২৬ তরুণের ‘আরাকান আর্মি’ এখন স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে!
- সময় ১২:১২:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 22
বিশ্বে সামরিক শক্তিতে মিয়ানমারের অবস্থান ৩৫ তম। তাদের রয়েছে আধুনিক অস্ত্রসস্ত্র ও বিশাল সেনাবাহিনী। এ ধরনের একটি শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে আরাকান আর্মি যখন লড়াই শুরু করেন; তখন তাদের স্বশস্ত্র সদস্য সংখ্যা ছিলো মাত্র ২৬ জন। উল্লেখ করার মতো তেমন কোন আধুনিক অস্ত্রও ছিলো না বাহিনীটির কাছে।
২০০৯ সালের ১০ এপ্রিল যাত্রা শুরু করা আরাকান আর্মি বা এএ মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ শহর মংডু বা রাখাইন রাজ্য পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দাবি করেছে। যে কোন সময় তারা স্বাধীণতার ঘোষণা দিতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে। এই শহরটি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা।
মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যের লাইজায় এই সংগঠনটি গঠিত। যার প্রতিষ্ঠাতা নেতৃত্বে ছিলেন তুন মং এবং নি না অং। এই দলটির লক্ষ্য ছিল রাখাইন রাজ্যের জাতিগত রাখাইন জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা।
কাচিন সংঘাতে এএ কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ) এর সাথে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাতমাডো’র বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। বেশিরভাগ এএ সৈন্যরা মূলত কেআইএ মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষিত ছিল।
আরাকান আর্মির ২৬ সদস্যের বিপরীতে তখন মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিলো প্রায় চার লাখ। কিন্তু আরাকান রাজ্যের বাইরের মাটিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কারণে বিদ্রোহী এই গোষ্ঠী প্রথম দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নজর এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল।
২০১৪ সাল থেকে এএ রাখাইন রাজ্যে নিজস্ব প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেছে। মায়ানমার পিস মনিটরের মতে, ২০১৪ সালে এএ এর ১,৫০০ এরও বেশি সৈন্য ছিল। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এএ প্রধান দাবি করেন, তাদের ৩০ হাজারের বেশি সৈন্য রয়েছে।
শুরুতে সীমিত অস্ত্র ও রসদের কারণে এএ ছিলো একটি ছোট গোষ্ঠী। কিন্তু প্রবল মনোভাব এবং গেরিলা যুদ্ধ কৌশল দ্রুতই তাদেরকে পরিচিতি এনে দিয়েছে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর আক্রমণ চালায় আরাকান আর্মি। এরপর রাজ্যটিতে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই শুরু হয়।
এএ হল ইউনাইটেড লীগ অফ আরাকান (ইউএলএ) এর সামরিক শাখা। রাখাইন নৃগোষ্ঠীর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এই সংগঠন নিজেদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে সামনে আনতে চায়।
বর্তমানে এএ’র নেতৃত্ব দিচ্ছেন কমান্ডার ইন চিফ মেজর জেনারেল তোয়ান মারত নাইং এবং ভাইস ডেপুটি কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নিয়ো টোয়ান আং।
২০১৫ সালের এপ্রিলে রাখাইন রাজ্যের কিয়াউকতাউ টাউনশিপ এবং চিন রাজ্যের পালেতওয়া টাউনশিপে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়; এবং এরপর থেকে বাহিনীটি আলোচনায় আসে।
রাখাইন রাজ্যের দুই প্রধান জাতিগোষ্ঠী—রাখাইন এবং রোহিঙ্গা। তবে আরাকান আর্মি মূলত রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়।
চীনের কিছু গোয়েন্দা এবং সামরিক বিশেষজ্ঞদের থেকে আরাকান আর্মি কৌশলগত পরামর্শ পেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই বাহিনী কেবলমাত্র রাখাইন রাজ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা চীন ও ভারত সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে তাদের উপস্থিতি রয়েছে।
মূলত তারা রাখাইন তরুণদের টার্গেট করে তাদের দল ভাড়ি করেছে। এছাড়া স্থানীয় জনগণের সমর্থন আদায়ে আরাকান আর্মি তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলিতে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে।
এসব অর্থায়নের জন্য তারা রাখাইন রাজ্যের কিছু প্রত্যন্ত এলাকায় ইয়াবা এবং অন্যান্য মাদকের কারাখানা স্থাপন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।