্রেশন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব এক প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। আয়কর না দিতে ভুয়া অডিট রিপোর্ট দেখিয়ে সোহাগ নিজের স্বাক্ষর করা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্টেটমেন্টে উল্লেখ করেছেন ‘৩০ জুন ২০১৯’ পর্যন্ত ব্যবসা শুরু হয়নি। অথচ আইএফআইসি ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় থাকা এ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে ২০১৯ সালের আগে থেকে লেনদেন হয়েছে প্রায় ১৯ কোটি টাকা। ব্যবসার শুরু হতেই এ ব্যাংক হিসাবটি সোহাগের একক স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়েছে।