ঢাকা ০২:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিয়েতে কেন অনিহা জাপানিদের? কেন বিয়ে করতে চান না জাপানিরা?

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৭:৪৮:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪
  • / 259

বিয়ে করতে চাইছে না জাপানের তরুন-তরুনীরা। পরিবার পরিকল্পনার ইচ্ছাই নাকি নেই তাদের। এমনটাই ধরা পড়েছে সমীক্ষায়। যে কারনে দেশটির জন্মহার আশঙ্কাজনকহারে কমছে। ফলাফল জনসংখ্যায় সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই জাপান সরকারের।

জাপানের জাতীয় জনসংখ্যা ও সামাজিক নিরাপত্তা সংস্থার ২০২১ সালের সমীক্ষা বলছে, ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ ও ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণী জানিয়েছেন, তাঁরা জীবনে বিয়ে করবেন না। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ৩৪-এর ভেতর।

জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষা বলছে, ২০২১-এ সে দেশের জন্মহার আট লক্ষ পাঁচ হাজার। ২০২০ এ দেশটিতে জন্মহার ছিল আট লক্ষ ৪০ হাজার ৭৩২, যা কি না ২০১৯ সালের চেয়ে ২.৮ শতাংশ কম।

তরুন-তরুনীদের এমন নীতির কারনে দেশটিতে দ্রæত প্রবীণ লোকের সংখ্যা বাড়ছে। এমনিতেই দেশটিতে সবচেয়ে বেশি প্রবীণ মানুষ বাস করে। ২০২৫ সাল নাগাদ দেশটিতে ৬৫ থেকে ৮৫ বছর বয়সী নাগরিকের সংখ্যা ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ বেড়ে যাবে।

বিয়ে না করার কারণ হিসেবে ওই সব তরুণীরা বলছেন, তাঁরা নিজেদের ‘সিঙ্গেল’ জীবন উপভোগ করতে চান। নিজেদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় কোনো ছাড় দিতে চান না। আর পেশায় উন্নতি করতে চান। অন্যদিকে তরুনরা জানিয়েছেন, আর্থিক সক্ষমতার অভাব, চাকরির অনিশ্চয়তা বিয়ে করতে না চাওয়ার অন্যতম কারণ। তাছাড়া সংসারের নানা কাজকর্ম ও দায়িত্ব তো আছেই।

কেবল বিয়ে নয়, জাপানি তরুণ-তরুণীদের একটা বড় অংশ প্রেম বা বিয়ে না করে এক ছাদের নিচে থাকা অথবা একা মা বা বাবা হতেও আগ্রহী নন। বিয়ে বা প্রেম নয়; জাপানি তরুন-তরুনীরা কখনো কখনো মানসিক শান্তির জন্য ঘন্টা হিসেবে প্রেমিক-প্রেমিকা ভাড়া করছেন। এ কারনে সেখানে এ জাতীয় অনেকগুলো মোবাইল অ্যাপ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেখানে খন্ডকালিন চাকরি করেন। নিজেদের কর্মঘন্টা তারা অর্থের বিনিময়ে প্রেমিক বা প্রেমিকা হিসেবে সেবা দেন।

১৯৮২ সালে যখন প্রথমবারের মতো এ সমীক্ষা করা হয়েছিল। তখন ২ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ ও ৪ দশমিক ১ শতাংশ নারী জানিয়েছিলেন, তাঁরা কখনো বিয়ে করবেন না। সে সংখ্যা এখন বেড়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

এমন প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাপান সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্লেষকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাবে, অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

বিয়েতে তরুণদের আগ্রহী করতে জাপান সরকার ইতিমধ্যে সপ্তাহে তিন দিন কাজ আর চার দিন ছুটি নিতে উৎসাহিত করছে। নারী, বিশেষ করে মায়েদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনতে বলা হয়েছে। সন্তান নিতে উৎসাহ দিতে অতিরিক্ত ৪৮ হাজার ইয়েন দেওয়ার ঘোষণা করেছে সরকার। যাঁরা বাবা-মা হবেন তাঁদের বছরে প্রায় ৫ লাখ ইয়েনও দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে সরকারি তরফে।

শুধু জাপানই নয়, বিগত কয়েক বছরে একই ভাবে চিন ও দক্ষিণ কোরিয়ার জন্মহারও কমেছে।

শেয়ার করুন

বিয়েতে কেন অনিহা জাপানিদের? কেন বিয়ে করতে চান না জাপানিরা?

সময় ০৭:৪৮:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪

বিয়ে করতে চাইছে না জাপানের তরুন-তরুনীরা। পরিবার পরিকল্পনার ইচ্ছাই নাকি নেই তাদের। এমনটাই ধরা পড়েছে সমীক্ষায়। যে কারনে দেশটির জন্মহার আশঙ্কাজনকহারে কমছে। ফলাফল জনসংখ্যায় সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই জাপান সরকারের।

জাপানের জাতীয় জনসংখ্যা ও সামাজিক নিরাপত্তা সংস্থার ২০২১ সালের সমীক্ষা বলছে, ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ ও ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণী জানিয়েছেন, তাঁরা জীবনে বিয়ে করবেন না। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ৩৪-এর ভেতর।

জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষা বলছে, ২০২১-এ সে দেশের জন্মহার আট লক্ষ পাঁচ হাজার। ২০২০ এ দেশটিতে জন্মহার ছিল আট লক্ষ ৪০ হাজার ৭৩২, যা কি না ২০১৯ সালের চেয়ে ২.৮ শতাংশ কম।

তরুন-তরুনীদের এমন নীতির কারনে দেশটিতে দ্রæত প্রবীণ লোকের সংখ্যা বাড়ছে। এমনিতেই দেশটিতে সবচেয়ে বেশি প্রবীণ মানুষ বাস করে। ২০২৫ সাল নাগাদ দেশটিতে ৬৫ থেকে ৮৫ বছর বয়সী নাগরিকের সংখ্যা ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ বেড়ে যাবে।

বিয়ে না করার কারণ হিসেবে ওই সব তরুণীরা বলছেন, তাঁরা নিজেদের ‘সিঙ্গেল’ জীবন উপভোগ করতে চান। নিজেদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় কোনো ছাড় দিতে চান না। আর পেশায় উন্নতি করতে চান। অন্যদিকে তরুনরা জানিয়েছেন, আর্থিক সক্ষমতার অভাব, চাকরির অনিশ্চয়তা বিয়ে করতে না চাওয়ার অন্যতম কারণ। তাছাড়া সংসারের নানা কাজকর্ম ও দায়িত্ব তো আছেই।

কেবল বিয়ে নয়, জাপানি তরুণ-তরুণীদের একটা বড় অংশ প্রেম বা বিয়ে না করে এক ছাদের নিচে থাকা অথবা একা মা বা বাবা হতেও আগ্রহী নন। বিয়ে বা প্রেম নয়; জাপানি তরুন-তরুনীরা কখনো কখনো মানসিক শান্তির জন্য ঘন্টা হিসেবে প্রেমিক-প্রেমিকা ভাড়া করছেন। এ কারনে সেখানে এ জাতীয় অনেকগুলো মোবাইল অ্যাপ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেখানে খন্ডকালিন চাকরি করেন। নিজেদের কর্মঘন্টা তারা অর্থের বিনিময়ে প্রেমিক বা প্রেমিকা হিসেবে সেবা দেন।

১৯৮২ সালে যখন প্রথমবারের মতো এ সমীক্ষা করা হয়েছিল। তখন ২ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ ও ৪ দশমিক ১ শতাংশ নারী জানিয়েছিলেন, তাঁরা কখনো বিয়ে করবেন না। সে সংখ্যা এখন বেড়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

এমন প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাপান সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্লেষকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাবে, অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

বিয়েতে তরুণদের আগ্রহী করতে জাপান সরকার ইতিমধ্যে সপ্তাহে তিন দিন কাজ আর চার দিন ছুটি নিতে উৎসাহিত করছে। নারী, বিশেষ করে মায়েদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনতে বলা হয়েছে। সন্তান নিতে উৎসাহ দিতে অতিরিক্ত ৪৮ হাজার ইয়েন দেওয়ার ঘোষণা করেছে সরকার। যাঁরা বাবা-মা হবেন তাঁদের বছরে প্রায় ৫ লাখ ইয়েনও দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে সরকারি তরফে।

শুধু জাপানই নয়, বিগত কয়েক বছরে একই ভাবে চিন ও দক্ষিণ কোরিয়ার জন্মহারও কমেছে।