তারেকের রেড নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়
ইন্টারপোল চাইলেই কি হাসিনাকে ফেরানো সম্ভব?
- সময় ০১:১০:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪
- / 151
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানালেন আইন উপদষ্টো ড. আসিফ নজরুল। জানান, সব পলাতক আসামিকে বিচারের মুখোমুখি করতে ইন্টারপোল এর মাধ্যমে রেড এলার্ট জারি করতে যাচ্ছে অন্তবর্তী সরকার।
রবিবার (১০ নভেম্বর) সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংস্কার কাজ পরিদর্শন শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এ তথ্য জানান।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ই আগস্ট, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুম, হত্যা, গণহত্যাসহ ৬০টিরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও প্রশ্ন হচ্ছে – ইন্টারপোলে চাইলেই কি কাউকে গ্রেফতার করতে পারে? অথবা চাইলেই কি কারো বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করা যায়।
ইন্টারপোল, বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন, একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা বিভিন্ন দেশের পুলিশ বাহিনীকে সমন্বয় করে অপরাধীদের ধরতে সহায়তা করে। বিশ্বের ১৯৪টি দেশ এই সংস্থার সদস্য।
ইন্টারপোলের প্রধান দায়িত্ব হল অপরাধীদের ধরতে আন্তর্জাতিক পুলিশকে সহায়তা করা। তবে ইন্টারপোল নিজে গ্রেফতার করতে পারে না। এক দেশের আসামি যদি অন্য দেশে পালিয়ে যায়, সেই আসামিকে ধরতে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করতে পারে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাইলেই ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা যায় না। কোনো দেশ যদি রেড নোটিশ জারির জন্য আবেদন করে, সেক্ষেত্রে অপরাধীর বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ, মামলা কপি এবং অন্যান্য তথ্য ইন্টারপোলের কাছে প্রদান করতে হয়। ইন্টারপোল সেই সব তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয় যে নোটিশ জারি করা হবে কি না।
যদি ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে, তাহলে সেই নোটিশটি সদস্যভুক্ত সব দেশের কাছে পাঠানো হয়। এই নোটিশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পুলিশবাহিনী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে গ্রেফতারের চেষ্টা করে।
তবে রেড নোটিশ মানেই গ্রেফতারি পরোয়ানা নয়। ইন্টারপোল শুধু নোটিশ জারি করে, কিন্তু অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে কোন দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বাধ্য করতে পারে না। অভিযুক্ত ব্যক্তির গ্রেফতারের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে অভিযুক্ত ব্যক্তি যে দেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন, সে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর।
এছাড়াও, রেড নোটিশ জারি করার ক্ষেত্রে ইন্টারপোল রাজনৈতিক, সামরিক, ধর্মীয় বা বর্ণ পরিচয়ের ভিত্তিতে কোনো নোটিশ জারি করতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে একবার রেড নোটিশ জারি করা হলেও, পরবর্তীতে রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে সেটি তুলে নেওয়া হয়।
তাহলে, প্রশ্ন থেকে যায় – ইন্টারপোলের সহায়তায় শেখ হাসিনা কিংবা অন্য অভিযুক্তদের দেশে ফেরানো যাবে কি?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার করতে হলে যে দেশে অভিযুক্তরা অবস্থান করছেন, সেই দেশের সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ, শেখ হাসিনা এই মুহুর্তে ভারতে অবস্থান করছেন; তাই তার গ্রেফতার সে দেশের সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভর করবে।
আবার বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের সময়ে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা আছে। মাঝে মাঝেই সেসব অপরাধীদের বিভিন্ন দেশে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতেও দেখা যায়। কিন্তু সে সমস্ত দেশ তাদেরকে গ্রেফতারের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
এরপরেও আরেকটি বাঁধা রয়েছে, সেটি হলো বন্ধিবিনিময় চুক্তি। কোন দেশ যদিও অপরাধীকে গ্রেফতার করে থাকে; সে দেশের সাথে বন্ধিবিনিময় চুক্তি না থাকলে অপরাধীদের ফেরানো কঠিন।
তাছাড়া ইন্টারপোলের এই প্রক্রিয়া অনেক জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধীদের ধরতে এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায় হতে পারে, যদি সব পক্ষ আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করে।