ঢাকা ০৯:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইলিশের আসল বাড়ি কোথায় ?

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০১:২৩:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
  • / 263

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ইলিশ আহরণ হয় বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলায়। এর পরেই রয়েছে একই বিভাগের বরগুনা জেলা। কিন্তু ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা চাঁদপুর জেলাকে কেন ইলিশের বাড়ি বলা হয়?

বিশ্বের মোট ইলিশের প্রায় ৮৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। মূলত বরিশালের কয়েকটি উপজেলা, বরগুণা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও চাদপুরের বিভিন্ন নদীতে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে।

গেল কয়েক বছর ধরে চাঁদপুর ও বরগুণার বাসিন্ধাদের মধ্যে ইলিশের বাড়ি নিয়ে বেশ বিতর্ক হচ্ছে। দু’পক্ষই নিজেদের দাবির পক্ষে বেশ জোড়ালো যুক্তি দিচ্ছেন।

মৎস্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশে ইলিশের তিনটি প্রজাতি রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে পদ্মার রুপালি ইলিশ, যেটি আকারে বড় এবং স্বাদে গন্ধেও অতুলনীয়। যার কারণে এর চাহিদা দেশবিদেশে বেশি।

অন্য দুটি জাতের মধ্যে একটি চন্দনা ইলিশ, অন্যটি গুর্তা ইলিশ। এগুলো আকারে ছোট এবং স্বাদও কম। এদের অবস্থান সাগরেই বেশি। যদিও বর্তমান বাজারে অসাধু কিছু ব্যবসায়ী এসব ইলিশ পদ্মার ইলিশের সঙ্গে মিশিয়ে বেচাকেনা করছেন।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, ইলিশ বেশির ভাগ সময় সাগরে থাকে। তবে প্রাপ্তবয়স্ক ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে আস্তে আস্তে মিঠা পানির মোহনায় আসে। মা ইলিশের প্রধান খাবার প্লাঙ্কটন নামের একধরনের জীব।

বাংলাদেশের চাঁদপুরের পদ্মা নদীতে প্রচুর পরিমাণে প্ল্যাঙ্কটন আছে। যা অন্য জেলার নদীতে নেই। আর এ কারণেই ডিম ছাড়ার সময় চাদপুরের পদ্মা নদীতে মা ইলিশ বেশি আসে। তাই চাদপুরকে ইলিশের বাড়ি বলা হয়।

অন্যদিকে ভোলা ও বরগুণায় বেশি ইলিশ ধরা পড়ার কারণ হলো, উপক‚লের কাছাকাছি জেলা হওয়ায়। জুনে ডিম ছাড়ার মৌসুম শেষে যখন আবার ইলিশ ধরা শুরু হয়; ততদিনে এই ইলিশগুলো উপকলীয় জেলাগুলোর দিকে চলে যাওয়ায় সেখানে ইলিশ বেশি ধরা পড়ে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বর্তমানে ইলিশের বেশ কয়েকটি অভয়াশ্রম রয়েছে। এগুলো হলো চাঁদপুরের ষাটনল হতে লক্ষীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর নিম্ন অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার এলাকা। ভোলার মদনপুর ও চর ইলিশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা।

এছাড়া শরীয়তপুরের নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং চাঁদপুরের মতলব উপজেলার মধ্যে অবস্থিত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা; বরিশালের হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া ও মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার এলাকাও রয়েছে এই তালিকায়।

বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার নাছাকাটি পয়েন্ট, হরিনাথপুর পয়েন্ট ও ধুলখোলা পয়েন্ট এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর অঞ্চলে মেঘনার শাখা নদী হিজলা উপজেলার ধর্মগঞ্জ ও নয়াভাঙ্গানী নদী এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার লতা নদীর ৬০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ ও জাটকার বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

২০১৫ সালে চাঁদপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর মন্ডল ইলিশের ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম শুরু করেন। চাঁদপুর জেলাকে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নামে ব্র্যান্ডিং করেন তিনি। এর দুই বছর পর অর্থাৎ, ২০১৭ সালে সরকারের পক্ষ থেকে এ দাবির স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

শেয়ার করুন

ইলিশের আসল বাড়ি কোথায় ?

সময় ০১:২৩:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ইলিশ আহরণ হয় বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলায়। এর পরেই রয়েছে একই বিভাগের বরগুনা জেলা। কিন্তু ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা চাঁদপুর জেলাকে কেন ইলিশের বাড়ি বলা হয়?

বিশ্বের মোট ইলিশের প্রায় ৮৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। মূলত বরিশালের কয়েকটি উপজেলা, বরগুণা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও চাদপুরের বিভিন্ন নদীতে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে।

গেল কয়েক বছর ধরে চাঁদপুর ও বরগুণার বাসিন্ধাদের মধ্যে ইলিশের বাড়ি নিয়ে বেশ বিতর্ক হচ্ছে। দু’পক্ষই নিজেদের দাবির পক্ষে বেশ জোড়ালো যুক্তি দিচ্ছেন।

মৎস্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশে ইলিশের তিনটি প্রজাতি রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে পদ্মার রুপালি ইলিশ, যেটি আকারে বড় এবং স্বাদে গন্ধেও অতুলনীয়। যার কারণে এর চাহিদা দেশবিদেশে বেশি।

অন্য দুটি জাতের মধ্যে একটি চন্দনা ইলিশ, অন্যটি গুর্তা ইলিশ। এগুলো আকারে ছোট এবং স্বাদও কম। এদের অবস্থান সাগরেই বেশি। যদিও বর্তমান বাজারে অসাধু কিছু ব্যবসায়ী এসব ইলিশ পদ্মার ইলিশের সঙ্গে মিশিয়ে বেচাকেনা করছেন।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, ইলিশ বেশির ভাগ সময় সাগরে থাকে। তবে প্রাপ্তবয়স্ক ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে আস্তে আস্তে মিঠা পানির মোহনায় আসে। মা ইলিশের প্রধান খাবার প্লাঙ্কটন নামের একধরনের জীব।

বাংলাদেশের চাঁদপুরের পদ্মা নদীতে প্রচুর পরিমাণে প্ল্যাঙ্কটন আছে। যা অন্য জেলার নদীতে নেই। আর এ কারণেই ডিম ছাড়ার সময় চাদপুরের পদ্মা নদীতে মা ইলিশ বেশি আসে। তাই চাদপুরকে ইলিশের বাড়ি বলা হয়।

অন্যদিকে ভোলা ও বরগুণায় বেশি ইলিশ ধরা পড়ার কারণ হলো, উপক‚লের কাছাকাছি জেলা হওয়ায়। জুনে ডিম ছাড়ার মৌসুম শেষে যখন আবার ইলিশ ধরা শুরু হয়; ততদিনে এই ইলিশগুলো উপকলীয় জেলাগুলোর দিকে চলে যাওয়ায় সেখানে ইলিশ বেশি ধরা পড়ে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বর্তমানে ইলিশের বেশ কয়েকটি অভয়াশ্রম রয়েছে। এগুলো হলো চাঁদপুরের ষাটনল হতে লক্ষীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর নিম্ন অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার এলাকা। ভোলার মদনপুর ও চর ইলিশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা।

এছাড়া শরীয়তপুরের নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং চাঁদপুরের মতলব উপজেলার মধ্যে অবস্থিত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা; বরিশালের হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া ও মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার এলাকাও রয়েছে এই তালিকায়।

বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার নাছাকাটি পয়েন্ট, হরিনাথপুর পয়েন্ট ও ধুলখোলা পয়েন্ট এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর অঞ্চলে মেঘনার শাখা নদী হিজলা উপজেলার ধর্মগঞ্জ ও নয়াভাঙ্গানী নদী এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার লতা নদীর ৬০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ ও জাটকার বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

২০১৫ সালে চাঁদপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর মন্ডল ইলিশের ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম শুরু করেন। চাঁদপুর জেলাকে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নামে ব্র্যান্ডিং করেন তিনি। এর দুই বছর পর অর্থাৎ, ২০১৭ সালে সরকারের পক্ষ থেকে এ দাবির স্বীকৃতি দেওয়া হয়।