ঢাকা ১২:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গেমস খেলে কোটি কোটি টাকা আয়!

আকাশ ইসলাম
  • সময় ০৬:৪৪:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
  • / 266

এক সময় ভাবা হতো ভিডিও গেমস কেবলই শিশুদের খেলা। এক দশক আগেও ভাবা যায়নি ভিডিও গেমস কখনো পেশা হতে পারে। বরং অবিভাবকরা একে সময় নষ্ট করাই মনে করতো। কিন্তু সময় বদলেছে। বিশ্বে বদলেছে পেশার ধরনও। এখন গেমস কেবল পেশাই নয়; বরং এর সঙ্গে রয়েছে বিপুল অর্থ ও সম্মান। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও।

গবেষণা বলছে, বিশ্বে ই-স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রিও দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে। ২০২৩ সালে, গ্লোবাল ই-স্পোর্টস বাজারের আকার ছিল প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৪ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই বাজারের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ৯.০৪ শতাংশ হার ধরে বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আর এই বাজারের আকার ২০৩০ সালে গিয়ে প্রায় ৬.৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে।

এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল এই বাজারে সবচেয়ে বড় শেয়ার ধরে রেখেছে। যেখানে ৫৭ শতাংশ ই-স্পোর্টস ভিউয়ারশিপ রয়েছে। ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা যথাক্রমে ১৬ শতাংশ এবং ১২ শতাংশ শেয়ার ধরে রেখেছে। এছাড়াও, ২০২৪ সালে ই-স্পোর্টসের বৈশ্বিক দর্শক সংখ্যা ৫৪৪ মিলিয়ন, যা ২০২৫ সালে ৬৪০ মিলিয়ন দর্শক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে ই-স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও এর সম্ভাবনা বিপুল। দেশে ফ্রি ফায়ার, পাবজি মোবাইল, মোবাইল লিজেন্ড: ব্যাঙ ব্যাঙ এবং কল অফ ডিউটি মোবাইল গেমগুলি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

হাসিব আহসান; ‘জারক্সেস’ নামে পরিচিত এই খেলোয়াড় বাংলাদেশের শীর্ষ ফ্রি ফায়ার খেলোয়াড়। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া সাকিব বিন রশিদ; “শিবো” নামে পরিচিত এই খেলোয়াড় পাবজি মোবাইল গেমে বেশ দক্ষতা অর্জন করেছেন এবং আরাফাত রহমান ; ডেড পুল বা মৃত্যু কূপ নামে কল অফ ডিউটি মোবাইল গেমে তার প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন। এরা বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন।

এসব তরুণ অন্য আর দশটা বুদ্ধিবৃত্তিক পেশার মতোই গেমস খেলাকে নিজেদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এই পেশায় তরুণদের আরো দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে একাধিক ই-স্পোর্টস ক্লাব এবং গেমিং ক্যাফে গড়ে উঠেছে।

এখন পর্যন্ত গেমস খেলে সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ডটা ডেনমার্কের ৩০ বয়সী যুবক জোহান সানডস্টেনের দখলে। যিনি “নোটেল” নামে পরিচিত। ডোটা টু খেলে ৮৫ কোটি টাকার বেশি আয় করেছেন।

দ্বিতীয় স্থানে আছেন ফিনিশ নাগরিক ফিনল্যান্ডের ৩২ বছরের যুবক জেসি ভাইনিক্কা। যিনি গেমস জগতে “জেরএক্স” নামে বেশ পরিচিত। ২০০৪ সালে তার আয়ের পরিমাণ ৭৬ কোটি টাকার বেশি। তৃতীয় স্থানে আছেন অস্ট্রেলিয়ান ২৪ বছর বয়সী অনাথন ফাম বা “আনা”। যিনি ৭০ কোটি টাকার বেশি আয় করেছেন।

এসব শীর্ষ গেমাররা টুর্নামেন্টে জেতার পাশাপাশি স্পন্সরশিপ, স্ট্রিমিং এবং এন্ডোর্সমেন্ট থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আয় থাকেন। যা তাদের মোট আয়ের বড় অংশ হিসেবে যোগ হয়।

চীনে ই-স্পোর্টস একটি প্রধান শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং দেশটি বিশাল ই-স্পোর্টস বাজারে পরিণত হয়েছে। ওয়াং “আমে” চুনিউ, গেস এবং লু “সোমনাস” ইয়াও এর মতো গেমাররা ডোটা টু গেম খেলে মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছেন। চীনে গেমিং ক্যাফে এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে নতুন গেমারদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপে ই-স্পোর্টস প্রতিনিয়ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশেও এই ক্ষেত্রের সম্ভাবনা বিপুল এবং সঠিক নির্দেশনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম ই-স্পোর্টসে সফল হতে পারে।

শেয়ার করুন

গেমস খেলে কোটি কোটি টাকা আয়!

সময় ০৬:৪৪:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪

এক সময় ভাবা হতো ভিডিও গেমস কেবলই শিশুদের খেলা। এক দশক আগেও ভাবা যায়নি ভিডিও গেমস কখনো পেশা হতে পারে। বরং অবিভাবকরা একে সময় নষ্ট করাই মনে করতো। কিন্তু সময় বদলেছে। বিশ্বে বদলেছে পেশার ধরনও। এখন গেমস কেবল পেশাই নয়; বরং এর সঙ্গে রয়েছে বিপুল অর্থ ও সম্মান। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও।

গবেষণা বলছে, বিশ্বে ই-স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রিও দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে। ২০২৩ সালে, গ্লোবাল ই-স্পোর্টস বাজারের আকার ছিল প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৪ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই বাজারের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ৯.০৪ শতাংশ হার ধরে বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আর এই বাজারের আকার ২০৩০ সালে গিয়ে প্রায় ৬.৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে।

এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল এই বাজারে সবচেয়ে বড় শেয়ার ধরে রেখেছে। যেখানে ৫৭ শতাংশ ই-স্পোর্টস ভিউয়ারশিপ রয়েছে। ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা যথাক্রমে ১৬ শতাংশ এবং ১২ শতাংশ শেয়ার ধরে রেখেছে। এছাড়াও, ২০২৪ সালে ই-স্পোর্টসের বৈশ্বিক দর্শক সংখ্যা ৫৪৪ মিলিয়ন, যা ২০২৫ সালে ৬৪০ মিলিয়ন দর্শক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে ই-স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও এর সম্ভাবনা বিপুল। দেশে ফ্রি ফায়ার, পাবজি মোবাইল, মোবাইল লিজেন্ড: ব্যাঙ ব্যাঙ এবং কল অফ ডিউটি মোবাইল গেমগুলি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

হাসিব আহসান; ‘জারক্সেস’ নামে পরিচিত এই খেলোয়াড় বাংলাদেশের শীর্ষ ফ্রি ফায়ার খেলোয়াড়। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া সাকিব বিন রশিদ; “শিবো” নামে পরিচিত এই খেলোয়াড় পাবজি মোবাইল গেমে বেশ দক্ষতা অর্জন করেছেন এবং আরাফাত রহমান ; ডেড পুল বা মৃত্যু কূপ নামে কল অফ ডিউটি মোবাইল গেমে তার প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন। এরা বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন।

এসব তরুণ অন্য আর দশটা বুদ্ধিবৃত্তিক পেশার মতোই গেমস খেলাকে নিজেদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এই পেশায় তরুণদের আরো দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে একাধিক ই-স্পোর্টস ক্লাব এবং গেমিং ক্যাফে গড়ে উঠেছে।

এখন পর্যন্ত গেমস খেলে সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ডটা ডেনমার্কের ৩০ বয়সী যুবক জোহান সানডস্টেনের দখলে। যিনি “নোটেল” নামে পরিচিত। ডোটা টু খেলে ৮৫ কোটি টাকার বেশি আয় করেছেন।

দ্বিতীয় স্থানে আছেন ফিনিশ নাগরিক ফিনল্যান্ডের ৩২ বছরের যুবক জেসি ভাইনিক্কা। যিনি গেমস জগতে “জেরএক্স” নামে বেশ পরিচিত। ২০০৪ সালে তার আয়ের পরিমাণ ৭৬ কোটি টাকার বেশি। তৃতীয় স্থানে আছেন অস্ট্রেলিয়ান ২৪ বছর বয়সী অনাথন ফাম বা “আনা”। যিনি ৭০ কোটি টাকার বেশি আয় করেছেন।

এসব শীর্ষ গেমাররা টুর্নামেন্টে জেতার পাশাপাশি স্পন্সরশিপ, স্ট্রিমিং এবং এন্ডোর্সমেন্ট থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আয় থাকেন। যা তাদের মোট আয়ের বড় অংশ হিসেবে যোগ হয়।

চীনে ই-স্পোর্টস একটি প্রধান শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং দেশটি বিশাল ই-স্পোর্টস বাজারে পরিণত হয়েছে। ওয়াং “আমে” চুনিউ, গেস এবং লু “সোমনাস” ইয়াও এর মতো গেমাররা ডোটা টু গেম খেলে মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছেন। চীনে গেমিং ক্যাফে এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে নতুন গেমারদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপে ই-স্পোর্টস প্রতিনিয়ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশেও এই ক্ষেত্রের সম্ভাবনা বিপুল এবং সঠিক নির্দেশনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম ই-স্পোর্টসে সফল হতে পারে।