০১:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বাধীন তদন্ত কমিশনের অনুসন্ধানে হাসিনা-মইন

সিনিয়র প্রতিবেদক
  • সময় ০৬:৩১:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 38

শেখ হাসিনা- মইন ইউ আহমেদ

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় তথ্য সংগ্রহের জন্য বেশ কয়েকটি বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। এই উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিদ্রোহে জড়িত ব্যক্তিদের অবস্থান শনাক্ত ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনুসন্ধানের জন্য তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও চলছে।

তদন্তের অগ্রগতি ও বিদেশি দূতাবাসের সহায়তা

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিআরআইসিএম ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান এই তথ্য জানান। তিনি জানান, পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সেনাসদস্যসহ ৩৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “যেসব ব্যক্তির তথ্য তদন্তের জন্য প্রয়োজন, তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের সংখ্যা ও পরিচয় এই মুহূর্তে প্রকাশ করা হচ্ছে না।”

তদন্ত কমিশন বিদেশি দূতাবাসগুলোর সহায়তায় বিদ্রোহের ঘটনায় পলাতকদের অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। কমিশন সভাপতি বলেন, “আমরা নিশ্চিত হতে চাই, যাদের আমাদের প্রয়োজন, তারা যেন দেশে ফেরে এবং তদন্তের মুখোমুখি হয়।”

মইন ও হাসিনার ভূমিকা

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জেনারেল মইন ইউ আহমেদ এবং শেখ হাসিনার ভূমিকা তদন্তের জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। কমিশনের ভাষ্যমতে, বিদ্রোহের সময় কেন সামরিক অভিযান ব্যর্থ হলো এবং কেন এত সেনা কর্মকর্তা নিহত হলেন, তা জানা জরুরি।

তিনি বলেন, “জেনারেল মইন বই লিখেছেন এবং ইউটিউবে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তদন্তে সহযোগিতা করবেন। তবে তিনি যা বলেছেন, তাই কেন আমরা বিশ্বাস করবো? তাকে সামনে আসতে হবে এবং আমাদের সামনে বলতে হবে। তার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য দূতাবাসকে চিঠি দিয়েছি, তবে এখনো কোনো উত্তর পাইনি।”

শেখ হাসিনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা কেবল বিদেশে পলাতকদের শনাক্ত ও ফিরিয়ে আনার জন্য দূতাবাসগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানে, আমাদের কাকে কবে দরকার হবে।”

তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান
তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান

তদন্তের চ্যালেঞ্জ ও সময়সীমা

বিডিআর বিদ্রোহের বিষয়ে অতীতে গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হচ্ছে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর তদন্ত রিপোর্ট কমিশনের হাতে এসেছে, তবে সচিব আনিসুজ্জামানের রিপোর্টের কেবল সংক্ষিপ্তসার পাওয়া গেছে।

বিদ্রোহের ঘটনায় কারাগারে থাকা ও সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্তদের সঙ্গে তদন্ত কমিশন যোগাযোগ করবে কি না—এই প্রশ্নে কমিশনের সভাপতি বলেন, “আমরা মামলা সংক্রান্ত তদন্ত করছি না, তবে যারা তথ্য দিতে চান, তারা আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানাতে পারেন।”

কমিশন ৯০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছে, তবে বিদেশে পলাতকদের শনাক্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে সময় বেশি লাগতে পারে।

বিদ্রোহে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অনুসন্ধান

২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল কি না, তা কমিশন খতিয়ে দেখছে। মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমান বলেন, “আমাদের কাজ হলো সব তথ্য উদঘাটন করা। যদি কোনো দেশ, ব্যক্তি বা সংস্থা জড়িত থাকে, তা তদন্তে প্রকাশ পাবে।”

ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা সংগ্রহ

বিডিআর বিদ্রোহের সময় যারা জীবিত ফিরে এসেছেন, তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে শহীদ মেজর জেনারেল শাকিলের ছেলেসহ তিনজন শহীদ সেনা কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য শোনা হয়েছে। তদন্ত কমিশন আরও ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা করছে।

তদন্ত সংক্রান্ত তথ্য ও মতামত প্রদানের জন্য কমিশনের ওয়েবসাইট (https://www.bdr-commission.org/) চালু করা হয়েছে, যেখানে জনগণের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

শেয়ার করুন

স্বাধীন তদন্ত কমিশনের অনুসন্ধানে হাসিনা-মইন

সময় ০৬:৩১:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় তথ্য সংগ্রহের জন্য বেশ কয়েকটি বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। এই উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিদ্রোহে জড়িত ব্যক্তিদের অবস্থান শনাক্ত ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনুসন্ধানের জন্য তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও চলছে।

তদন্তের অগ্রগতি ও বিদেশি দূতাবাসের সহায়তা

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিআরআইসিএম ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান এই তথ্য জানান। তিনি জানান, পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সেনাসদস্যসহ ৩৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “যেসব ব্যক্তির তথ্য তদন্তের জন্য প্রয়োজন, তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের সংখ্যা ও পরিচয় এই মুহূর্তে প্রকাশ করা হচ্ছে না।”

তদন্ত কমিশন বিদেশি দূতাবাসগুলোর সহায়তায় বিদ্রোহের ঘটনায় পলাতকদের অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। কমিশন সভাপতি বলেন, “আমরা নিশ্চিত হতে চাই, যাদের আমাদের প্রয়োজন, তারা যেন দেশে ফেরে এবং তদন্তের মুখোমুখি হয়।”

মইন ও হাসিনার ভূমিকা

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জেনারেল মইন ইউ আহমেদ এবং শেখ হাসিনার ভূমিকা তদন্তের জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। কমিশনের ভাষ্যমতে, বিদ্রোহের সময় কেন সামরিক অভিযান ব্যর্থ হলো এবং কেন এত সেনা কর্মকর্তা নিহত হলেন, তা জানা জরুরি।

তিনি বলেন, “জেনারেল মইন বই লিখেছেন এবং ইউটিউবে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তদন্তে সহযোগিতা করবেন। তবে তিনি যা বলেছেন, তাই কেন আমরা বিশ্বাস করবো? তাকে সামনে আসতে হবে এবং আমাদের সামনে বলতে হবে। তার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য দূতাবাসকে চিঠি দিয়েছি, তবে এখনো কোনো উত্তর পাইনি।”

শেখ হাসিনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা কেবল বিদেশে পলাতকদের শনাক্ত ও ফিরিয়ে আনার জন্য দূতাবাসগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানে, আমাদের কাকে কবে দরকার হবে।”

তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান
তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান

তদন্তের চ্যালেঞ্জ ও সময়সীমা

বিডিআর বিদ্রোহের বিষয়ে অতীতে গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হচ্ছে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর তদন্ত রিপোর্ট কমিশনের হাতে এসেছে, তবে সচিব আনিসুজ্জামানের রিপোর্টের কেবল সংক্ষিপ্তসার পাওয়া গেছে।

বিদ্রোহের ঘটনায় কারাগারে থাকা ও সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্তদের সঙ্গে তদন্ত কমিশন যোগাযোগ করবে কি না—এই প্রশ্নে কমিশনের সভাপতি বলেন, “আমরা মামলা সংক্রান্ত তদন্ত করছি না, তবে যারা তথ্য দিতে চান, তারা আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানাতে পারেন।”

কমিশন ৯০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছে, তবে বিদেশে পলাতকদের শনাক্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে সময় বেশি লাগতে পারে।

বিদ্রোহে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অনুসন্ধান

২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল কি না, তা কমিশন খতিয়ে দেখছে। মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমান বলেন, “আমাদের কাজ হলো সব তথ্য উদঘাটন করা। যদি কোনো দেশ, ব্যক্তি বা সংস্থা জড়িত থাকে, তা তদন্তে প্রকাশ পাবে।”

ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা সংগ্রহ

বিডিআর বিদ্রোহের সময় যারা জীবিত ফিরে এসেছেন, তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে শহীদ মেজর জেনারেল শাকিলের ছেলেসহ তিনজন শহীদ সেনা কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য শোনা হয়েছে। তদন্ত কমিশন আরও ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা করছে।

তদন্ত সংক্রান্ত তথ্য ও মতামত প্রদানের জন্য কমিশনের ওয়েবসাইট (https://www.bdr-commission.org/) চালু করা হয়েছে, যেখানে জনগণের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।