ঢাকা ১০:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অভিনেতা থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ১০:২৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪
  • / 276

রোনাল্ড রিগ্যান, একজন সাধারণ অভিনেতা থেকে আমেরিকার ৪০তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার এই যাত্রা, যেন হলিউডের কোনো সিনেমার গল্প। ১৯৩০-এর দশকে হলিউডে পদার্পণ করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা। কিন্তু, তার জীবনের গল্প শুধু চলচ্চিত্রেই সীমাবদ্ধ থাকেনি।

উত্তর ইলিনয়ের একটি ছোট শহরের নিম্নবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা রেগন ১৯৩১ সালে ইউরেকা কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং বেতারের ক্রীড়া ভাষ্যকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

১৯৩৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান এবং সেখানে অভিনেতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ডের সভাপতি হিসেবে রেগন কমিউনিস্ট প্রভাব দূর করতে কাজ করেন। মাত্র কয়েক বছর পর ১৯৫০-এর দশকে তিনি টেলিভিশনে কাজ শুরু করেন।

নুট রকনে, অল আমেরিকান, গেস কিংস রো এর মত জনপ্রিয় ছবিতে তার অভিনয় তাকে এনে দেয় বিপুল খ্যাতি।
কিন্তু হলিউডে রিগ্যানের যাত্রা ছিল শুধুমাত্র শুরু। ১৯৬৪ সালে তার “অ ঞরসব ভড়ৎ ঈযড়ড়ংরহম” বক্তৃতা তাকে রাজনীতির মঞ্চে নিয়ে আসে। ১৯৬৭ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার গর্ভনর নির্বাচিত হন। তার শাসনামলে তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন করেন, যা পরবর্তীতে তার প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যারিয়ারের ভিত্তি স্থাপন করে।

১৯৮০ সালে রিগ্যান রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন। তার প্রচারণার মূলমন্ত্র ছিল “আশার নতুন ভোর”। আমেরিকানদের সামনে একটি নতুন দিশার কথা বলেন তিনি, যেখানে অর্থনৈতিক মুক্তি এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থাকবে সবার আগে।

১৯৮১ সালের ২০ জানুয়ারি, রোনাল্ড রিগ্যান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তার প্রশাসন শুরু হয়েছিল বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে। কিন্তু তার নেতৃত্বে আমেরিকা এক নতুন দিকনির্দেশনা পায়। রিগ্যান তার অর্থনৈতিক নীতি ‘রিগ্যানোমিক্স’ এর মাধ্যমে কর হ্রাস এবং নিয়ন্ত্রণমুক্তির প্রচেষ্টা করেন।

রিগ্যানের শাসনামলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন। বার্লিন দেয়ালের সামনে তার দেয়া এক বক্তব্য ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে ওঠে। রিগ্যান এবং মিখাইল গর্ভাচেভের মধ্যে বিভিন্ন বৈঠক ও আলোচনা পৃথিবীকে একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যায়।

রিগ্যান ১৯৮৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য পুনঃনির্বাচিত হন। তার শাসনামলে তিনি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন এবং সামরিক শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে আমেরিকাকে শক্তিশালী করে তোলেন। তার সময়ে আর্থিক বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের হার বৃদ্ধি পায়।

১৯৮৯ সালে, রিগ্যান প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসর নেন। তার বিদায়ী বক্তৃতায় তিনি আমেরিকানদেরকে আশার বার্তা দেন এবং দেশের প্রতি তার অবিচল ভালোবাসা প্রকাশ করেন। অবসর জীবনে তিনি আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত হন, কিন্তু তার অবদান এবং নেতৃত্বের গুণাবলী তাকে আমেরিকার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।

শেয়ার করুন

অভিনেতা থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট

সময় ১০:২৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪

রোনাল্ড রিগ্যান, একজন সাধারণ অভিনেতা থেকে আমেরিকার ৪০তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার এই যাত্রা, যেন হলিউডের কোনো সিনেমার গল্প। ১৯৩০-এর দশকে হলিউডে পদার্পণ করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা। কিন্তু, তার জীবনের গল্প শুধু চলচ্চিত্রেই সীমাবদ্ধ থাকেনি।

উত্তর ইলিনয়ের একটি ছোট শহরের নিম্নবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা রেগন ১৯৩১ সালে ইউরেকা কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং বেতারের ক্রীড়া ভাষ্যকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

১৯৩৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান এবং সেখানে অভিনেতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ডের সভাপতি হিসেবে রেগন কমিউনিস্ট প্রভাব দূর করতে কাজ করেন। মাত্র কয়েক বছর পর ১৯৫০-এর দশকে তিনি টেলিভিশনে কাজ শুরু করেন।

নুট রকনে, অল আমেরিকান, গেস কিংস রো এর মত জনপ্রিয় ছবিতে তার অভিনয় তাকে এনে দেয় বিপুল খ্যাতি।
কিন্তু হলিউডে রিগ্যানের যাত্রা ছিল শুধুমাত্র শুরু। ১৯৬৪ সালে তার “অ ঞরসব ভড়ৎ ঈযড়ড়ংরহম” বক্তৃতা তাকে রাজনীতির মঞ্চে নিয়ে আসে। ১৯৬৭ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার গর্ভনর নির্বাচিত হন। তার শাসনামলে তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন করেন, যা পরবর্তীতে তার প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যারিয়ারের ভিত্তি স্থাপন করে।

১৯৮০ সালে রিগ্যান রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন। তার প্রচারণার মূলমন্ত্র ছিল “আশার নতুন ভোর”। আমেরিকানদের সামনে একটি নতুন দিশার কথা বলেন তিনি, যেখানে অর্থনৈতিক মুক্তি এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থাকবে সবার আগে।

১৯৮১ সালের ২০ জানুয়ারি, রোনাল্ড রিগ্যান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তার প্রশাসন শুরু হয়েছিল বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে। কিন্তু তার নেতৃত্বে আমেরিকা এক নতুন দিকনির্দেশনা পায়। রিগ্যান তার অর্থনৈতিক নীতি ‘রিগ্যানোমিক্স’ এর মাধ্যমে কর হ্রাস এবং নিয়ন্ত্রণমুক্তির প্রচেষ্টা করেন।

রিগ্যানের শাসনামলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন। বার্লিন দেয়ালের সামনে তার দেয়া এক বক্তব্য ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে ওঠে। রিগ্যান এবং মিখাইল গর্ভাচেভের মধ্যে বিভিন্ন বৈঠক ও আলোচনা পৃথিবীকে একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যায়।

রিগ্যান ১৯৮৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য পুনঃনির্বাচিত হন। তার শাসনামলে তিনি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন এবং সামরিক শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে আমেরিকাকে শক্তিশালী করে তোলেন। তার সময়ে আর্থিক বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের হার বৃদ্ধি পায়।

১৯৮৯ সালে, রিগ্যান প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসর নেন। তার বিদায়ী বক্তৃতায় তিনি আমেরিকানদেরকে আশার বার্তা দেন এবং দেশের প্রতি তার অবিচল ভালোবাসা প্রকাশ করেন। অবসর জীবনে তিনি আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত হন, কিন্তু তার অবদান এবং নেতৃত্বের গুণাবলী তাকে আমেরিকার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।