ঢাকা ০১:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কার কাছে কত দেনা বাংলাদেশ

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৭:১৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪
  • / 258

এই যে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রো রেল কিংবা এক্সপ্রেসওয়ে যা কিছুই উন্নয়ন দৃশ্যমান; তার নিচে চাপা পড়ে আছে এক বিশাল ঋণের বোঝা। বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ শত বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে অনেক আগেই। এই মুহুর্তে দেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণ দেড় লাখ টাকার মতো। কিছুদিন আগে এটা এক লাখ টাকার মতো ছিল।

বিশ্ব ব্যাংক কিংবা এডিবির মতো দাতা সংস্থা ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় বেশ কিছু দেশও রয়েছে বাংলাদেশের দেনাদারের তালিকায়।

ঋণের পরিমান মাত্র সাত বছরের মধ্যে দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ এখন যে ঋণ করছে, তার একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে সেই ঋণ পরিশোধে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় জাপান, চীন, রাশিয়া ও ভারতের কাছ থেকে সবচে বেশি ঋণ নিয়েছে এবং নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বাজেট সহায়তার জন্য বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ঋণ নেয়।

পাবলিক ও প্রাইভেট মিলিয়ে ২০১৭ সালের শেষে বাংলাদেশের মোট ঋণ ছিল ৫১.১৪ বিলিয়ন ডলার। যেটি ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে এসে ১০০.৬৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধির সাথে সাথে এর সুদ এবং আসল পরিশোধের পরিমাণ প্রতিবছর বাড়ছে। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক, রাজস্ব আহরণ, রপ্তানি বাণিজ্য, ডলার সংকট ও রিজার্ভ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন ভবিষ্যতে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও চাপের মুখে পড়তে পারে।

২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক ঋণ ছিল ৫৫.৬০ বিলিয়ন ডলার। এই ঋণের ৫৭ ভাগ বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছে।

অন্যদিকে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ জাপানের কাছে সবচে বেশি দেনায়। দেশটির কাছে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ ৯.২১ বিলিয়ন ডলার। এরপরই রাশিয়ার কাছে ৫.০৯ বিলিয়ন, চীনের কাছে ৪.৭৬ বিলিয়ন এবং ভারতের কাছে ১.০২ বিলিয়ন ডলার ঋণ রয়েছে বাংলাদেশ।

বর্তমানে এ ঋণ আরো অনেক বেশি। কারণ ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৫শ ৬৩ কোটি ডলার ঋণ করেছে। সবচে বেশি ঋণ করা হয়েছে এডিবি থেকে ১৪০ কোটি এবং বিশ্বব্যাংক থেকে ৯৬ কোটি ডলার।

একই সময়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় জাপান থেকে ১৩৫ কোটি, রাশিয়া থেকে ৮০ কোটি, চীন থেকে ৩৬ কোটি, ভারত থেকে ১৯ কোটি এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতির প্রবণতায় দেখা যায় সরকারের বৈদেশিক ঋণ এবং এর পরিশোধ দুটোই ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের যে ঋণ ৫০ বিলিয়ন ছিল সেটি ২২-২৩ অর্থবছরে ৬২ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। এই ঋণ পরিশোধের ধারাও ঊর্ধ্বমুখী। পরিশোধের পরিমাণও বেড়ে চলেছে। চলমান অর্থবছরের জন্য তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দ রাখতে হয়েছে বাজেটে। আগামী বছরগুলোতে সেটি চার বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী আয় বাড়ছে না। উল্টো বিদেশে অর্থ পাচার, উচ্চ শিক্ষা ও বিদেশে চিকিৎসার জন্য বিলিয়ন ডলারের বাড়তি ব্যায় হচ্ছে। যেটা দুশ্চিন্তার বিষয়।

বাংলাদেশে বাস্তবতা হলো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব এবং ব্যয় বাড়ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে একটা বড় অঙ্কের ঋণের বোঝা রয়েছে সরকারের কাঁধে। ডলারের রিজার্ভও ক্রমাগত কমছে। সেই সাথে ডলারের দাম বাড়ার কারণে ঋণ পরিশোধে ব্যয় আরো বেড়েছে টাকার অঙ্কে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ অবস্থায় বাংলাদেশে আয় বাড়াতে হবে। জাতীয় আয়ের তুলনায় বাংলাদেশে ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত মাত্র সাড়ে সাত শতাংশ, এটা একটা সমস্যা।

তবে সরকার বলছে, ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের সক্ষমতা আছে। এ নিয়ে তারা মোটেই বিচলিত নয়।

শেয়ার করুন

কার কাছে কত দেনা বাংলাদেশ

সময় ০৭:১৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪

এই যে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রো রেল কিংবা এক্সপ্রেসওয়ে যা কিছুই উন্নয়ন দৃশ্যমান; তার নিচে চাপা পড়ে আছে এক বিশাল ঋণের বোঝা। বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ শত বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে অনেক আগেই। এই মুহুর্তে দেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণ দেড় লাখ টাকার মতো। কিছুদিন আগে এটা এক লাখ টাকার মতো ছিল।

বিশ্ব ব্যাংক কিংবা এডিবির মতো দাতা সংস্থা ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় বেশ কিছু দেশও রয়েছে বাংলাদেশের দেনাদারের তালিকায়।

ঋণের পরিমান মাত্র সাত বছরের মধ্যে দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ এখন যে ঋণ করছে, তার একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে সেই ঋণ পরিশোধে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় জাপান, চীন, রাশিয়া ও ভারতের কাছ থেকে সবচে বেশি ঋণ নিয়েছে এবং নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বাজেট সহায়তার জন্য বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ঋণ নেয়।

পাবলিক ও প্রাইভেট মিলিয়ে ২০১৭ সালের শেষে বাংলাদেশের মোট ঋণ ছিল ৫১.১৪ বিলিয়ন ডলার। যেটি ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে এসে ১০০.৬৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধির সাথে সাথে এর সুদ এবং আসল পরিশোধের পরিমাণ প্রতিবছর বাড়ছে। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক, রাজস্ব আহরণ, রপ্তানি বাণিজ্য, ডলার সংকট ও রিজার্ভ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন ভবিষ্যতে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও চাপের মুখে পড়তে পারে।

২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক ঋণ ছিল ৫৫.৬০ বিলিয়ন ডলার। এই ঋণের ৫৭ ভাগ বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছে।

অন্যদিকে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ জাপানের কাছে সবচে বেশি দেনায়। দেশটির কাছে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ ৯.২১ বিলিয়ন ডলার। এরপরই রাশিয়ার কাছে ৫.০৯ বিলিয়ন, চীনের কাছে ৪.৭৬ বিলিয়ন এবং ভারতের কাছে ১.০২ বিলিয়ন ডলার ঋণ রয়েছে বাংলাদেশ।

বর্তমানে এ ঋণ আরো অনেক বেশি। কারণ ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৫শ ৬৩ কোটি ডলার ঋণ করেছে। সবচে বেশি ঋণ করা হয়েছে এডিবি থেকে ১৪০ কোটি এবং বিশ্বব্যাংক থেকে ৯৬ কোটি ডলার।

একই সময়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় জাপান থেকে ১৩৫ কোটি, রাশিয়া থেকে ৮০ কোটি, চীন থেকে ৩৬ কোটি, ভারত থেকে ১৯ কোটি এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতির প্রবণতায় দেখা যায় সরকারের বৈদেশিক ঋণ এবং এর পরিশোধ দুটোই ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের যে ঋণ ৫০ বিলিয়ন ছিল সেটি ২২-২৩ অর্থবছরে ৬২ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। এই ঋণ পরিশোধের ধারাও ঊর্ধ্বমুখী। পরিশোধের পরিমাণও বেড়ে চলেছে। চলমান অর্থবছরের জন্য তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দ রাখতে হয়েছে বাজেটে। আগামী বছরগুলোতে সেটি চার বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী আয় বাড়ছে না। উল্টো বিদেশে অর্থ পাচার, উচ্চ শিক্ষা ও বিদেশে চিকিৎসার জন্য বিলিয়ন ডলারের বাড়তি ব্যায় হচ্ছে। যেটা দুশ্চিন্তার বিষয়।

বাংলাদেশে বাস্তবতা হলো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব এবং ব্যয় বাড়ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে একটা বড় অঙ্কের ঋণের বোঝা রয়েছে সরকারের কাঁধে। ডলারের রিজার্ভও ক্রমাগত কমছে। সেই সাথে ডলারের দাম বাড়ার কারণে ঋণ পরিশোধে ব্যয় আরো বেড়েছে টাকার অঙ্কে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ অবস্থায় বাংলাদেশে আয় বাড়াতে হবে। জাতীয় আয়ের তুলনায় বাংলাদেশে ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত মাত্র সাড়ে সাত শতাংশ, এটা একটা সমস্যা।

তবে সরকার বলছে, ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের সক্ষমতা আছে। এ নিয়ে তারা মোটেই বিচলিত নয়।