হলো না বই উৎসব: শিক্ষা উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ
- সময় ০২:৩২:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারি ২০২৫
- / 28
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জানুয়ারির ১ দিন মানেই সারাদেশে চলতো বই উৎসব। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশের দৃশ্যপট অনেক বদলে গেছে। তাই এবার হয়নি বই উৎসব। এর কারণগুলোও দাঁড় করিয়ে ব্যাখা দেয়া হয়েছে। তাই বছরের প্রথম দিনই বিষয়টি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
এখনই (শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রথমদিনে) সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যের সব পাঠ্যবই তুলে দিতে না পারায় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। একইসঙ্গে এবার কেন পাঠ্যবই ছাপায় দেরি হয়েছে তারও কারণ ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
আজ বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিউটে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইটে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যবই নিয়ে কথা দেন। একই অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও’র (মান্থলি পে অর্ডার) অর্থ এবং অবসর ও কল্যাণ সুবিধা ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সপার) পদ্ধতিতে পাঠানোর কার্যক্রমও উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপদেষ্টা।
পাঠ্যবই ছাপা ও তা শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের বইগুলো ছাত্রছাত্রীদের হাতে এখনই সব দিতে পারা গেল না, এ জন্য আমি তাদের অভিভাবকদের কাছে এবং তাদের কাছে আন্তরিকভাবে দু:খ প্রকাশ করছি। তবে শান্তনা যে যখন বইগুলো পাবে তোমরা, আগের থেকে সুন্দর দেখাবে এবং বছরের মাঝখানে পাতাগুলো ছিড়ে যাবে না।’
শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই প্রণয়ন এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করে এনসিটিবি। করোনাকাল ছাড়া ২০১০ সাল থেকে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসব করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দেওয়ার বিষয়টি অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়। তবে কোনো কোনো বছর কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয়ও হয়েছে। যেমন সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪ সালের প্রথম দিনে সারা দেশের বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই বিতরণ শুরু হলেও প্রথম দিনে একেবারে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই তুলে দেওয়া যায়নি।
তবে এবার নতুন বছরের জন্য সমস্যাটি আরও তীব্র হয়েছে। এনসিটিবি সূত্র মতে, নতুন শিক্ষাবর্ষে চার কোটির মতো শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য ৪০ কোটির বেশি বই ছাপানো হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা ৯ কোটি ৬৪ লাখের মতো। এর মধ্যে গত সোমবার পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে পাঠানোর জন্য ছাড়পত্র হয়েছে ৩ কোটি ৯৪ লাখ বইয়ের; আর মাধ্যমিকে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ৯৬ লাখের মতো। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ছাড়পত্র হয়েছে ২ কোটি ৮ লাখ ২৪ হাজারের মতো। অর্থাৎ বিপুলসংখ্যক বই এখনো উপজেলায় পাঠানো যায়নি। ফলে বছরের প্রথম দিনে অনেক শিক্ষার্থী একটি করেও বই পাচ্ছে না।
আজকের অনুষ্ঠানে বই ছাপার কাজে বিলম্বের কিছু কারণ ব্যাখ্যা করেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, এ বইগুলো ছাপা, এটি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের মতো অবস্থা হয়েছে। এখানে প্রথমত হলো বিদেশে বই ছাপানো হবে না। অনিবার্য কারণে শিক্ষাক্রমও পরিবর্তন করা হয়েছে, এতে বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। যে সময় থেকে এই কাজ শুরু করা হয়েছে তখন সময়ও খুব কম ছিল। তার মধ্যে আবার অনেক বই পরিমার্জন করতে হয়েছে; যাতে দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষভাবে যেন বইয়ে থাকে…সেগুলো শুদ্ধ করা হয়েছে। তারপর আবার উন্নতমানের ছাপা, উন্নতমানের কাগজ, উন্নতমানের মলাটের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। আরেকটি বড় সমস্যা হলো এনটিসিবিতে যাতে এত দিন ধরে কাজ করেছেন, তাদের অনেককে অনিবার্য কারণে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে আগে অভিজ্ঞতা ছিল এমন মানুষদেরই বসানো হয়েছে। কিন্তু গত বেশ কয়েক বছর ধরে মুদ্রণ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কীভাবে বোঝাপড়া করতে হয়, এটি তাদের অভিজ্ঞতায় নেই। বই ছাপার এই প্রক্রিয়ায় নিজেকেও যুক্ত করতে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘আমরা সব বইয়ে নিয়ে পয়লা জানুয়ারি সব বিদ্যালয়ে পৌঁছতে পারিনি। কিন্তু আমরা চেষ্টা করেছি প্রতিটি জেলার প্রতিটি উপজেলায় কিছু কিছু শিক্ষার্থী যেন আজকের দিনে (১ জানুয়ারি) বই পায়। তবে আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি জানুয়ারি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে চেষ্টা করছি কীভাবে সব বই পৌঁছে দেওয়া হয়।’
অনুষ্ঠানে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ৪১ কোটি বইয়ের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬ কোটি বই গেছে (উপজেলা পর্যায়ে)। আরও ৪ কোটি বই ট্রাকে ওঠার অপেক্ষায় আছে, আজকের মধ্যে হয়তো এগুলো চলে যাবে। ৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রাথমিকের বাকি সব বই, ১০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের প্রায় আটটি বই এবং ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই যাবে। এ লক্ষ্যে তাঁরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ বি এম রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে) এম আমিনুল ইসলাম, কারিগরি ও মাদ্রাসাশিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলাম প্রমুখ।