ঢাকা ০১:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৌদির কর্মকান্ডে বিব্রত মুসলিম বিশ্ব | সৌদি আরবে পাপ বাড়ছে

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৮:০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪
  • / 191

সৌদি

সারাবিশ্বের মুসলিমদের এক আবেগের নাম সৌদি আরব। দেশটির মক্কা ও মদিনাকে বলা হয় পবিত্র নগরী। পশ্চিমাদের চোখে সৌদি আরব মুসলিম রক্ষণশীল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। অনেকটা ইসলামি শরিয়া আইনে পরিচালিত হয় দেশটির বিচারকার্য ও দৈনন্দিন জীবনযাপন। এভাবেই চলছে শতাব্দীর পর শতাব্দী।

দেশটি রাজতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত। বর্তমানে শাসক হিসেবে আছেন সালমান বিন আবদুল আজিজ। কিন্তু তাকে পরিচালনা করেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ক্রাউন প্রিন্সের হাত ধরেই বড় ধরনের পরিবর্তণের দিকে যাত্রা শুরু করেছে দেশটি। এক দশক আগের সৌদি আরবের সাথে বর্তমান দেশটির তৈরি হয়েছে বিশাল ব্যাবধান।

বিনোদন ও ছুটি কাটানোর জন্য পশ্চিমাদের দেখানো পথে হাটতে শুরু করেছে দেশটি। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো সিনেমা হল চালু করা হয় দেশটিতে। বর্তমানে দেশটিতে অন্তত ৬৬টি সিনেমা হল রয়েছে; যেগুলোতে মোট ৬১৮টি পর্দা রয়েছে। ২২টি শহরজুড়ে থাকা এসব সিনেমা হলে ৬৩ হাজার ৩০০ আসন রয়েছে, যা আরব বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ।

গত ছয় বছর সৌদিতে প্রায় এক হাজার ৯০০ সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছে। যার মধ্যে ৪৫টি সৌদির নিজস্ব। এসব সিনেমা প্রদর্শনীর মাধ্যমে আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন রিয়াল। শুধু গত বছর দেশটিতে ১৬ হাজার ৬০০ মিলিয়ন টিকিট বিক্রি হয়েছে।

এছাড়া ২০২১ সালে সৌদি আরব আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু করেন। যেখানে বিশাল অঙ্ক বিনিয়োগ করা হয়। সৌদি আরবের ৪২টি শহরে মোট ৪৭০টি বিনোদন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেখানে নারীপুরুষসহ সবার যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সে কারনে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রেষ্ঠ বিনোদন কেন্দ্র হতে চলেছে সৌদি আরব।

সিনেমা হলের অনুমতির পর সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের একটি অভিজাত এলাকায় নাইটক্লাব চালু করা হয়েছে। বিস্ট হাউস নামে এ নাইটক্লাবে নারীদেরও প্রবেশাধিকার রয়েছে। এ ছাড়া এতে রয়েছে মিউজিক ভেন্যু, একাধিক স্টুডিও এবং ডিজে পার্টির ব্যবস্থা। দেশটিতে আইনত মদ নিষিদ্ধ হওয়ায় ক্লাবেও মদ নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে। তবে আগত অতিথিদের মকটেল ও বিভিন্ন অ্যালকোহলযুক্ত পানি পানের ব্যবস্থা থাকবে।

দেশটিতে চালু হওয়া এ নাইট ক্লাবে সদস্য হতে হলে প্রতিবছর খরচ করতে হবে এক হাজার ৮০০ ইউরো। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ ৪২ হাজার ৪৬৭ টাকা।

মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে একসময় নারীদের জন্য নানা বিধি-নিষেধ ছিল। নারীদের চাকরি তো দূরের কথা, স্টেডিয়ামে খেলা দেখা বা সড়কে গাড়ি নিয়ে বের হওয়াও নিষিদ্ধ ছিল। তবে এসব রক্ষণশীলতা থেকে বের হয়ে আসছে দেশটি। এরই ধারাবাহিকতায় নারীদের গাড়ি চালানোর পাশাপাশি ব্যবসা করারও অনুমতি দেয়া হয়েছে।

রিয়াদ এখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৃহত্তর প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় জড়িত। অন্যদিকে চীনের সঙ্গেও তার সম্পর্ক রয়েছে। চীন এখন সৌদি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। একই সঙ্গে সৌদি আরব তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্ধী ইরানের সঙ্গে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে।

সৌদি বন্ড মার্কেটও দ্রæত বিকশিত হচ্ছে। দেশটির ৩০ বছরের সৌদি কাগজের বন্ড অনুরূপ মার্কিন বন্ডের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি সুদ দেয়। দেশটির সরকারি ঋণ এখনো জিডিপির ৩০ শতাংশেরও কম। আর রিজার্ভের পরিমাণ ৪৪ হাজার বিলিয়ন ডলার।

শেয়ারবাজার আঞ্চলিক শেয়ারবাজারগুলোর তুলনায় বলা যায় টিমটিম করেই জ্বলছিল। কিন্তু ২০২২ সালের পর থেকে এই বাজারে ৭০টি কোম্পানি গণপ্রস্তাব নিয়ে এসেছে।

সৌদি যুব সমাজ; যাদের বয়স ৩১ বছরের মধ্যে তারা ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে এমবিএস নামে অভিহিত করেন। এই তরুণরা এমবিএস দ্বারা আনা সমস্ত পরিবর্তন উপভোগ করছে। অন্যদিকে যাদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি, তাঁরা রীতিমতো ঘৃণা করেন তাঁকে। তারা সৌদি ক্রাউনের কর্মকান্ডে বিব্রত।

শেয়ার করুন

সৌদির কর্মকান্ডে বিব্রত মুসলিম বিশ্ব | সৌদি আরবে পাপ বাড়ছে

সময় ০৮:০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪

সারাবিশ্বের মুসলিমদের এক আবেগের নাম সৌদি আরব। দেশটির মক্কা ও মদিনাকে বলা হয় পবিত্র নগরী। পশ্চিমাদের চোখে সৌদি আরব মুসলিম রক্ষণশীল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। অনেকটা ইসলামি শরিয়া আইনে পরিচালিত হয় দেশটির বিচারকার্য ও দৈনন্দিন জীবনযাপন। এভাবেই চলছে শতাব্দীর পর শতাব্দী।

দেশটি রাজতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত। বর্তমানে শাসক হিসেবে আছেন সালমান বিন আবদুল আজিজ। কিন্তু তাকে পরিচালনা করেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ক্রাউন প্রিন্সের হাত ধরেই বড় ধরনের পরিবর্তণের দিকে যাত্রা শুরু করেছে দেশটি। এক দশক আগের সৌদি আরবের সাথে বর্তমান দেশটির তৈরি হয়েছে বিশাল ব্যাবধান।

বিনোদন ও ছুটি কাটানোর জন্য পশ্চিমাদের দেখানো পথে হাটতে শুরু করেছে দেশটি। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো সিনেমা হল চালু করা হয় দেশটিতে। বর্তমানে দেশটিতে অন্তত ৬৬টি সিনেমা হল রয়েছে; যেগুলোতে মোট ৬১৮টি পর্দা রয়েছে। ২২টি শহরজুড়ে থাকা এসব সিনেমা হলে ৬৩ হাজার ৩০০ আসন রয়েছে, যা আরব বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ।

গত ছয় বছর সৌদিতে প্রায় এক হাজার ৯০০ সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছে। যার মধ্যে ৪৫টি সৌদির নিজস্ব। এসব সিনেমা প্রদর্শনীর মাধ্যমে আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন রিয়াল। শুধু গত বছর দেশটিতে ১৬ হাজার ৬০০ মিলিয়ন টিকিট বিক্রি হয়েছে।

এছাড়া ২০২১ সালে সৌদি আরব আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু করেন। যেখানে বিশাল অঙ্ক বিনিয়োগ করা হয়। সৌদি আরবের ৪২টি শহরে মোট ৪৭০টি বিনোদন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেখানে নারীপুরুষসহ সবার যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সে কারনে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রেষ্ঠ বিনোদন কেন্দ্র হতে চলেছে সৌদি আরব।

সিনেমা হলের অনুমতির পর সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের একটি অভিজাত এলাকায় নাইটক্লাব চালু করা হয়েছে। বিস্ট হাউস নামে এ নাইটক্লাবে নারীদেরও প্রবেশাধিকার রয়েছে। এ ছাড়া এতে রয়েছে মিউজিক ভেন্যু, একাধিক স্টুডিও এবং ডিজে পার্টির ব্যবস্থা। দেশটিতে আইনত মদ নিষিদ্ধ হওয়ায় ক্লাবেও মদ নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে। তবে আগত অতিথিদের মকটেল ও বিভিন্ন অ্যালকোহলযুক্ত পানি পানের ব্যবস্থা থাকবে।

দেশটিতে চালু হওয়া এ নাইট ক্লাবে সদস্য হতে হলে প্রতিবছর খরচ করতে হবে এক হাজার ৮০০ ইউরো। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ ৪২ হাজার ৪৬৭ টাকা।

মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে একসময় নারীদের জন্য নানা বিধি-নিষেধ ছিল। নারীদের চাকরি তো দূরের কথা, স্টেডিয়ামে খেলা দেখা বা সড়কে গাড়ি নিয়ে বের হওয়াও নিষিদ্ধ ছিল। তবে এসব রক্ষণশীলতা থেকে বের হয়ে আসছে দেশটি। এরই ধারাবাহিকতায় নারীদের গাড়ি চালানোর পাশাপাশি ব্যবসা করারও অনুমতি দেয়া হয়েছে।

রিয়াদ এখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৃহত্তর প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় জড়িত। অন্যদিকে চীনের সঙ্গেও তার সম্পর্ক রয়েছে। চীন এখন সৌদি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। একই সঙ্গে সৌদি আরব তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্ধী ইরানের সঙ্গে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে।

সৌদি বন্ড মার্কেটও দ্রæত বিকশিত হচ্ছে। দেশটির ৩০ বছরের সৌদি কাগজের বন্ড অনুরূপ মার্কিন বন্ডের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি সুদ দেয়। দেশটির সরকারি ঋণ এখনো জিডিপির ৩০ শতাংশেরও কম। আর রিজার্ভের পরিমাণ ৪৪ হাজার বিলিয়ন ডলার।

শেয়ারবাজার আঞ্চলিক শেয়ারবাজারগুলোর তুলনায় বলা যায় টিমটিম করেই জ্বলছিল। কিন্তু ২০২২ সালের পর থেকে এই বাজারে ৭০টি কোম্পানি গণপ্রস্তাব নিয়ে এসেছে।

সৌদি যুব সমাজ; যাদের বয়স ৩১ বছরের মধ্যে তারা ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে এমবিএস নামে অভিহিত করেন। এই তরুণরা এমবিএস দ্বারা আনা সমস্ত পরিবর্তন উপভোগ করছে। অন্যদিকে যাদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি, তাঁরা রীতিমতো ঘৃণা করেন তাঁকে। তারা সৌদি ক্রাউনের কর্মকান্ডে বিব্রত।