ঢাকা ০২:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেন্টমার্টিন নিয়ে বেকায়দায় ইউনূস প্রশাসন

বিশেষ প্রতিনিধি
  • সময় ১১:৩৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪
  • / 303

সেন্টমার্টিন দ্বীপ

বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, সেন্টমার্টিন। এর সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, ও জীববৈচিত্র দেশের পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু বর্তমানে এই ছোট্ট দ্বীপটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিগত সরকারের সময় থেকে বলা হচ্ছিল, যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিন লিজ নিতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের দায়িত্ব নেয়ার পর; সেন্টমার্টিন নিয়ে কিছু পদক্ষেপের কারনে সেই আলোচনা আবারো জোরেসোরে শুরু হয়েছে। নেতিবাচক সেই প্রচারণা ইউনূস প্রশাসনকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। দ্বীপের সার্বভৌমত্ব, পরিবেশ সংরক্ষণ, পর্যটনের ভারসাম্য বজায় রাখা – সবকিছুই যেন একটি জটিল গাঁথুনিতে বাঁধা পড়েছে। কী কারণে এমন সংকটে পড়তে হলো ইউনূস প্রশাসনকে? সেন্টমার্টিন শুধুই একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, বরং এটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অবস্থানে অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে বসে থাকা এই প্রবাল দ্বীপটি আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের একটি অধিকারভুক্ত অঞ্চল। সেন্টমার্টিনের ভৌগোলিক অবস্থান একে সামরিক ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

কিন্তু এ দ্বীপের কৌশলগত গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চিরস্থায়ী বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। য়ানমারের দাবি যে, সেন্টমার্টিন তাদের ভূখণ্ডের অংশ। এই দাবির ফলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বহু পুরনো। প্রায়ই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সেন্টমার্টিনের আশেপাশে টহল দিয়ে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।

সেন্টমার্টিনের পর্যটন শিল্প দেশের অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও, অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে দ্বীপটির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস হচ্ছে, সামুদ্রিক জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ছে। ইউনূস প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর তাই এই দ্বীপে পর্যটন সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ইউনূস প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানী ঢাকা ও সেন্টমার্টিন সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ করছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

সাম্প্রতিক এই জেটিটি ভেঙ্গে গেছে

এছাড়াও সাম্প্রতিক ঝুর্ণিঝড় দানার কারনে সেন্টমার্টিনের একমাত্র জাহাজ জেটি ভেঙ্গে গেছে। বন্ধ হয়ে রয়েছে স্থানীয়দের মাছ ধরাও। কেননা বিগত সরকারের শেষ সময় থেকেই সমুদ্রে বাংলাদেশী ট্রলার লক্ষ করে থেমে থেমে মিয়ানমারের গুলির ঘটনা ঘটছে। নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরও সে সমস্যা সমাধান হয়নি। এ নিয়েও স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। একদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় দ্বীপের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও।

এ নিয়ে ইউনূস প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোন ধরনের বিবৃতি বা প্রকাশ্য কোন মন্তব্য করা হয়নি। যা ‘সেন্টমার্টিন লীজ দেয়ার’ গুজব আরো তীব্র করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি প্যাসিফিকের মধ্যে ল্যান্ড ফোর্সেস টকসের একটি ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দাবি করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দেয়ার চুক্তি হয়ে গেছে। এ নিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ইউনূস প্রশাসনকে। এ অবস্থায় শনিবার ইউনূস প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এসবই গুজব। সেন্টমার্টিন দ্বীপ কোনো বিদেশি দেশের কাছে কোনো উদ্দেশ্যে লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের নেই।

শেয়ার করুন

সেন্টমার্টিন নিয়ে বেকায়দায় ইউনূস প্রশাসন

সময় ১১:৩৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, সেন্টমার্টিন। এর সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, ও জীববৈচিত্র দেশের পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু বর্তমানে এই ছোট্ট দ্বীপটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিগত সরকারের সময় থেকে বলা হচ্ছিল, যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিন লিজ নিতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের দায়িত্ব নেয়ার পর; সেন্টমার্টিন নিয়ে কিছু পদক্ষেপের কারনে সেই আলোচনা আবারো জোরেসোরে শুরু হয়েছে। নেতিবাচক সেই প্রচারণা ইউনূস প্রশাসনকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। দ্বীপের সার্বভৌমত্ব, পরিবেশ সংরক্ষণ, পর্যটনের ভারসাম্য বজায় রাখা – সবকিছুই যেন একটি জটিল গাঁথুনিতে বাঁধা পড়েছে। কী কারণে এমন সংকটে পড়তে হলো ইউনূস প্রশাসনকে? সেন্টমার্টিন শুধুই একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, বরং এটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অবস্থানে অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে বসে থাকা এই প্রবাল দ্বীপটি আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের একটি অধিকারভুক্ত অঞ্চল। সেন্টমার্টিনের ভৌগোলিক অবস্থান একে সামরিক ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

কিন্তু এ দ্বীপের কৌশলগত গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চিরস্থায়ী বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। য়ানমারের দাবি যে, সেন্টমার্টিন তাদের ভূখণ্ডের অংশ। এই দাবির ফলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বহু পুরনো। প্রায়ই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সেন্টমার্টিনের আশেপাশে টহল দিয়ে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।

সেন্টমার্টিনের পর্যটন শিল্প দেশের অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও, অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে দ্বীপটির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস হচ্ছে, সামুদ্রিক জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ছে। ইউনূস প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর তাই এই দ্বীপে পর্যটন সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ইউনূস প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানী ঢাকা ও সেন্টমার্টিন সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ করছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

সাম্প্রতিক এই জেটিটি ভেঙ্গে গেছে

এছাড়াও সাম্প্রতিক ঝুর্ণিঝড় দানার কারনে সেন্টমার্টিনের একমাত্র জাহাজ জেটি ভেঙ্গে গেছে। বন্ধ হয়ে রয়েছে স্থানীয়দের মাছ ধরাও। কেননা বিগত সরকারের শেষ সময় থেকেই সমুদ্রে বাংলাদেশী ট্রলার লক্ষ করে থেমে থেমে মিয়ানমারের গুলির ঘটনা ঘটছে। নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরও সে সমস্যা সমাধান হয়নি। এ নিয়েও স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। একদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় দ্বীপের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও।

এ নিয়ে ইউনূস প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোন ধরনের বিবৃতি বা প্রকাশ্য কোন মন্তব্য করা হয়নি। যা ‘সেন্টমার্টিন লীজ দেয়ার’ গুজব আরো তীব্র করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি প্যাসিফিকের মধ্যে ল্যান্ড ফোর্সেস টকসের একটি ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দাবি করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দেয়ার চুক্তি হয়ে গেছে। এ নিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ইউনূস প্রশাসনকে। এ অবস্থায় শনিবার ইউনূস প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এসবই গুজব। সেন্টমার্টিন দ্বীপ কোনো বিদেশি দেশের কাছে কোনো উদ্দেশ্যে লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের নেই।