ঢাকা ০৮:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাসপাতালের পাশেই ঝুঁকিপূর্ণ মৃত্যুফাঁদ!

শেখ ফজলে রাব্বি, জামালপুর
  • সময় ১১:২১:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারি ২০২৫
  • / 54

ঝুঁকিপূর্ণ মৃত্যুফাঁদ

আব্দুল আজিজ ( ৬৫) যিনি অসুস্থ রোগী। একা একা চলতে পারেন না। নিতে হয় অন্যের সাহায্য। তাকেও চিকিৎসার জন্য পাড়ি দিতে হচ্ছে জরাজীর্ণ বাঁশের সাঁকো। বৃদ্ধ আব্দুল আজিজের মতো জামালপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের এমন আরও অনেক রোগীকে জীবনের প্রয়োজনে এক্স-রে, আল্ট্রাস্নোগ্রাফ, ডায়াগনোসিস করতে পাড়ি দিতে হয় হাসপাতালের সামনে অবস্থিত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো! যার কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এ যেন হাসপাতালের পাশেই ঝুঁকিপূর্ণ মৃত্যুফাঁদ।

হাজারো মানুষের চলাচলের একমাত্র পথ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো জামালপুর ২৫০ হাসপাতালের পূর্ব পার্শ্বে মরাখালের উপর তৈরি দীর্ঘদিনের বাঁশের সাকোটির অবস্থা খুবই নাজুক । বর্তমানে এর খুঁটিগুলো নড়বড়ে হয়ে গেছে, কাঠের পাটাতনগুলো পঁচে গেছে, মানুষের ভারে কাঁপা-কাঁপি করে। তারপরও জীবনের প্রয়োজনে প্রতিদিন পারার করছেন শতশত মানুষ! সাঁকোর পশ্চিম পাশে নগরীর প্রধান সড়ক ও হাসপাতাল। পূর্ব পাশে ফার্মেসী, এক্স-রে, ডায়াগনস্টিক, হোটেল রেস্তোরাঁ, দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও লোকালয়। সবার চলাচলের একমাত্র পথ এই বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকোর উপর দিয়েই রোগীরা চিকিৎসা নিতে যায়, অসুধ কিনতে যায়, ডাক্তার নার্সরা চা নাস্তা করতে যায়, ওপারে ছেলে মেয়েরা এপারে স্কুল কলেজে আসে, এপারের ছেলে মেয়েরা ওপারে মাদ্রাসায় যায়, লোকালয়ের লোকগুলো তাদের ক্ষেতে উৎপাদিত ফসলগুলো হাটবাজারে নেয়। অথচ চলাচলের জন্য এতো জনগুরুত্বপূর্ণ এই বাঁশের সাকোটি আজও পরিবর্তন হয়নি। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার করছে হাজারো মানুষ। চোখের সামনে এজনদুর্ভোগ যেন কারো নজরে পড়ছে না!

সাঁকোর ওপারে বসবাসকারী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ইমাম হাফেজ মাওলানা আল-আমিন বিন হাবিব বলেন, সাকোর ওপারে আমার বসবাস। এপারে কর্মস্থল। জীবনের প্রয়োজনে প্রতিদিনই আমাদেরকে সাকোর উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু, বর্তমানে সাকোটির অবস্থা খুবই নাজুক। খুঁটিগলো নড়বড়ে হয়ে গেছে, কাঠ পঁচে গেছে, মাঝে মধ্যে ভেঙ্গেও গেছে। হাঁটতে গেলে কাঁপে, আমাদেরও ভয় করে। মনে হয় এই বুঝি ভেঙ্গে পড়ল। এমতাবস্থায় সাকোটিতে চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরেছে। বর্ষা মৌসুমে এর অবস্থা আরও খারাপ হয়। তাই, এইখানে পাকা একটি ফুট ব্রিজ নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

কৃষক জুয়েল বলেন, আমি একজন কৃষক। এছাড়া এছাড়া সাকোর পূর্ব পাশে আমার একটা ছোট একটা চা পানের দোকান আছে। এখানে আমার মতো অনেকেরই বসবাস। আমাদের সবার যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন এই বাঁশেরসাকো। আমরা চরবাসী ছাড়াও হাসাপাতালে বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী সাধারণরাও এই সাঁকো ব্যবহার করে। তাই, আমাদের সবার স্বার্থে বাঁশের সাকোটির পরিবর্তে এখানে একটি পাকা ফুট ব্রিজ নির্মাণের দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের।

আরেক হোটেল ব্যবসায়ী মোঃ রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, ফখরুদ্দীন সরকারের আমলে হাসপাতালের সামনে রাস্তার পাশে থাকা আমাদের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দিয়েছে তৎকালীন সরকার। তারপর থেকেই অগত্যা আমরা মরাখালের উপর বাঁশের সাকো তৈরি ওপারে দোকানপাট করে আসছি। এই সময়ের মধ্যে আমরা ব্যবসায়ী ও চরবাসী এখানে একটা ফুট ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। বিগত সরকারের আমলে অনুমোদন পেয়েছিল। সয়ল টেস্টসহ সকল পরীক্ষা নিরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু, ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার জোরে ব্রিজটি সরিয়ে নিয়ে অন্যত্র নির্মাণ করেছেন। অথচ সেই জায়গার চাইতে এই জায়গাটি অতি-জনগুরুত্বপূর্ণ।

এ ব্যাপারে, জামালপুর পৌর প্রশাসক মৌসুমি খানম বলেন, সময় সুযোগ ও প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

শেয়ার করুন

হাসপাতালের পাশেই ঝুঁকিপূর্ণ মৃত্যুফাঁদ!

সময় ১১:২১:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারি ২০২৫

আব্দুল আজিজ ( ৬৫) যিনি অসুস্থ রোগী। একা একা চলতে পারেন না। নিতে হয় অন্যের সাহায্য। তাকেও চিকিৎসার জন্য পাড়ি দিতে হচ্ছে জরাজীর্ণ বাঁশের সাঁকো। বৃদ্ধ আব্দুল আজিজের মতো জামালপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের এমন আরও অনেক রোগীকে জীবনের প্রয়োজনে এক্স-রে, আল্ট্রাস্নোগ্রাফ, ডায়াগনোসিস করতে পাড়ি দিতে হয় হাসপাতালের সামনে অবস্থিত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো! যার কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এ যেন হাসপাতালের পাশেই ঝুঁকিপূর্ণ মৃত্যুফাঁদ।

হাজারো মানুষের চলাচলের একমাত্র পথ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো জামালপুর ২৫০ হাসপাতালের পূর্ব পার্শ্বে মরাখালের উপর তৈরি দীর্ঘদিনের বাঁশের সাকোটির অবস্থা খুবই নাজুক । বর্তমানে এর খুঁটিগুলো নড়বড়ে হয়ে গেছে, কাঠের পাটাতনগুলো পঁচে গেছে, মানুষের ভারে কাঁপা-কাঁপি করে। তারপরও জীবনের প্রয়োজনে প্রতিদিন পারার করছেন শতশত মানুষ! সাঁকোর পশ্চিম পাশে নগরীর প্রধান সড়ক ও হাসপাতাল। পূর্ব পাশে ফার্মেসী, এক্স-রে, ডায়াগনস্টিক, হোটেল রেস্তোরাঁ, দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও লোকালয়। সবার চলাচলের একমাত্র পথ এই বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকোর উপর দিয়েই রোগীরা চিকিৎসা নিতে যায়, অসুধ কিনতে যায়, ডাক্তার নার্সরা চা নাস্তা করতে যায়, ওপারে ছেলে মেয়েরা এপারে স্কুল কলেজে আসে, এপারের ছেলে মেয়েরা ওপারে মাদ্রাসায় যায়, লোকালয়ের লোকগুলো তাদের ক্ষেতে উৎপাদিত ফসলগুলো হাটবাজারে নেয়। অথচ চলাচলের জন্য এতো জনগুরুত্বপূর্ণ এই বাঁশের সাকোটি আজও পরিবর্তন হয়নি। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার করছে হাজারো মানুষ। চোখের সামনে এজনদুর্ভোগ যেন কারো নজরে পড়ছে না!

সাঁকোর ওপারে বসবাসকারী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ইমাম হাফেজ মাওলানা আল-আমিন বিন হাবিব বলেন, সাকোর ওপারে আমার বসবাস। এপারে কর্মস্থল। জীবনের প্রয়োজনে প্রতিদিনই আমাদেরকে সাকোর উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু, বর্তমানে সাকোটির অবস্থা খুবই নাজুক। খুঁটিগলো নড়বড়ে হয়ে গেছে, কাঠ পঁচে গেছে, মাঝে মধ্যে ভেঙ্গেও গেছে। হাঁটতে গেলে কাঁপে, আমাদেরও ভয় করে। মনে হয় এই বুঝি ভেঙ্গে পড়ল। এমতাবস্থায় সাকোটিতে চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরেছে। বর্ষা মৌসুমে এর অবস্থা আরও খারাপ হয়। তাই, এইখানে পাকা একটি ফুট ব্রিজ নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

কৃষক জুয়েল বলেন, আমি একজন কৃষক। এছাড়া এছাড়া সাকোর পূর্ব পাশে আমার একটা ছোট একটা চা পানের দোকান আছে। এখানে আমার মতো অনেকেরই বসবাস। আমাদের সবার যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন এই বাঁশেরসাকো। আমরা চরবাসী ছাড়াও হাসাপাতালে বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী সাধারণরাও এই সাঁকো ব্যবহার করে। তাই, আমাদের সবার স্বার্থে বাঁশের সাকোটির পরিবর্তে এখানে একটি পাকা ফুট ব্রিজ নির্মাণের দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের।

আরেক হোটেল ব্যবসায়ী মোঃ রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, ফখরুদ্দীন সরকারের আমলে হাসপাতালের সামনে রাস্তার পাশে থাকা আমাদের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দিয়েছে তৎকালীন সরকার। তারপর থেকেই অগত্যা আমরা মরাখালের উপর বাঁশের সাকো তৈরি ওপারে দোকানপাট করে আসছি। এই সময়ের মধ্যে আমরা ব্যবসায়ী ও চরবাসী এখানে একটা ফুট ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। বিগত সরকারের আমলে অনুমোদন পেয়েছিল। সয়ল টেস্টসহ সকল পরীক্ষা নিরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু, ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার জোরে ব্রিজটি সরিয়ে নিয়ে অন্যত্র নির্মাণ করেছেন। অথচ সেই জায়গার চাইতে এই জায়গাটি অতি-জনগুরুত্বপূর্ণ।

এ ব্যাপারে, জামালপুর পৌর প্রশাসক মৌসুমি খানম বলেন, সময় সুযোগ ও প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।