ঢাকা ১২:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১০০ টাকা মোবাইল রিচার্জে কাটা যাবে ৫৬ টাকা!

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
  • সময় ০৫:২৯:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • / 26

মোবাইল রিচার্জ (ফাইল ছবি)

মোবাইল ফোন- আজকের দিনে এটি শুধু যোগাযোগের একটি মাধ্যম নয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, এবং বিনোদন – সবকিছুতেই এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এ অবস্থায় গ্রাহকদের পক্ষ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে মোবাইলে কলরেট ও ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তা না কমানোয় বিগত সরকারের সময় বেশ সমালোচনাও হয়েছে।

দীর্ঘদিনের সেই দাবি উপেক্ষা করে আবারও বাড়তে যাচ্ছে গ্রাহকের খরচ। মুঠোফোন গ্রাহকদের সেবার ওপর আরও অতিরিক্ত সম্পূরক কর আরোপ করতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। শিগগিরই এ নিয়ে জারি করা হতে পারে নতুন প্রজ্ঞাপন।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল সেবার সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয় ২০ শতাংশ। কিন্তু এবার তা আরও তিন শতাংশ বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করার প্রস্তাব এসেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ইতোমধ্যেই এই প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

রাজস্ব
রাজস্ব ভবন

বর্তমানে ১০০ টাকার মোবাইল রিচার্জ করলে প্রায় ৫৪ টাকা ৬০ পয়সা কর দিতে হয়। নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এটি বেড়ে দাঁড়াবে ৫৬ টাকা ৩০ পয়সায়। অর্থাৎ, গ্রাহক ১০০ টাকার রিচার্জে ব্যবহার করতে পারবেন মাত্র ৪৩ টাকা ৭০ পয়সা।

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতে মোবাইল সেবার ওপর করের হার তুলনামূলকভাবে কম।

ভারতে মোবাইল সেবার ওপর ১৮ শতাংশ জিএসটি (গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স) প্রযোজ্য, যা বাংলাদেশের তুলনায় কম। পাকিস্তানে মোবাইল সেবার ওপর প্রায় ১৯.৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়, যা বাংলাদেশের চেয়ে কম।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উচ্চ করহার বাংলাদেশের মোবাইল ব্যবহারকারীদের ওপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করের হার যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হলে মোবাইল সেবার ব্যবহার বাড়বে এবং সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত শুধু অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে না, বরং দেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা গত নভেম্বর মাসে ৭৩ লাখ কমেছে। একই সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমেছে ৯৭ লাখ।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচকরা বলছেন, ইন্টারনেট পরিসেবায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে তলানিতে। কিন্তু ভ্যাটের ক্ষেত্রে শীর্ষে। যেখানে দেশের প্রায় ৪৮ শতাংশ মানুষ এখনো ইন্টারনেট সেবার বাইরে, সেখানে এই কর বৃদ্ধি তাদের আরও দূরে সরিয়ে দেবে।

দেশের উন্নয়নের স্বার্থে ইন্টারনেট ও মোবাইল সেবাকে সবার জন্য সহজলভ্য করতে হবে। সেবার খরচ বাড়ানোর পরিবর্তে, সরকার যদি করের কাঠামো পুনর্বিবেচনা করে এবং সেবার মান উন্নত করে, তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে।

 

শেয়ার করুন

১০০ টাকা মোবাইল রিচার্জে কাটা যাবে ৫৬ টাকা!

সময় ০৫:২৯:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫

মোবাইল ফোন- আজকের দিনে এটি শুধু যোগাযোগের একটি মাধ্যম নয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, এবং বিনোদন – সবকিছুতেই এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এ অবস্থায় গ্রাহকদের পক্ষ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে মোবাইলে কলরেট ও ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তা না কমানোয় বিগত সরকারের সময় বেশ সমালোচনাও হয়েছে।

দীর্ঘদিনের সেই দাবি উপেক্ষা করে আবারও বাড়তে যাচ্ছে গ্রাহকের খরচ। মুঠোফোন গ্রাহকদের সেবার ওপর আরও অতিরিক্ত সম্পূরক কর আরোপ করতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। শিগগিরই এ নিয়ে জারি করা হতে পারে নতুন প্রজ্ঞাপন।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল সেবার সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয় ২০ শতাংশ। কিন্তু এবার তা আরও তিন শতাংশ বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করার প্রস্তাব এসেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ইতোমধ্যেই এই প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

রাজস্ব
রাজস্ব ভবন

বর্তমানে ১০০ টাকার মোবাইল রিচার্জ করলে প্রায় ৫৪ টাকা ৬০ পয়সা কর দিতে হয়। নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এটি বেড়ে দাঁড়াবে ৫৬ টাকা ৩০ পয়সায়। অর্থাৎ, গ্রাহক ১০০ টাকার রিচার্জে ব্যবহার করতে পারবেন মাত্র ৪৩ টাকা ৭০ পয়সা।

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতে মোবাইল সেবার ওপর করের হার তুলনামূলকভাবে কম।

ভারতে মোবাইল সেবার ওপর ১৮ শতাংশ জিএসটি (গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স) প্রযোজ্য, যা বাংলাদেশের তুলনায় কম। পাকিস্তানে মোবাইল সেবার ওপর প্রায় ১৯.৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়, যা বাংলাদেশের চেয়ে কম।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উচ্চ করহার বাংলাদেশের মোবাইল ব্যবহারকারীদের ওপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করের হার যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হলে মোবাইল সেবার ব্যবহার বাড়বে এবং সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত শুধু অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে না, বরং দেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা গত নভেম্বর মাসে ৭৩ লাখ কমেছে। একই সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমেছে ৯৭ লাখ।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচকরা বলছেন, ইন্টারনেট পরিসেবায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে তলানিতে। কিন্তু ভ্যাটের ক্ষেত্রে শীর্ষে। যেখানে দেশের প্রায় ৪৮ শতাংশ মানুষ এখনো ইন্টারনেট সেবার বাইরে, সেখানে এই কর বৃদ্ধি তাদের আরও দূরে সরিয়ে দেবে।

দেশের উন্নয়নের স্বার্থে ইন্টারনেট ও মোবাইল সেবাকে সবার জন্য সহজলভ্য করতে হবে। সেবার খরচ বাড়ানোর পরিবর্তে, সরকার যদি করের কাঠামো পুনর্বিবেচনা করে এবং সেবার মান উন্নত করে, তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে।