ঢাকা ০১:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৫৪ বছরেই মারা যায় রিপাবলিক অব সিয়েরা লিওনের পুরুষরা

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ১০:৩৯:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪
  • / 259

পৃথিবীর সর্বোচ্চ গড় আয়ূর দেশ জাপানের নাগরিকরা ৮৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন। কিন্তু পৃথিবীতে এমনও দেশ রয়েছে যেখানের পুরুষদের জীবন প্রদীপ নিভে যায়; মাত্র ৫৪ বছর বয়সে। পৃথিবীতে মানুষের সর্বনিম্ন গড় আয়ূর মধ্যে এটিও রয়েছে।

মুসলিম প্রধান এই দেশটির অবস্থান পশ্চিম আফ্রিকায়। রয়েছে তাদের হীরাসহ আরো দামি দামি ধাতব খনিও। তারপরেও তারা রয়েছে দরিদ্র সীমার সবার নিচে।

বলছিলাম, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ রিপাবলিক অব সিয়েরা লিওন এর কথা। ১৯৬১ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। ব্রিটিশদের অত্যাচারে সিয়েরা লিওনের জনগণের জীবন ছিল দুর্বিষহ। তাদেরকে খনি শ্রমিক হিসেবে কঠোর পরিশ্রমে বাধ্য করা হতো।

স্বাধীনতা লাভের পর দুর্নীতি ও অপশাসনের কারণে ১৯৯১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় সিয়েরা লিওনে। সেই যুদ্ধ দীর্ঘ ১১ বছর লেগে ছিল। জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে ২০০২ সালে দেশটি শান্ত হয় এবং নতুনভাবে যাত্রা শুরু করে।

গৃহযুদ্ধে শিশুদেরকে জড়িয়ে ফেলেছিল তখনকার শাসকগোষ্ঠী। বই-খাতা ধরার বয়সে তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় অ্যাসল্ট রাইফেল। কখনও ভয় দেখিয়ে, কখনো লোভ দেখিয়ে শিশুদেরকে দলে টেনে নেয়া হতো। তাদের নিয়ে, গঠিত হয় “চাইল্ড সোলজার” বাহিনী। যাদের অস্ত্র দিতেন বড় বড় খনি ব্যবসায়ীরা।

যুদ্ধে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মারা যায়। অঙ্গহানিও ঘটে কয়েক হাজার মানুষের। আর দেশটির তৎকালীন ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ৫ লাখ নিজেদের বাসস্থান হারায়। ভেঙে পড়ে দেশটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশনসহ মৌলিক চাহিদাগুলো। অবস্থা বেগতিক দেখে দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণির বহু মানুষ দেশ ছেড়ে চলে যায়।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ এর ২০২০ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের গরীব রাষ্ট্র সমূহের মধ্যে সবচেয়ে নিচে রয়েছে সিয়েরা লিওনের অবস্থান। দেশটির মাথাপিছু জিডিপি ছিল তখন ১৬৯০ ডলার। দেশটির মুদ্রা লিওনি পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রার একটি।

দেশটির শতকরা ৭০ ভাগ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটিতে বড় ধরনের কোনো শিল্পকারখানাও গড়ে ওঠেনি। ফলে দেশটিতে বেকারত্বের সমস্যাও প্রবল।

দেশটিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখনও খুব নাজুক। ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত দেশটিতে স্বাস্থ্য সেবা কিনে নিতে হতো। ২০১০ সালের পর কিছু কিছু ফ্রি হেলথ প্রকল্প চালু করেছে দেশটি। গৃহযুদ্ধের সময় স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামোর বেশিরভাগই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পুষ্টি পেতো না গর্ভবর্তী মা কিংবা নবজাতক।

গৃহযুদ্ধ থামলেও দেশটির বাসিন্দাদের এখনো প্রতিনিয়ত এইডস, ম্যালেরিয়া সহ বিভিন্ন সংক্রামকের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ কওে চলছে। সবশেষ ২০১৪ সালে এবোলা ভাইরাসে দেশটিতে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হীরের খনিই দেশটির দুরাবস্থার জন্য দায়ী। সিয়েরা লিওনের সিংহভাগ মানুষ খনিগুলোতে কাজ করে। বিনিময়ে যা পারিশ্রমিক পায়; তা খুবই সামান্য। অন্যদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় ছিল তুলনামূলক বেশি। ফলে সঠিকভাবে পুষ্টি গ্রহণ করতে পারেন না তারা।

এসব কারণেই দেশটির পুরুষরা ৫৪ বছর এবং নারীরা ৬০ বছরেই মারা যান। দেশটির গড় আয়ু ৫৭ দশমিক ৩৯ বছর। যদিও এর অনেক আগেই বার্ধক্য পেয়ে বসে তাদের। কর্মক্ষমতা হারান অধিকাংশ পুরুষ।

শেয়ার করুন

৫৪ বছরেই মারা যায় রিপাবলিক অব সিয়েরা লিওনের পুরুষরা

সময় ১০:৩৯:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪

পৃথিবীর সর্বোচ্চ গড় আয়ূর দেশ জাপানের নাগরিকরা ৮৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন। কিন্তু পৃথিবীতে এমনও দেশ রয়েছে যেখানের পুরুষদের জীবন প্রদীপ নিভে যায়; মাত্র ৫৪ বছর বয়সে। পৃথিবীতে মানুষের সর্বনিম্ন গড় আয়ূর মধ্যে এটিও রয়েছে।

মুসলিম প্রধান এই দেশটির অবস্থান পশ্চিম আফ্রিকায়। রয়েছে তাদের হীরাসহ আরো দামি দামি ধাতব খনিও। তারপরেও তারা রয়েছে দরিদ্র সীমার সবার নিচে।

বলছিলাম, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ রিপাবলিক অব সিয়েরা লিওন এর কথা। ১৯৬১ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। ব্রিটিশদের অত্যাচারে সিয়েরা লিওনের জনগণের জীবন ছিল দুর্বিষহ। তাদেরকে খনি শ্রমিক হিসেবে কঠোর পরিশ্রমে বাধ্য করা হতো।

স্বাধীনতা লাভের পর দুর্নীতি ও অপশাসনের কারণে ১৯৯১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় সিয়েরা লিওনে। সেই যুদ্ধ দীর্ঘ ১১ বছর লেগে ছিল। জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে ২০০২ সালে দেশটি শান্ত হয় এবং নতুনভাবে যাত্রা শুরু করে।

গৃহযুদ্ধে শিশুদেরকে জড়িয়ে ফেলেছিল তখনকার শাসকগোষ্ঠী। বই-খাতা ধরার বয়সে তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় অ্যাসল্ট রাইফেল। কখনও ভয় দেখিয়ে, কখনো লোভ দেখিয়ে শিশুদেরকে দলে টেনে নেয়া হতো। তাদের নিয়ে, গঠিত হয় “চাইল্ড সোলজার” বাহিনী। যাদের অস্ত্র দিতেন বড় বড় খনি ব্যবসায়ীরা।

যুদ্ধে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মারা যায়। অঙ্গহানিও ঘটে কয়েক হাজার মানুষের। আর দেশটির তৎকালীন ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ৫ লাখ নিজেদের বাসস্থান হারায়। ভেঙে পড়ে দেশটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশনসহ মৌলিক চাহিদাগুলো। অবস্থা বেগতিক দেখে দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণির বহু মানুষ দেশ ছেড়ে চলে যায়।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ এর ২০২০ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের গরীব রাষ্ট্র সমূহের মধ্যে সবচেয়ে নিচে রয়েছে সিয়েরা লিওনের অবস্থান। দেশটির মাথাপিছু জিডিপি ছিল তখন ১৬৯০ ডলার। দেশটির মুদ্রা লিওনি পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রার একটি।

দেশটির শতকরা ৭০ ভাগ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটিতে বড় ধরনের কোনো শিল্পকারখানাও গড়ে ওঠেনি। ফলে দেশটিতে বেকারত্বের সমস্যাও প্রবল।

দেশটিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখনও খুব নাজুক। ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত দেশটিতে স্বাস্থ্য সেবা কিনে নিতে হতো। ২০১০ সালের পর কিছু কিছু ফ্রি হেলথ প্রকল্প চালু করেছে দেশটি। গৃহযুদ্ধের সময় স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামোর বেশিরভাগই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পুষ্টি পেতো না গর্ভবর্তী মা কিংবা নবজাতক।

গৃহযুদ্ধ থামলেও দেশটির বাসিন্দাদের এখনো প্রতিনিয়ত এইডস, ম্যালেরিয়া সহ বিভিন্ন সংক্রামকের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ কওে চলছে। সবশেষ ২০১৪ সালে এবোলা ভাইরাসে দেশটিতে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হীরের খনিই দেশটির দুরাবস্থার জন্য দায়ী। সিয়েরা লিওনের সিংহভাগ মানুষ খনিগুলোতে কাজ করে। বিনিময়ে যা পারিশ্রমিক পায়; তা খুবই সামান্য। অন্যদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় ছিল তুলনামূলক বেশি। ফলে সঠিকভাবে পুষ্টি গ্রহণ করতে পারেন না তারা।

এসব কারণেই দেশটির পুরুষরা ৫৪ বছর এবং নারীরা ৬০ বছরেই মারা যান। দেশটির গড় আয়ু ৫৭ দশমিক ৩৯ বছর। যদিও এর অনেক আগেই বার্ধক্য পেয়ে বসে তাদের। কর্মক্ষমতা হারান অধিকাংশ পুরুষ।