সৈয়দ আশরাফের অভাববোধ হচ্ছে কী?
- সময় ১২:২৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারি ২০২৫
- / 180
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির সন্তান তিনি। নিজেও বীর মুক্তিযোদ্ধা। রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিলেন চূড়ান্ত পর্যায়ের মননশীল ও কীর্তিমান। নিজ কর্মগুণেই তিনি বেঁচে আছেন বাংলাদেশের ইতিহাসে। আজ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৯ সালের এই দিনে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল (দেহত্যাগ) করেন তিনি।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বারবার আলোচিত হয়েছে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অভাববোধের বিষয়টি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন মার্জিত ও বিনয়ী। সমসাময়িক রাজনীতিতে তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো নেতার তুলনা চলে না। কারণ তিনি ছিলেন ধীর-স্থির। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল তাঁর অতুলনীয়। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি অসাধারণ শ্রদ্ধা এবং নিজ দলের প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতিও ছিলেন সহনশীল।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বারবার উচ্চারিত হয়েছে যে নামটি তিনি হলেন সৈয়দ আশরাফ। এক কথায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের অন্ত:প্রাণ নেতাকর্মীরা দলের চূড়ান্ত দুঃসময়ে একজন সৈয়দ আশরাফের অভাববোধ করছেন মাঠে প্রান্তরে, বিশ্বাসে অন্তরে এবং নি:শ্বাসে।
অনেকে তো মুখ ফুটে বলেই দিচ্ছেন, সৈয়দ আশরাফকে আরেক টার্ম দলের সাধারণ সম্পাদক করলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে এমন দুঃসময় দেখতে হতো না। কারণ হিসাবে তারা বলছেন, তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সম্মান করতেন। তাদের সঙ্গে কথা বলতেন। কোনো বাতুলতা ছিল না তার মধ্যে। তিনি রাজনৈতিক বক্তব্যের জবাব দিতেন, রাজনৈতিক বিবেচনায়। তাই তিনি অনন্য হয়েই আছেন।
শুধু কিশোরগঞ্জের নয়, সৈয়দ আশরাফ ছিলেন সারা বাংলাদেশের গণমানুষের নেতা। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। তবে আজকে তার মত্যুবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্মরণ করা হবে কিনা? সেটা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। তারা মনে করেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মতো রাজনীতিবিদকে পাঠ করতেই ব্যর্থ হয়েছে গত ৭ বছরের আওয়ামী লীগ। জীবিত থাকতেও তাকে দল থেকে সরিয়ে রাখার অপচেষ্টার ফলাফল ভোগ করছে দলটি।
সৈয়দ আশরাফ ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ছাত্র জীবনে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। স্বাধীনতার পর তিনি ময়মনসিংহ জেলার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি মুক্তিবাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। ভারতের দেরাদুনে প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
জাতীয় চার নেতার সঙ্গে পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাজ্য চলে যান সৈয়দ আশরাফ। প্রবাস জীবনে তিনি যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আশরাফুল ইসলাম ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে আসেন এবং কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালের ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় তিনি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করলেও শপথ গ্রহণের আগেই তিনি মারা যান।
ওয়ান ইলেভেনের সময় দলীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার পর আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত রাখতে সৈয়দ আশরাফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ওই সময় তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরে ২০০৯ সালের সম্মেলনে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। পরে দলের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য নির্বাচিত হন।