বাংলাদেশে টেস্ট টিউব বেবি
- সময় ১২:১১:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / 248
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে টেস্ট টিউব বেবি বা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) প্রযুক্তি। অনাকাঙ্ক্ষিত বন্ধ্যাত্বের সাথে লড়াই করছে এমন অনেক দম্পতির জন্য, এই প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে আশার আলোকবর্তিকা।
টেস্ট টিউব বেবি, যেখানে স্ত্রীর ডিম্বাণু এবং স্বামীর শুক্রাণুকে শরীরের বাইরে নিষিক্ত করা হয় এবং তারপর তা গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশে এই প্রযুক্তির ব্যবহার গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার, টেস্ট টিউব বেবির প্রযুক্তি গ্রহণ করছে। এর মধ্যে সফলতার হার প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মিলিত প্রচেষ্টায় এই হার আরও বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।
সরকারি পর্যায়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ এবং বেসরকারি বেশ কিছু হাসপাতালে এই পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে। তবে হাসপাতাল ভেদে খরচে পার্থক্য রয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইভিএফ খরচ তুলনামূলকভাবে কম, যেখানে একটি চক্রের জন্য খরচ ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা। অন্যদিকে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই খরচ ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে হতে পারে।
বাংলাদেশে ধর্মীয় এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে টেস্ট টিউব বেবি নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। ইসলামি স্কলাররা সাধারণত আইভিএফ পদ্ধতিকে সমর্থন করে, তবে এটি স্বামীস্ত্রীর গর্ভসঞ্চার প্রক্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। হিন্দু এবং খ্রিষ্টান ধর্মীয় নেতারাও প্রযুক্তিটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।
সামাজিকভাবেও টেস্ট টিউব বেবি এখন অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। বন্ধ্যাত্বের কারণে যারা মানসিক কষ্টে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি একটি কার্যকর সমাধান হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অনেক দম্পতি এই পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তানের মুখ দেখতে পেরে নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করেন।
বাংলাদেশে টেস্ট টিউব বেবি প্রযুক্তির উপর গবেষণা ও উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তির উন্নতির জন্য কাজ করছেন, যাতে সাফল্যের হার আরও বাড়ানো যায় এবং খরচ কমানো যায়।
অনেকেই মনে করেন টেস্ট টিউব বেবির জন্ম হয় টেস্ট টিউবের মধ্যে। এ ধারণা মোটেও ঠিক নয়। টেস্ট টিউব বেবি কৃত্রিম উপায়ে জন্ম দেওয়া কোনো শিশু নয়। টেস্ট টিউব মূলত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, এই পদ্ধতিতে স্ত্রীর ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয় আর স্বামীর শরীর থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করা হয়। গবেষণাগারে সেই ডিম্বাণু ও শুক্রাণু নিষিক্ত করে কৃত্রিমভাবে ভ্রুণ সৃষ্টি করা হয়। পরে সেই ভ্রুণ স্ত্রীর গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। স্বাভাবিক ভ্রুণ যেভাবে গর্ভাশয়ে বেড়ে ওঠে, কৃত্রিম ভ্রুণও একইভাবে বেড়ে উঠতে থাকে। এভাবে ৯ মাস পর যে শিশুর জন্ম হয়, তাকে টেস্টটিউব শিশু বলা হয়।
বাংলাদেশে ২০০১ সালে একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রথম টেস্টটিউব শিশুর জন্ম হয়। এরপর আরও কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এ পদ্ধতিতে শিশুর জন্ম হয়েছে।