ঢাকা ০৩:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ বাংলাদেশী !

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০১:২৮:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪
  • / 260

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন- ইন্টারপোলের ‘ওয়ান্টেড পারসন্স’ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ঝুলছে ৬৪ বাংলাদেশীর নাম ও ছবি। এ তালিকায় রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর খুনি, যুদ্ধাপরাধী, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্তরা।

তবে এই ৬৪ জনের মধ্যে ৪৬ জন বাংলাদেশ সরকারের তালিকাভুক্ত অপরাধী। একজনের নাম দুইবার রয়েছে। বাকি থাকে ১৭ জন। প্রশ্ন হলো এই ১৭ বাংলাদেশীর নাম কীভাবে তালিকায় আসলো ? তার আগে জেনে নেয়া যাক ইন্টারপোল কীভাবে কাজ করে ?

আন্তর্জাতিকভাবে পুলিশকে সহায়তার জন্য ১৯২৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ কমিশন নামে প্রতিষ্ঠিত হয় সংস্থাটি। জাতিসংঘের পর এটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংস্থা। যার সদর দপ্তর ফ্রান্সে। বর্তমানে ১৯৬টি দেশ এর সদস্য।

সংস্থাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের সংযুক্ত করে এক দেশে অপরাধ করে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়া অপরাধীদের ধরতে সহায়তা করে। অন্য দেশে পালিয়ে থাকা সন্দেহভাজন অপরাধীর বিস্তারিত তথ্য দিয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা যায়। যার মাধ্যমে সন্দেহভাজন অপরাধীর বিষয়ে সব দেশকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৬ হাজার ৭৭০ ব্যক্তির নামের পাশে ‘ওয়ান্টেড পারসন্স’ হিসেবে রেড নোটিশ জারি করা আছে। ইন্টারপোল কাউকে গ্রেপ্তার করে না। সংস্থাটি সদস্য দেশের পুলিশকে তালিকা দিয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অনুরোধ জানায়।

বাংলাদেশ পুলিশের চাওয়া সহযোগিতার কারণে দীর্ঘ বছর ধরে ৪৬ বাংলাদেশীর নাম ইন্টারপোলের ওয়েব সাইটে ‘ওয়ান্টেড পারসন্স’ হিসেবে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। যেখানে তাদের অপরাধের ধরন, নাম, পরিচয়, বয়স, চিহ্নিত করার চিহ্ন ও ছবি আছে।

তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরী, খন্দকার আব্দুর রশীদ, নাজমুল আনসার, শরিফল হক ডালিম, আহমেদ শরিফুল হোসেন, মোসলে উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী।

যুদ্ধাপরাধের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতকদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আছে তালিকাতে।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় পলাতক মাওলানা তাজউদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভি ও বিএনপি নেতা হারিস চৌধুরীর নাম ও ছবিও আছে এই তালিকায়। এছাড়া বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ও ছবি রয়েছে। সবশেষ সেখানে যুক্ত হয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক খুনের আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান।

বাংলাদেশ পুলিশের দেয়া তালিকার বাইরে আরো ১৭ বাংলাদেশীর নামে রেড অ্যালার্ট জারি করা আছে। বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে এদের ধরিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সবশেষ সিঙ্গাপুরের আবেদনে প্রেক্ষিতে তালিকায় যুক্ত হয়েছে, রাজু ঢালী নামে চাদপুরের এক ব্যক্তি। তিনি সিঙ্গাপুরের আদালতে স্ত্রী হত্যায় অভিযুক্ত।

এছাড়া মিলন ও লিটন ব্যাপারী নামে ঢাকার দুই ব্যক্তির নামে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ এস্বাতিনীর আবেদনের প্রেক্সিতে। এর মধ্যে মিলনের বিরুদ্ধে ওই দেশের আদালতে এক বাংলাদেশীকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ভারত, বেলজিয়াম, সাউফ আফ্রিকা, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাকি বাংলাদেশীর নাম ও ছবি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ থাকলে অপরাধীর বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সদস্যদেশগুলোর সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। তবে কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা না হলে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি হলেও আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না।

শেয়ার করুন

‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ বাংলাদেশী !

সময় ০১:২৮:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন- ইন্টারপোলের ‘ওয়ান্টেড পারসন্স’ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ঝুলছে ৬৪ বাংলাদেশীর নাম ও ছবি। এ তালিকায় রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর খুনি, যুদ্ধাপরাধী, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্তরা।

তবে এই ৬৪ জনের মধ্যে ৪৬ জন বাংলাদেশ সরকারের তালিকাভুক্ত অপরাধী। একজনের নাম দুইবার রয়েছে। বাকি থাকে ১৭ জন। প্রশ্ন হলো এই ১৭ বাংলাদেশীর নাম কীভাবে তালিকায় আসলো ? তার আগে জেনে নেয়া যাক ইন্টারপোল কীভাবে কাজ করে ?

আন্তর্জাতিকভাবে পুলিশকে সহায়তার জন্য ১৯২৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ কমিশন নামে প্রতিষ্ঠিত হয় সংস্থাটি। জাতিসংঘের পর এটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংস্থা। যার সদর দপ্তর ফ্রান্সে। বর্তমানে ১৯৬টি দেশ এর সদস্য।

সংস্থাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের সংযুক্ত করে এক দেশে অপরাধ করে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়া অপরাধীদের ধরতে সহায়তা করে। অন্য দেশে পালিয়ে থাকা সন্দেহভাজন অপরাধীর বিস্তারিত তথ্য দিয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা যায়। যার মাধ্যমে সন্দেহভাজন অপরাধীর বিষয়ে সব দেশকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৬ হাজার ৭৭০ ব্যক্তির নামের পাশে ‘ওয়ান্টেড পারসন্স’ হিসেবে রেড নোটিশ জারি করা আছে। ইন্টারপোল কাউকে গ্রেপ্তার করে না। সংস্থাটি সদস্য দেশের পুলিশকে তালিকা দিয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অনুরোধ জানায়।

বাংলাদেশ পুলিশের চাওয়া সহযোগিতার কারণে দীর্ঘ বছর ধরে ৪৬ বাংলাদেশীর নাম ইন্টারপোলের ওয়েব সাইটে ‘ওয়ান্টেড পারসন্স’ হিসেবে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। যেখানে তাদের অপরাধের ধরন, নাম, পরিচয়, বয়স, চিহ্নিত করার চিহ্ন ও ছবি আছে।

তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরী, খন্দকার আব্দুর রশীদ, নাজমুল আনসার, শরিফল হক ডালিম, আহমেদ শরিফুল হোসেন, মোসলে উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী।

যুদ্ধাপরাধের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতকদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আছে তালিকাতে।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় পলাতক মাওলানা তাজউদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভি ও বিএনপি নেতা হারিস চৌধুরীর নাম ও ছবিও আছে এই তালিকায়। এছাড়া বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ও ছবি রয়েছে। সবশেষ সেখানে যুক্ত হয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক খুনের আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান।

বাংলাদেশ পুলিশের দেয়া তালিকার বাইরে আরো ১৭ বাংলাদেশীর নামে রেড অ্যালার্ট জারি করা আছে। বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে এদের ধরিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সবশেষ সিঙ্গাপুরের আবেদনে প্রেক্ষিতে তালিকায় যুক্ত হয়েছে, রাজু ঢালী নামে চাদপুরের এক ব্যক্তি। তিনি সিঙ্গাপুরের আদালতে স্ত্রী হত্যায় অভিযুক্ত।

এছাড়া মিলন ও লিটন ব্যাপারী নামে ঢাকার দুই ব্যক্তির নামে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ এস্বাতিনীর আবেদনের প্রেক্সিতে। এর মধ্যে মিলনের বিরুদ্ধে ওই দেশের আদালতে এক বাংলাদেশীকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ভারত, বেলজিয়াম, সাউফ আফ্রিকা, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাকি বাংলাদেশীর নাম ও ছবি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ থাকলে অপরাধীর বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সদস্যদেশগুলোর সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। তবে কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা না হলে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি হলেও আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না।