সেন্টমার্টিনে কুকুরের খাদ্য সহায়তা
- সময় ০৮:৩৬:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
- / 51
৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের পর থেকেই আলোচনায় একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। সেখানে যেতে সরকারি কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও সেখানে নিয়ম মেনে যাওয়া যাচ্ছে। এরই মাঝে সেন্টমার্টিনের কুকুরগুলোর জন্য খাদ্য সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে বেসরকারি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
কক্সবাজারে টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপে খাদ্য সংকটে থাকা কুকুরের জন্য বিভিন্ন ধরণে খাদ্যপণ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সহায়তা কার্যক্রম চালাচ্ছে বেসরকারি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঢাকাস্থ সম্মিলিত প্রাণি রক্ষা পরিষদ।
রোববার দুপুরে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ জেটি ঘাট দিয়ে ঢাকাস্থ সম্মিলিত প্রাণি রক্ষা পরিষদ নামের সংগঠনটির ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এসব সহায়তা নিয়ে রওনা দেয়।
প্রতিনিধি দলটির দলনেতা আব্দুল কাইয়ুম জানান, কুকুরের জন্য সহায়তা পাঠানো খাবারের তালিকায় রয়েছে ৩ হাজার কেজি ডগফুড, ৫ হাজার ডিম, মুরগির মাংস, চাল, ডাল এবং ২০০ কুকুরের চিকিৎসা সরঞ্জাম। বিকালে সেন্টমার্টিন পৌঁছার পরপরই ক্ষুধার্ত কুকুরগুলোকে প্রথমদিনের মত খাবার সহায়তা প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
পর্যায়ক্রমে দ্বীপের কুকুরগুলোকে প্রথম দফায় পাঠানো খাবার সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানান তিনি।
আব্দুল কাইয়ুম বলেন, সেন্টমার্টিনে খেতে না পেরে অনেক কুকুর মারা যাচ্ছে। এমন সংবাদে তারা সেন্টমার্টিনে কুকুরের জন্য প্রথম দফায় খাবার নিয়ে দ্বীপে অবস্থান করছেন। খাবার সহায়তার পাশাপাশি ২০০ কুকুরের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদিও পাঠানো হয়েছে।
“আমাদের সংগঠনের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সাথে দুইজন চিকিৎসক ও একজন ভেট এসিস্টেন রয়েছেন। সহায়তা পাঠানো খাবারের মধ্যে রয়েছে ডগফুড ৩ হাজার কেজি, ৫ হাজার ডিম, মুরগির মাংস, চাল ও ডাল। আমরা নিজেরাই রান্না করে কুকুরগুলোকে এসব খাবার খাওয়াবো।”
প্রাণিকূলের প্রতি মমতাশীল সকলকে এগিয়ে এসে এই কাজে সহায়তা করার জন্য আহবান জানান তিনি।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলনে, প্রায় ৪ হাজার কুকুর রাতদিন বিচরণ করছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের সর্বত্রই। এর ফলে দ্বীপের পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। প্রায়ই সময় দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
“সরকার প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করার সিদ্ধান্তে স্থানীয় বাসিন্দাদের মতো বিপাকে পড়েছেন দ্বীপের কুকুরগুলো। পর্যটন মৌসুমে দ্বীপে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের উছিষ্ট খাবারই কুকুরগুলোর বাঁচার অবলম্বন ছিল। কিন্তু চলতি মৌসুমে পর্যটক যাতায়ত এখনো শুরু না হওয়ায় কুকুরগুলো খাবার সংকটে পড়ছে।”
ইতিমধ্যে খাবারের অভাবে কিছু সংখ্যক কুকুর মারা গেছে তথ্য দিয়ে স্থানীয় এ ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, “স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতিদিনই দ্বীপের কোথাও না কোথাও ক্ষুধার্ত কুকুরের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এ পর্যন্ত দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় আনুমানিক শতাধিক কুকুরের মৃত্যু হয়েছে।”
সেন্টমার্টিনের সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত ও প্রবাল দ্বীপে পর্যটক সীমিত করার সিদ্ধান্তে পুরো দ্বীপবাসী আর্থিকভাবে চরম অনটনে পড়েছেন। কারণ এই দ্বীপে ট্যুরিজম ব্যবসা ছাড়া বিকল্প কোন জীবিকার পথ নাই। একটা সময় সাগরে মাছ শিকার দ্বীপের মানুষের জীবিকার প্রধান অবলম্বন হলেও এখন ৯০ শতাংশ মানুষ পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত।
চলতি পর্যটন মৌসুমে আশানুরূপ পর্যটক আসতে না দেওয়ায় দ্বীপের মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হাবিবুর রহমান দাবি জানান, “হয় আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থান করা হোক, নতুবা দ্বীপের মানুষের জন্য খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ বলেন, কুকুরের জন্য পরিবেশের খুব ক্ষতি হচ্ছে এবং পর্যটক আসতে না পারায় অনেক কুকুর না খেয়ে মরা যাচ্ছে। দ্বীপে থেকে কিছু কুকুর অন্যত্রে সরিয়ে নিয়ে গেলে ভালো হবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নেজামী বলেন, কুকুর নিয়ে কাজ করে সম্মিলিত একটি সংগঠনের ১১ জন সদস্যের একটি টিম উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কুকুরের জন্য খাবার নিয়ে গেছে সেন্টমাটিন। সাথে ২০০ কুকুরের চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে গেছে । এটি একটি ভালো উদ্যোগ।
উল্লেখ্য, গত ২০২২ সালে কুকুরের সংখ্যা কমাতে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সেন্টমার্টিন থেকে ২ হাজার কুকুরকে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপের গোলারচরে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই অনুযায়ী, ২০২২ সালের মার্চে সেন্টমার্টিন থেকে ৩৬টি কুকুর খাঁচায় বন্দি করে দেশের মূল ভূখন্ডের সর্বশেষ অংশ শাহপরীরদ্বীপে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু পরে কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন এর বিরোধিতা করে। এরপর তাদের দাবির মুখে কুকুর স্থানান্তরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।