ঢাকা ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আ’লীগের দায়িত্বশীলদের বৃহৎ অংশ আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন

গোলাম রাব্বানী
  • সময় ০৮:২৭:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪
  • / 1774

সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সাবেক সাধারণ সম্পাদক , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৃহৎ অংশ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে দেশ চালাতে ও নিজেদের আখের গোছাতে গিয়ে সংগঠন ও তৃণমূল নেতার-কর্মীদের কথা যেন বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলেন ! দলের সাংগঠনিক স্ট্রাকচার ফাঁপা রেখে আত্মঘাতী কাজে মহাব্যস্ত সময় পার করা সেই মহারথীরা, এই চরম সংকটকালেও যথারীতি ‘শূন্য ভূমিকায়’। অতীতে বিরোধী দলের আওয়ামী লীগ ছিলো লড়াই, সংগ্রাম, সংকটে ইস্পাত-দৃঢ়! কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেত্রীবৃন্দ রাজপথে থেকে হামলা, মামলা, গ্রেফতার জেল-জুলুম সহ্য করেও সময়োচিত কর্মসূচি, প্রতিবাদ, বিবৃতি দিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মী, সমর্থকদের চাঙ্গা রেখেছেন, যেকোনো বাধা-বিপত্তি মোকাবিলায় প্রচন্ড সাহস যুগিয়েছেন।

অথচ বর্তমান সুবিধাবাদী নেতৃত্ব উপার্জিত সম্পদ ও নিজেকে রক্ষায় গ্রেফতার, বিচার এড়াতে সবাই দেশ ছাড়লেন, ৩ মাস অতিবাহিত হলেও চলমান জুলুম নির্যাতন, উপর্যুপরি মামলা, হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের শিকার হওয়া লাখো তৃণমূল নেতা-কর্মী খোঁজ খবর নেয়া, আইনী সহায়তা প্রদান বা প্রত্যাশিত কোনপ্রকার সাপোর্ট দিচ্ছেন না। এমনকি দেশ ও মানুষের পক্ষে কথা বলার কতশত ন্যায়সঙ্গত ইস্যু থাকলেও কেউ নূন্যতম একটা বিবৃতি, প্রতিবাদ বা আওয়াজ তোলারও সৎ সাহস, মানসিক বা নৈতিক জোর দেখাতে পারলেন না। যার দরুণ আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মী ও সমর্থকগণ অত্যন্ত বিচলিত, ক্ষুব্ধ, হতাশ, মর্মাহত।

এই স্বার্থান্ধ নেতৃত্ব বিগত সময়ে দল ও দেশের নিয়ন্ত্রক সেজে ব্যক্তিগত সুবিধায় ‘ম্যানেজ’ হয়ে নিজ প্রভাব-বলয় ভারী করতে পরীক্ষিত, সাংগঠনিক দক্ষ, কর্মীবান্ধব, জনপ্রিয়দের কোনঠাসা ও দূরে রেখেছেন। মোসাহেব, নায়িকা-গায়িকা, ব্যবসায়ী, অরাজনৈতিকদের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে সংগঠন ও সরকারের রাজনৈতিক চরিত্রকে ক্রমশ অগ্রহণযোগ্য ও দুর্বল করেছেন। নিজেদের বলয় ও রাজতন্ত্রের হুকুম বলবত রাখতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মতো শক্তিশালী সংগঠন, দুর্বল থেকে দুর্বলতর করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে! জনৈক পারিবারিক কোটার পরাক্রমশালী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে চরম দৃষ্টিকটুভাবে কুক্ষিগত ও নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে শক্তিশালী প্রতিটা ইউনিটকে দুর্বল, অকার্যকর ও লেজেগোবরে করে ফেলেছেন। অথচ অশান্ত জুলাইয়ে একদিন তাকে না রাজপথে দেখলাম, না বিগত ৩ মাসে কোন দিকনির্দেশনায়!

আমাদের পার্টির সাধারণ সম্পাদক প্রায় প্রতিদিন নিয়ম করে ধানমণ্ডি পার্টি অফিসে আসতেন, প্রটোকল নিতেন, চা-বিস্কুট খেয়ে আজাইরা গালগল্প করে আবার চলে যেতেন। কোনদিন দেখলাম বা শুনলাম না, তিনি কোন জেলা, উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক অবস্থা, সমস্যা ও সমাধান নিয়ে নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করছেন, দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। এমনকি উদ্ভুত সংকটে আদর্শিক টানে শত শত সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মী ধানমন্ডি ও গুলিস্তান পার্টি অফিসে ছুটে এসেছেন, কঠিন সময়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে একটু সঠিক দিকনির্দেশনা পেতে, কিন্তু সেক্রেটারি বা অন্যকোন কেন্দ্রীয় নেতা এক মিনিটের জন্যও কাউকে ডেকে, উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে কোন মতবিনিময়, শলাপরামর্শ করেন নাই বা তারা নিজেরাও সমঝোতা, সমাধানের কোন উদ্যোগ নেন নাই! উল্টো, সেক্রেটারি সাহেব আন্দোলনকারীদের ছাত্রলীগ দেখবে বলে বাস্তবতা বিবর্জিত উস্কানি দিয়ে ছাত্রলীগকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে একদম জনসম্মুখে ভিলেন বানালেন!

বাস্তবতা হলো, আমাদের দলের ভেতরেই কোনরকম গনতান্ত্রিক চর্চা কিংবা তেমন পরিবেশ ছিলো নাহ! বলা বাহুল্য, শারীরিকভাবে অসুস্থ, রূক্ষ মেজাজী ও প্রায় তৃণমূল বিচ্ছিন্ন একজন মানুষকে একই সাথে ব্যস্ত মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব ও টানা ৩ বার পার্টির সেক্রেটারি বানানোটা নিছকই ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো! তেমনি সালমান এফ রহমান বা আবদুস সোবহান গোলাপের মতো বিতর্কিত কাউকে নেত্রীর পাশে রাখা, শেখ পরিবার সংশ্লিষ্ট সবাই রাজা আর বাকি সবাই প্রজাসুলভ পারিপার্শ্বিক পটভূমি সৃষ্টি, এস আলমকে ব্যাংক লুট ও অর্থ পাচারের ওপেন সিক্রেট লাইসেন্স দেয়া, অতিরিক্ত আমলা ও প্রশাসন নির্ভরতা- এমন অনেক জ্ঞাত-অজ্ঞাত ভুলেই জনগণের কাছে ভুল বার্তা গেছে!

আমরা যদি না বুঝি, বা জেনেবুঝেও সজ্ঞানে এড়িয়ে যাই- আমাদের সমস্যা কোথায়, কোথায়, তাহলে প্রত্যাশিত সমাধান মেলা ভার! বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে একটি মানব শরীর ভাবুন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে আদর্শিক ও নৈতিক অযত্ন-অবহেলায় যে শরীরে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, গণতন্ত্রহীনতা, জন ও কর্মীবিচ্ছিন্নতার দগদগে ঘা হয়েছে, যে ঘা দৃশ্যমান দেখে আওয়ামী লীগকে এককালে মন থেকে সমর্থন ও পছন্দ করা মানুষও সংক্রমণের ভয়ে ও পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় সে শরীরের কাছে ঘেঁষছে নাহ। যখন সাধারণ মানুষ দেখবে, আমরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে সেই ঘা গুলোর চিহ্নিত করে প্রতিনিয়ত ড্রেসিং করছি, প্রয়োজনীয় মেডসিন লাগাচ্ছি, যত্ন নিচ্ছি এবং ধীরে ধীরে ক্ষত সেরে উঠছে তখন সাহস করে, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা নিয়ে আবার সবাই কাছে আসবে এবং আমাদের পাল্লা প্রতিনিয়ত ভারী হবে! নিজেদের ভুলগুলো অনুধাবন করে পর্যায়ক্রমে তা শুদ্ধ করার প্রচেষ্টা না থাকলে কেবল বিরোধী গোষ্ঠীর ব্যর্থতার গল্প বলে, তুলনামূলক মন্দের ভালো হয়ে, এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে না। এটাই বাস্তবতা!

সবচেয়ে খারাপ সময়ই সর্বাধিক শক্তিশালী দৃঢ় সত্ত্বার জন্ম দেয়। সময় এসেছে অনুশোচনা, অনুতাপ ও পরিশুদ্ধির! অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সকল ব্যর্থতা, দুর্নীতি, অন্যায়-অনিয়মের জন্য জাতির কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করে আক্ষরিক অর্থে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে নতুনভাবে আগানোর। আমাদের সিনিয়র নীতিনির্ধারকদের অখণ্ড অবসর- এই সময়টা কাজে লাগিয়ে সবার আগে শীর্ষ নেতৃত্বকে বিগত ১৬ বছরে নিজেদের অন্যায় ও ভুলত্রুটির আত্মসমালোচনা করে অন্তরে আত্মশুদ্ধির বোধদয় জাগ্রত করতে হবে।

আর আগামীতে তওবা করে সকল লবিং, স্বজনপ্রীতি, আর্থিক লেনদেন ভুলে পরীক্ষিত সাবেক ছাত্রনেতা, অদম্য তরুণ, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী, ঐতিহ্যবাহী বড় বংশীয় ও স্বচ্ছ উপার্জনে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলদের প্রাধান্য দিতে হবে। সংগঠন শক্তিশালী করতে যেকোনো পর্যায়ের নেতৃত্ব নির্বাচনে স্থানীয় ‘জনসাধারণ ও নেতা-কর্মী’দের কাছে অবস্থান ও গ্রহণযোগ্যতাই মূল বিবেচ্য হওয়া আবশ্যক। আমরা তৃণমূল নেতা-কর্মীরা কোন অবস্থাতেই আর নিষ্ক্রিয়-অক্ষম, দুর্নীতিবাজ, বিতর্কিত, জন ও কর্মীবিচ্ছিন্ন এবং শেখ বা অন্য কোন পারিবারিক কোটার চাপিয়ে দেয়া অগণতান্ত্রিক নেতৃত্ব কোন পর্যায়েই মানবো না! দল বাঁচাতে এইটাই হোক আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও শপথ!

লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি
সাবেক সাধারণ সম্পাদক , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)

শেয়ার করুন

আ’লীগের দায়িত্বশীলদের বৃহৎ অংশ আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন

সময় ০৮:২৭:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৃহৎ অংশ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে দেশ চালাতে ও নিজেদের আখের গোছাতে গিয়ে সংগঠন ও তৃণমূল নেতার-কর্মীদের কথা যেন বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলেন ! দলের সাংগঠনিক স্ট্রাকচার ফাঁপা রেখে আত্মঘাতী কাজে মহাব্যস্ত সময় পার করা সেই মহারথীরা, এই চরম সংকটকালেও যথারীতি ‘শূন্য ভূমিকায়’। অতীতে বিরোধী দলের আওয়ামী লীগ ছিলো লড়াই, সংগ্রাম, সংকটে ইস্পাত-দৃঢ়! কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেত্রীবৃন্দ রাজপথে থেকে হামলা, মামলা, গ্রেফতার জেল-জুলুম সহ্য করেও সময়োচিত কর্মসূচি, প্রতিবাদ, বিবৃতি দিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মী, সমর্থকদের চাঙ্গা রেখেছেন, যেকোনো বাধা-বিপত্তি মোকাবিলায় প্রচন্ড সাহস যুগিয়েছেন।

অথচ বর্তমান সুবিধাবাদী নেতৃত্ব উপার্জিত সম্পদ ও নিজেকে রক্ষায় গ্রেফতার, বিচার এড়াতে সবাই দেশ ছাড়লেন, ৩ মাস অতিবাহিত হলেও চলমান জুলুম নির্যাতন, উপর্যুপরি মামলা, হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের শিকার হওয়া লাখো তৃণমূল নেতা-কর্মী খোঁজ খবর নেয়া, আইনী সহায়তা প্রদান বা প্রত্যাশিত কোনপ্রকার সাপোর্ট দিচ্ছেন না। এমনকি দেশ ও মানুষের পক্ষে কথা বলার কতশত ন্যায়সঙ্গত ইস্যু থাকলেও কেউ নূন্যতম একটা বিবৃতি, প্রতিবাদ বা আওয়াজ তোলারও সৎ সাহস, মানসিক বা নৈতিক জোর দেখাতে পারলেন না। যার দরুণ আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মী ও সমর্থকগণ অত্যন্ত বিচলিত, ক্ষুব্ধ, হতাশ, মর্মাহত।

এই স্বার্থান্ধ নেতৃত্ব বিগত সময়ে দল ও দেশের নিয়ন্ত্রক সেজে ব্যক্তিগত সুবিধায় ‘ম্যানেজ’ হয়ে নিজ প্রভাব-বলয় ভারী করতে পরীক্ষিত, সাংগঠনিক দক্ষ, কর্মীবান্ধব, জনপ্রিয়দের কোনঠাসা ও দূরে রেখেছেন। মোসাহেব, নায়িকা-গায়িকা, ব্যবসায়ী, অরাজনৈতিকদের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে সংগঠন ও সরকারের রাজনৈতিক চরিত্রকে ক্রমশ অগ্রহণযোগ্য ও দুর্বল করেছেন। নিজেদের বলয় ও রাজতন্ত্রের হুকুম বলবত রাখতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মতো শক্তিশালী সংগঠন, দুর্বল থেকে দুর্বলতর করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে! জনৈক পারিবারিক কোটার পরাক্রমশালী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে চরম দৃষ্টিকটুভাবে কুক্ষিগত ও নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে শক্তিশালী প্রতিটা ইউনিটকে দুর্বল, অকার্যকর ও লেজেগোবরে করে ফেলেছেন। অথচ অশান্ত জুলাইয়ে একদিন তাকে না রাজপথে দেখলাম, না বিগত ৩ মাসে কোন দিকনির্দেশনায়!

আমাদের পার্টির সাধারণ সম্পাদক প্রায় প্রতিদিন নিয়ম করে ধানমণ্ডি পার্টি অফিসে আসতেন, প্রটোকল নিতেন, চা-বিস্কুট খেয়ে আজাইরা গালগল্প করে আবার চলে যেতেন। কোনদিন দেখলাম বা শুনলাম না, তিনি কোন জেলা, উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক অবস্থা, সমস্যা ও সমাধান নিয়ে নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করছেন, দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। এমনকি উদ্ভুত সংকটে আদর্শিক টানে শত শত সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মী ধানমন্ডি ও গুলিস্তান পার্টি অফিসে ছুটে এসেছেন, কঠিন সময়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে একটু সঠিক দিকনির্দেশনা পেতে, কিন্তু সেক্রেটারি বা অন্যকোন কেন্দ্রীয় নেতা এক মিনিটের জন্যও কাউকে ডেকে, উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে কোন মতবিনিময়, শলাপরামর্শ করেন নাই বা তারা নিজেরাও সমঝোতা, সমাধানের কোন উদ্যোগ নেন নাই! উল্টো, সেক্রেটারি সাহেব আন্দোলনকারীদের ছাত্রলীগ দেখবে বলে বাস্তবতা বিবর্জিত উস্কানি দিয়ে ছাত্রলীগকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে একদম জনসম্মুখে ভিলেন বানালেন!

বাস্তবতা হলো, আমাদের দলের ভেতরেই কোনরকম গনতান্ত্রিক চর্চা কিংবা তেমন পরিবেশ ছিলো নাহ! বলা বাহুল্য, শারীরিকভাবে অসুস্থ, রূক্ষ মেজাজী ও প্রায় তৃণমূল বিচ্ছিন্ন একজন মানুষকে একই সাথে ব্যস্ত মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব ও টানা ৩ বার পার্টির সেক্রেটারি বানানোটা নিছকই ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো! তেমনি সালমান এফ রহমান বা আবদুস সোবহান গোলাপের মতো বিতর্কিত কাউকে নেত্রীর পাশে রাখা, শেখ পরিবার সংশ্লিষ্ট সবাই রাজা আর বাকি সবাই প্রজাসুলভ পারিপার্শ্বিক পটভূমি সৃষ্টি, এস আলমকে ব্যাংক লুট ও অর্থ পাচারের ওপেন সিক্রেট লাইসেন্স দেয়া, অতিরিক্ত আমলা ও প্রশাসন নির্ভরতা- এমন অনেক জ্ঞাত-অজ্ঞাত ভুলেই জনগণের কাছে ভুল বার্তা গেছে!

আমরা যদি না বুঝি, বা জেনেবুঝেও সজ্ঞানে এড়িয়ে যাই- আমাদের সমস্যা কোথায়, কোথায়, তাহলে প্রত্যাশিত সমাধান মেলা ভার! বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে একটি মানব শরীর ভাবুন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে আদর্শিক ও নৈতিক অযত্ন-অবহেলায় যে শরীরে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, গণতন্ত্রহীনতা, জন ও কর্মীবিচ্ছিন্নতার দগদগে ঘা হয়েছে, যে ঘা দৃশ্যমান দেখে আওয়ামী লীগকে এককালে মন থেকে সমর্থন ও পছন্দ করা মানুষও সংক্রমণের ভয়ে ও পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় সে শরীরের কাছে ঘেঁষছে নাহ। যখন সাধারণ মানুষ দেখবে, আমরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে সেই ঘা গুলোর চিহ্নিত করে প্রতিনিয়ত ড্রেসিং করছি, প্রয়োজনীয় মেডসিন লাগাচ্ছি, যত্ন নিচ্ছি এবং ধীরে ধীরে ক্ষত সেরে উঠছে তখন সাহস করে, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা নিয়ে আবার সবাই কাছে আসবে এবং আমাদের পাল্লা প্রতিনিয়ত ভারী হবে! নিজেদের ভুলগুলো অনুধাবন করে পর্যায়ক্রমে তা শুদ্ধ করার প্রচেষ্টা না থাকলে কেবল বিরোধী গোষ্ঠীর ব্যর্থতার গল্প বলে, তুলনামূলক মন্দের ভালো হয়ে, এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে না। এটাই বাস্তবতা!

সবচেয়ে খারাপ সময়ই সর্বাধিক শক্তিশালী দৃঢ় সত্ত্বার জন্ম দেয়। সময় এসেছে অনুশোচনা, অনুতাপ ও পরিশুদ্ধির! অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সকল ব্যর্থতা, দুর্নীতি, অন্যায়-অনিয়মের জন্য জাতির কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করে আক্ষরিক অর্থে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে নতুনভাবে আগানোর। আমাদের সিনিয়র নীতিনির্ধারকদের অখণ্ড অবসর- এই সময়টা কাজে লাগিয়ে সবার আগে শীর্ষ নেতৃত্বকে বিগত ১৬ বছরে নিজেদের অন্যায় ও ভুলত্রুটির আত্মসমালোচনা করে অন্তরে আত্মশুদ্ধির বোধদয় জাগ্রত করতে হবে।

আর আগামীতে তওবা করে সকল লবিং, স্বজনপ্রীতি, আর্থিক লেনদেন ভুলে পরীক্ষিত সাবেক ছাত্রনেতা, অদম্য তরুণ, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী, ঐতিহ্যবাহী বড় বংশীয় ও স্বচ্ছ উপার্জনে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলদের প্রাধান্য দিতে হবে। সংগঠন শক্তিশালী করতে যেকোনো পর্যায়ের নেতৃত্ব নির্বাচনে স্থানীয় ‘জনসাধারণ ও নেতা-কর্মী’দের কাছে অবস্থান ও গ্রহণযোগ্যতাই মূল বিবেচ্য হওয়া আবশ্যক। আমরা তৃণমূল নেতা-কর্মীরা কোন অবস্থাতেই আর নিষ্ক্রিয়-অক্ষম, দুর্নীতিবাজ, বিতর্কিত, জন ও কর্মীবিচ্ছিন্ন এবং শেখ বা অন্য কোন পারিবারিক কোটার চাপিয়ে দেয়া অগণতান্ত্রিক নেতৃত্ব কোন পর্যায়েই মানবো না! দল বাঁচাতে এইটাই হোক আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও শপথ!

লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি
সাবেক সাধারণ সম্পাদক , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)