সিলেটে অবিবাহিতের হার বেশি কেন ? | Bangla Affairs
০৩:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটে অবিবাহিতের হার বেশি কেন ?

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ১১:৫৮:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট ২০২৪
  • / 311

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভাগ সিলেট, যেখানে পাহাড়ি ভূখণ্ড, সবুজ চা-বাগান এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি মিলে গড়ে উঠেছে এক ভিন্ন জগৎ।

এখানকার তরুণ-তরুণীদের মাঝে প্রবাস জীবনের প্রভাব বিশাল। হাজারো সিলেটি পুরুষ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে কাজ করছেন। বড় একটি অংশ রয়েছে; যারা কিনা পরিবার নিয়ে প্রবাসেই স্থায়ী হচ্ছেন।

২০২৩ সালে এই তরুণ-তরুণীদের নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো – বিবিএস এক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে দেখা যায়, বিভাগটিতে অবিবাহিতের সংখ্যা অন্যান্য বিভাগের চেয়ে বেশি।

বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিলেটে অবিবাহিত পুরুষের হার প্রায় ৪৫ শতাংশ। এলাকাটির প্রায় ৩২ শতাংশ নারীও আছেন অবিবাহিতের তালিকায়। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত বিয়ের বয়স পূর্ণ হওয়ার পরেও এসব তরুণ-তরুণী অবিবাহিত রয়ে গেছেন।

অন্যদিকে বিবাহিতের হারে সবচেয়ে এগিয়ে রাজশাহী। এলাকাটির ৬৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৮২ শতাংশ বিবাহযোগ্য নারী ইতোমধ্যে বিয়ে করে নিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের আইন অনুযায়ী, বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের বয়স ১৮ বছর এবং ছেলের বয়স হতে হবে ন্যূনতম ২১ বছর। কিন্তু সিলেটের ছেলেদের বড় একটি অংশ ২৮ থেকে ৩০ বছর এবং মেয়েরা ২৪ থেকে ২৬ বছর পর্যন্ত বিয়ে থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু কেন ?

দেরিতে বিয়ে করার বেশ কিছু কারন চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, এখানকার তরুণ-তরুণীদের মাঝে বিদেশের প্রভাব অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেক বেশি।
এখানকার তরুণ পুরুষ এবং তাদের পরিবারের বড় একটি অংশ প্রবাসে কর্মরত। তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চায় এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, যা বিয়ে দেরিতে করার অন্যতম কারণ।

আবার প্রবাসে কাজ করার ফলে অনেকের জীবনের লক্ষ্য ও অগ্রাধিকার পরিবর্তিত হয়। প্রবাস জীবন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করতে দেরি হয়।

সিলেটের তরুণ-তরুণীরা উচ্চশিক্ষায়ও বেশ আগ্রহী। এলাকাটিতে শিক্ষার হার ৭১ দশমিক ৯২ শতাংশ। তারা ক্যারিয়ার গঠনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে বেশি সময় দেয়, যাতে তারা ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে উন্নতি করতে পারেন।

শিক্ষাগত অগ্রগতির কারণে অনেক তরুণ-তরুণী তাদের ক্যারিয়ারকে গুরুত্ব দেয়, যা বিবাহকে পিছিয়ে দিতে প্রভাবিত করে।

এখানকার তরুণ প্রজন্ম আধুনিকতা ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতি আকৃষ্ট। তারা নিজেদের মতামত এবং ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয় এবং বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও স্বাধীন। বিয়েকে কেবল সামাজিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে না দেখে, অনেকেই নিজেদের জীবনের লক্ষ্য অর্জনের পর বিয়ে করতে আগ্রহী।

মোদ্দাকথা সিলেটের তরুণ-তরুণীদের দেরিতে বিয়ে করার পেছনে প্রবাস জীবন, শিক্ষা, আধুনিক চিন্তাধারা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রধান ভূমিকা পালন করছে। তারা জীবনের প্রতিটি ধাপকে সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করতে চায়।

শেয়ার করুন

সিলেটে অবিবাহিতের হার বেশি কেন ?

সময় ১১:৫৮:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট ২০২৪

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভাগ সিলেট, যেখানে পাহাড়ি ভূখণ্ড, সবুজ চা-বাগান এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি মিলে গড়ে উঠেছে এক ভিন্ন জগৎ।

এখানকার তরুণ-তরুণীদের মাঝে প্রবাস জীবনের প্রভাব বিশাল। হাজারো সিলেটি পুরুষ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে কাজ করছেন। বড় একটি অংশ রয়েছে; যারা কিনা পরিবার নিয়ে প্রবাসেই স্থায়ী হচ্ছেন।

২০২৩ সালে এই তরুণ-তরুণীদের নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো – বিবিএস এক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে দেখা যায়, বিভাগটিতে অবিবাহিতের সংখ্যা অন্যান্য বিভাগের চেয়ে বেশি।

বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিলেটে অবিবাহিত পুরুষের হার প্রায় ৪৫ শতাংশ। এলাকাটির প্রায় ৩২ শতাংশ নারীও আছেন অবিবাহিতের তালিকায়। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত বিয়ের বয়স পূর্ণ হওয়ার পরেও এসব তরুণ-তরুণী অবিবাহিত রয়ে গেছেন।

অন্যদিকে বিবাহিতের হারে সবচেয়ে এগিয়ে রাজশাহী। এলাকাটির ৬৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৮২ শতাংশ বিবাহযোগ্য নারী ইতোমধ্যে বিয়ে করে নিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের আইন অনুযায়ী, বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের বয়স ১৮ বছর এবং ছেলের বয়স হতে হবে ন্যূনতম ২১ বছর। কিন্তু সিলেটের ছেলেদের বড় একটি অংশ ২৮ থেকে ৩০ বছর এবং মেয়েরা ২৪ থেকে ২৬ বছর পর্যন্ত বিয়ে থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু কেন ?

দেরিতে বিয়ে করার বেশ কিছু কারন চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, এখানকার তরুণ-তরুণীদের মাঝে বিদেশের প্রভাব অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেক বেশি।
এখানকার তরুণ পুরুষ এবং তাদের পরিবারের বড় একটি অংশ প্রবাসে কর্মরত। তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চায় এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, যা বিয়ে দেরিতে করার অন্যতম কারণ।

আবার প্রবাসে কাজ করার ফলে অনেকের জীবনের লক্ষ্য ও অগ্রাধিকার পরিবর্তিত হয়। প্রবাস জীবন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করতে দেরি হয়।

সিলেটের তরুণ-তরুণীরা উচ্চশিক্ষায়ও বেশ আগ্রহী। এলাকাটিতে শিক্ষার হার ৭১ দশমিক ৯২ শতাংশ। তারা ক্যারিয়ার গঠনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে বেশি সময় দেয়, যাতে তারা ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে উন্নতি করতে পারেন।

শিক্ষাগত অগ্রগতির কারণে অনেক তরুণ-তরুণী তাদের ক্যারিয়ারকে গুরুত্ব দেয়, যা বিবাহকে পিছিয়ে দিতে প্রভাবিত করে।

এখানকার তরুণ প্রজন্ম আধুনিকতা ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতি আকৃষ্ট। তারা নিজেদের মতামত এবং ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয় এবং বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও স্বাধীন। বিয়েকে কেবল সামাজিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে না দেখে, অনেকেই নিজেদের জীবনের লক্ষ্য অর্জনের পর বিয়ে করতে আগ্রহী।

মোদ্দাকথা সিলেটের তরুণ-তরুণীদের দেরিতে বিয়ে করার পেছনে প্রবাস জীবন, শিক্ষা, আধুনিক চিন্তাধারা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রধান ভূমিকা পালন করছে। তারা জীবনের প্রতিটি ধাপকে সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করতে চায়।