বাংলাদেশে যেভাবে জায়গা করে নিচ্ছে চীন
- সময় ০৬:৩৪:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪
- / 258
বাংলাদেশ ও চীন, এশিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ, গত কয়েক দশকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে দেশ দুটি। এই সম্পর্ক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, শিক্ষা, সামরিক সহায়তা এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে বিস্তৃত।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি এবং আমদানি অংশীদার। প্রতি বছর চীন থেকে বাংলাদেশে প্রায় ১৫-১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি হয়। এর মধ্যে মেশিনারি, ইলেকট্রনিক্স এবং কাঁচামাল উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে চীনে প্রায় ১.৫-২.০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যার মধ্যে প্রধানত তৈরি পোশাক ও বস্ত্র রয়েছে।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও চীনের ভূমিকা বিশাল। চীন বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ করছে। যার একটি পদ্মা বহুমুখী সেতু। প্রকল্পটিতে চীনের বিনিয়োগ প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণও ব্যাপক।
চীন বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতেও উল্লেখযোগ্যভাবে বিনিয়োগ করেছে। হুয়াওয়ে ও জেডটিই কোম্পানিগুলি বাংলাদেশের টেলিকম নেটওয়ার্ক উন্নয়নে সহায়তা করছে। এছাড়া, চীন ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনেও সহযোগিতা করছে।
শিক্ষা খাতেও চীন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক স্কলারশিপ প্রদান করে। চীনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানগুলি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সাথে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির আওতায় শিক্ষার্থী বিনিময়, গবেষণা সহযোগিতা এবং প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বাংলাদেশের সামরিক শক্তি বাড়াতে চীন একটু বেশিই এগিয়ে। চীন থেকে বাংলাদেশ দুটি সাবমেরিন, যুদ্ধবিমান এবং বিভিন্ন প্রকার ট্যাংক সংগ্রহ করেছে। এছাড়া, চীনের সহায়তায় বাংলাদেশ সামরিক প্রযুক্তি স্থানান্তর ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে।
অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উন্নয়ন, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প এবং পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো প্রকল্পগুলোতে চীনের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য।
জ্বালানি খাতেও চীনের সহযোগিতা বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের পথে সহায়ক হচ্ছে।
স্বাস্থ্য খাতে চীন বাংলাদেশের হাসপাতাল নির্মাণ, চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ এবং চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কৃষি খাতেও চীন আধুনিক প্রযুক্তি স্থানান্তর করছে, যা বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করছে। পরিবেশগত প্রকল্প, যেমন নদী ব্যবস্থাপনা ও বনায়নে চীনের অবদান রয়েছে।
পর্যটন ও সংস্কৃতি খাতেও দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীনা পর্যটকরা বাংলাদেশ ভ্রমণ করছেন এবং বাংলাদেশি পর্যটকরা চীন ভ্রমণ করছেন। এছাড়া, সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রোগ্রাম দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও গভীর করছে।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে এই বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় ও গভীর করেছে। অর্থনৈতিক, সামরিক, প্রযুক্তি, শিক্ষা এবং অন্যান্য খাতে এই সহযোগিতা দুই দেশের উন্নয়নের পথে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।