ইরান-ইসরায়েল: সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে ?
- সময় ০৬:৩৬:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪
- / 272
ইসরায়েলে হামলার পর গোটা বিশ্বে এখন আলোচনা ইরানের শক্তি নিয়ে। কিসের উপর ভিত্তি করে এমন সিদ্ধান্ত নিলো মুসলিম এই দেশটি। ইসরায়েলের পাশে পশ্চিমারা কিন্তু ইরানের পাশে কারা? ইসরায়েলের পেছনে স্পষ্টভাবেই দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় রাষ্ট্র। ফলে সামরিক ক্ষমতার হিসাব কষলে ইরান দাঁড়িপাল্লায় কিছুটা পিছিয়ে। ইরান তবে কীসের জোরে এভাবে পাল্টা হামলা চালানোর পথে এল? জেনে নেওয়া যাক, সামরিক শক্তির দিক থেকে কেন মধ্যপ্রাচ্যে ইরান অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র।
আন্তর্জাতিক সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষণ ওয়েবসাইট গেøাবাল ফায়ারপাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের চেয়ে সামরিক শক্তিতে কিছুটা এগিয়ে ইরান। ফায়ার পাওয়ার সূচকে ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৪তম আর ইসরায়েলের অবস্থান ১৭তম।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্সের ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ি, বিশ্বে সামরিক অস্ত্রের সক্ষমতার দিক থেকে ইরান ১৪ নম্বরে আছে কয়েক বছর ধরেই। বরং ইসরায়েলের অবস্থান কিছুটা এগিয়েছে। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েল ছিল ১৮ নম্বরে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা পেয়ে প্রতিনিয়নত নিজেদের সক্ষমতার উন্নয়ন করেছে ইসরায়েল।
হালনাগাদ হিসাব অনুযায়ী, নিয়মিত সেনার সংখ্যা, সামরিক উড়োজাহাজ, পরিবহন উড়োজাহাজ, সাঁজোয়া ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান, সাবমেরিন ও যুদ্ধজাহাজের সংখ্যায় ইসরায়েলের তুলনায় বেশ এগিয়ে ইরান। আবার রিজার্ভ সেনা, যুদ্ধবিমান, হামলায় ব্যবহৃত হেলিকপ্টার ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এগিয়ে আছে ইসরায়েল।
নিয়মিত সেনাতেও ইসরায়েলের চেয়ে অনেক এগিয়ে ইরান। ইরানের যেখানে নিয়মিত সেনার সংখ্যা ৬ লাখ ১০ হাজার, সেখানে ইসরায়েলের ১ লাখ ৭০ হাজার।। তবে রিজার্ভ সেনা ইসরায়েলের কাছে বেশি।
ইসরায়েলের কাছে ইরানের চেয়ে দ্বিগুণ যুদ্ধবিমান রয়েছে। ইসরায়েলের কাছে যুদ্ধবিমান রয়েছে ২৪১টি। ইরানের কাছে রয়েছে ১১৬টি। ইরানের চেয়ে হামলায় ব্যবহৃত হেলিকপ্টারের সংখ্যা ইসরায়েলের বেশি। ইরানের এমন হেলিকপ্টার আছে ১৩টি। ওইদিকে ইসরায়েলের আছে ৪৮টি। অবশ্য ট্যাঙ্ক বেশি আছে ইরানের। দেশটির ট্যাঙ্কের সংখ্যা ১ হাজার ৯৯৬টি। ইসরায়েলের কাছে আছে ১ হাজার ৩৭০টি। ইসরায়েলের চেয়ে ২০ হাজারের বেশি সাঁজোয়া যানও আছে ইরান।
আবার ইসরায়েলের যুদ্ধাস্ত্রের বেশির ভাগই সর্বাধুনিক। তবে ইরানের এক্ষেত্রে নিজস্ব প্রযুক্তি ও রাশিয়া-চীনের কিছুটা সহায়তাই ভরসা। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে অস্ত্র ও সামরিক প্রযুক্তি কেনার বিষয়টি কঠিন হয়ে যায় ইরানের। আর ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় পড়ার পর থেকে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তবে ইরান বসে থাকেনি। নিজেদের সামর্থ্যেই সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে ইরান সফলও হয়েছে বেশ।
পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে সমীহ করা হয় মূলত একটি অস্ত্রের কারণে। সেটি হলো ক্ষেপণাস্ত্র। নিজেদের সামর্থ্যেই এমন সব ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে ফেলেছে ইরান, যেগুলোর কারণে ইসরায়েলসহ অন্যান্য বিরোধী রাষ্ট্রের ইরানকে ভয় না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। যুদ্ধবিমানের সংখ্যা কম থাকায় আকাশপথে শত্রæকে লন্ডভন্ড করা ইরানের পক্ষে কঠিন। ওপরে ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধবিমানের সংখ্যা দেখলেও সেটা বোঝা সহজ। তাই পরিকল্পিতভাবেই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা শক্তিশালী করায় মনোযোগ দেয় ইরান।
দেশটির অন্যতম বিরোধী শক্তি হলো যুক্তরাষ্ট্র। সেই মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের দেওয়া তথ্যই বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষেপণাস্ত্রের সবচেয়ে বড় মজুত আছে ইরানের। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালকের অফিস বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল আছে কেবল ইরানেরই।
ইরানের আধা সরকারি সংবাদমাধ্যম আইএসএনএ একটি হিসাবে, ইসরায়েলে পৌঁছে আঘাত করার মতো ৯ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আছে ইরানের। এগুলোর মধ্যে আছে ‘সেজিল’, ‘খেইবার’ ও ‘হাজ কাসেম’। এটির সীমা প্রায় ১৪০০ কিলোমিটার। সেজিলের সীমা সবচেয়ে বেশি, আড়াই হাজার কিলোমিটার। খেইবারের সীমা প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মূলত উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার নকশায় তৈরি। দেশটির পুরো ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচীতেই চীনের সহায়তা দৃশ্যমান। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষামূলক মিসাইল কর্মসূচীও চালাচ্ছে ইরান। যদিও যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় বিভিন্ন রাষ্ট্র এই কর্মসূচীর চরম বিরোধিতা করে আসছে। তবে সেসবে কান দেয়নি ইরান। বরং তাতে অবিচল থাকাতেই মধ্যপ্রাচ্যের ‘মিসাইলস্টেট’এ পরিণত হয়েছে দেশটি।