হাওরে শ্রমিকের অভাবে বোরো ধান চাষ ব্যাহত
- সময় ১১:১২:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারি ২০২৫
- / 26
নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে বোরো ধান রোপণ শুরু হয়েছে। তবে শ্রমিকসংকট ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি কৃষকদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকরা আসতেন। কিন্তু এবার তা না আসায় ধান রোপণের কাজ ধীরগতিতে চলছে। শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেচ, সার ও বীজের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে বিলম্বের কারণে কৃষকরা দুর্ভোগে পড়েছেন।
হাওরাঞ্চলে গত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ধান রোপণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে শ্রমিকের অভাবে কাজের গতি কিছুটা ধীর কমে গেছে। স্থানীয় কৃষকরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকরা হাওরে ধান রোপণের জন্য আসতেন। কিন্তু এবার ওই শ্রমিকরা না আসায় রোপণকাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বেড়ে গেছে।
বিশেষ করে মোহনগঞ্জ, মদন ও খালিয়াজুরী উপজেলায় সর্বোচ্চ পরিমাণ জমিতে বোরো ধান চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মোহনগঞ্জে ১৬ হাজার ৯৮০ হেক্টর, মদনে ১৭ হাজার ৬৩০ ও খালিয়াজুরীতে ২০ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। এখন ধান রোপণের কাজ চলছে। কিন্তু শ্রমিকসংকট ও খরচ বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা দুশ্চিন্তার পড়ছেন।
কৃষকরা জানান, আগে একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ছিল ৫০০-৬০০ টাকা। তবে এখন তা বেড়ে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায় পৌঁছেছে। শ্রমিকের অভাবের কারণে ধান রোপণের গতি কমে গেছে। এদিকে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে, অন্যদিকে সেচ খরচ, সার ও বীজের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকরা ধান চাষে বেশি খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ ছাড়া গত বর্ষায় অকালবন্যা ও হাওরের পানি সঠিক সময়ে না নামা ও ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ বিলম্ব হয়েছে। হাওরের জমিতে পানি জমে থাকায় কৃষিকাজ জটিল হয়ে উঠেছে। এসব সমস্যার সমাধানে স্থায়ী ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের গুরুত্ব দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষক সুশীল তালুকদার বলেন, ‘এত কষ্ট করে শ্রমঘাম দিয়ে কাজ করে ধান চাষ করতে হয়। কিন্তু বন্যা হলে সারা বছরের শ্রম ও খরচ নষ্ট হয়ে যায়।’ তিনি জানান, স্থায়ী পাকা বাঁধ নির্মাণ ছাড়া বন্যার কবল থেকে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া এই অঞ্চলে আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হলে শ্রমিকসংকট সমাধান হতে পারে।
এ ছাড়া অতিরিক্ত শীতে ধানের চারা সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। কৃষকরা জানান, শীতের কারণে অনেক সময় ধান নষ্ট হয়ে যায়। এটি বড় ক্ষতির কারণ। সে ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বিশেষ করে হাইব্রিড ধান চাষ, ধান রোপণের সঠিক সময় ও সেচব্যবস্থার উন্নতি করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার খুরশিমূল গ্ৰামের সামনের ডিঙিউথা হাওর অঞ্চলে সরেজমিনে দেখা গেছে কৃষকরা দলবেঁধে ক্ষেত থেকে ধানের চারা তুলছেন। দলবেঁধে ক্ষেতে ধান রোপন করছেন। কেউবা ধান ক্ষেতে স্থানীয় নলকূপ দিয়ে পানি দিচ্ছেন। তবে কৃষকদের লম্বা সারি বেঁধে যে ধান রোপন করার দৃশ্য খুব কমই দেখা গেছে। জমির মালিকদের ভাষ্য গত কয়েক বছর ধরে এলাকায় বাইরের শ্রমিকদের আনাগোনা একেবারেই কমে গেছে। ফলে তাদের জমিতে ধান রোপনের কাজ ধীরগতিতে চলছে।
মদনের কৃষক ওয়াজেদ আলী জানান, বেড়েছে হাওরে বোরো ধান রোপনের খরচ। একজন শ্রমিক রোজ যেখানে ৫শ টাকা নিতে, এখন তাকে রোজ দিতে হয় ৬ শ টাকা থেকে ৯শ টাকা পর্যন্ত। তাও শ্রমিকের অভাবে রোপন কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। হাওরে আধুনিক রোপন মেশিন সরবরাহ করতে পারলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব হতো।সেচ খরচ ও আগের তুলনায় বেড়েছে। তার ওপর যখন কৃষক ক্ষেত থেকে নতুন ধান বিক্রি করেন তখন দাম কমে যায়। আবার যখন তারা ধান ক্রয় করেন তখন দাম বেড়ে যায়।
অপর কৃষক প্রেমানন্দ শীল জানান,সার , বীজের দাম বেড়েছে। বেড়েছে বিদ্যুতের সাথে জমিতে সেচ দেয়ার খরচ। শ্রমিকের অভাবে বেড়েছে ধান রোপনের খরচ। ফলে জমির মালিকদের বোর ধান চাষের খরচ অনেকটাই বেড়ে গেছে। ধান চাষ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের কৃষকদের। অনেকেই আবার আত্মীয়ের সহযোগিতায় ধান রোপন করছেন। তবে এখন আর কেউ বিনামূল্যে দিন চাষের কাজে সাহায্য করতে আসে না। তাদেরকে পরিমাণে কিছুটা কম হলেও ও আর্থিক সুবিধা দিতে হয়।
খালিয়াজুরী এলাকার কৃষক জয়নাল মিয়া জানান, এত কষ্ট করে শ্রমঘাম দিয়ে খরচ করে এখন বোর ধান চাষ করতে হয়। এরপর ও এবছর এখনো ফসল রক্ষা বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হয়নি। অকাল বন্যায় তলিয়ে যায় কৃষকের কষ্টের ফসল। তখন দুর্দশার শেষ নেই। হাওরে বোর ধান রক্ষা করতে স্থায়ী পাকা বাঁধ নির্মাণ কাজ জরুরি হয়ে পড়েছে।এর কোন বিকল্প নেই।তা না হলে অস্থায়ী মাটির তৈরি বাঁধ ভেঙে বন্যার পানিতে জমির ধান তলিয়ে যাবেই ,কারো কিছু করার থাকে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান,গত বন্যার কারণে এ বছর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। দরিদ্র কৃষকদের হাইব্রিড ধানের বীজ দেয়া হয়েছে। জেলায় এবছর ১৮ লাখ ৫৩ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। সতর্কতা হিসেবে সরকার নির্ধারিত ধানের চারা রোপন করা উচিত, নতুবা ফলন কম হবে। অতিরিক্ত ঠান্ডার মধ্যে রোপন করা ও ঠিক নয় এতে ধানের চারা সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না, অনেক সময় ধান নষ্ট হয়ে যায়।