গ্রীসের মন্দির থেকে প্যারিসের মাঠে অলিম্পিক!
- সময় ১২:২৩:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪
- / 259
উৎসব আর ভালোবাসার শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা উঠলো ৩৩তম অলিম্পিকের। প্যারিসের প্রাণ খ্যাত সেইন নদীতে নজরকাড়া নৌ প্যারেডের মধ্য দিয়ে শুক্রবার শুরু হয় জমকালো এই আয়োজন।
এই প্রথম স্টেডিয়ামের বাইরে অনুষ্ঠিত হলো ইতিহাস গড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আর বৃষ্টিস্নাত প্যারিসের বর্ণিল এই আয়োজনে মাতলো গোটা রাজধানী। আর এ জন্য ফরাসিদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ১০০ বছর। এ নিয়ে তৃতীয়বার অলিম্পিক গেমসের আয়োজন করে প্যারিস। ১৯০০ সালের পর ১৯২৪ সালে অলিম্পিক গেমস হয়েছিল দেশটিতে।
প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিয়া শহরের একটি মন্দির থেকে ধর্মীয় উৎসব হিসেবে শুরু হওয়া একটি ছোট ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আজকের দিনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসরে পরিণত হয়েছে। অলিম্পিকের এই বিশাল বিশাল আয়োজন, লাখ লাখ দর্শক কিংবা এতো এতো শোরগোল এর কিছুই কিন্তু ছিলো না শুরুতে। শুরুটা ছিলো এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে।
গ্রিক পূরাণ মতে, দেবতা জিউস তার পিতা ক্রোনাস পৃথিবী দখলের আনন্দে এক দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। এরপর থেকেই সেই ঘটনার স্মরণে প্রতি বছরই দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন দেবতা জিউস।
আবার শোনা যায় খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত গ্রীসের বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিবাদকে থামানো জন্য জিউস ও তাঁর ছেলে হেরাক্লিস বা হারকিউলিস একটি উৎসব শুরু করেন। উৎসব চলাকালে রাজ্যগুলোর মধ্যে থাকা সব ধরনের দ্বন্দ্ব স্থগিত থাকত। এটি অলিম্পিক শান্তি বা অলিম্পিক যুদ্ধবিরতি নামে পরিচিত ছিল।
ইতিহাসে প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রায় তিন হাজার বছর আগে খ্রিষ্টপূর্ব ৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয়। রাজা জিউসের সম্মানার্থে পশ্চিম গ্রীসের অলিম্পিয়া পাহাড়ের পাদদেশে জিউসের মন্দিরে হয়েছিল প্রাচীন যুগের অলিম্পিক। যা প্রতি চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হতো। শুরুতে দৌড়, মুষ্টিযুদ্ধ, মল্লযুদ্ধ ইত্যাদি খেলা অন্তর্ভুক্ত ছিলো অলিম্পিকে।
খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ ও পঞ্চম শতাব্দীর পর রোমান সম্রাট থিওডোসিয়াস ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে খ্রিষ্টধর্মকে প্রতিষ্ঠার জন্য অলিম্পিক উৎসব বন্ধ করে দেন তারা। কেননা তারা
প্যাগান আচার-অনুষ্ঠানকে পছন্দ করতেন না। ৩৩৯ খ্রিস্টাব্দে মতান্তরে ৪২৬ খ্রিস্টাব্দে পুরোপরি বন্ধ হয়ে যায় অলিম্পিক খেলা। মেয়েদের জন্য এই খেলা নিষিদ্ধ ছিলো।
প্রায় পনেরশ বছর নিষিদ্ধ থাকার পর ১৭শ শতাব্দীর দিকে ইংল্যান্ডে শুরু হয় কোটসউল্ড গেমস বা কোটসউল্ড অলিম্পিক গেমস। গেমসের আয়োজক ছিলেন রবার্ট ডোভার নামে এক ব্রিটিশ আইনজীবী। এই ঘটনাকে অলিম্পিকের সূচনার অভ্যুদয় হিসেবে মনে করা হয়।
এরপর ফ্রান্সে ১৭৯৬ সালে এল অলিম্পিয়াড ডি লা রিপাবলিক গেমস নামে একটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এই গেমসেই সর্বপ্রথম ম্যাট্রিক পদ্ধতির পরিমাপ অনুসরণ করা হয়। ১৮৬০ সালে ইংল্যান্ডে অলিম্পিয়ান সোসাইটির প্রতিষ্ঠা হয়।
তবে আধুনিক অলিম্পিকের সূচনা করেন ১৮৯৬ সালে ফ্রান্সের ব্যারন পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁর উদ্যোগে গ্রীসের এথেন্সে অলিম্পিক গেমস পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। যেখানে ১৩টি দেশের ২৪১ জন প্রতিযোগী ৪৩টি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেন। এই গেমসের তিনটি মূলমন্ত্র ছিল ক্ষিপ্রতা, উচ্চতা এবং শক্তি। এরপর থেকে প্রতি ৪ বছর অন্তর অন্তর অনুষ্ঠিত হচ্ছে অলিম্পিক। যার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শান্তি এবং একতার বার্তা ছড়িয়ে দেয়া হয়।
শুরুর পর ১৯১৩ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে এবং ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি এই আয়োজন।
১৯২৮ সালের আমস্টার্ডাম অলিম্পিক থেকে এই অলিম্পিক মশাল জ্বালানোর প্রচলন শুরু হয়েছে। আর অলিম্পিক মশালের বিশ্ব পরিভ্রমণ বা ‘টর্চ রিলে’ প্রথা অবশ্য শুরু হয় ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিক থেকে।
অলিম্পিক গেমস দুটি ভাগে বিভক্ত। গ্রীষ্মকালীন এবং শীতকালীন। গ্রীষ্মকালীন গেমস প্রতি চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার, জিমন্যাস্টিকস, বাস্কেটবল এবং আরো অনেক ইভেন্ট থাকে। অন্যদিকে, শীতকালীন গেমসেও প্রতি চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে স্কি, আইস হকি, ফিগার স্কেটিং এবং স্নোবোর্ডিং-এর মতো ইভেন্ট থাকে।