ঢাকা ১১:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জামালপুরে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে অবৈধ ইটভাটা

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
  • সময় ০৩:১৬:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 54

জামালপুরে অবৈধ ইটভাটা

প্রশাসনের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র কিংবা সরকারি কোনো অনুমোদন ছাড়াই জামালপুর জেলা সদরসহ সাত উপজেলার শতাধিক ইটভাটায় চলছে অবৈধভাবে ইট তৈরি। বেশিরভাগ ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে গাছের গুঁড়ি। আবার আবাসিক এলাকা কিংবা ফসলি উর্বর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটাগুলো। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের ব্যবসা-বাণিজ্য শাখা ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর সদর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, সরিষাবাড়ী ও বকাশিগঞ্জ উপজেলায় অন্তত ১১০টি ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ১২টির। বাকি ৯৮টি ভাটা কীভাবে কোন আইনে চলছে তার কোনো উত্তর নেই পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসনের কাছে। তবে জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বরাবরের মতোই বলছেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।

ডা :তাজুল ইসলাম বলেন, ইটভাটা সৃষ্ট দূষণে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত নানা রোগ দেখা দিতে পারে।

ইটভাটাসৃষ্ট দূষণ পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি উৎপাদন ও ফলমূলের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত এবং গাছপালার স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করছে।

এদিকে, ইটভাটার আগ্রাসনে নষ্ট হচ্ছে তিন ফসলি জমি। অপরিকল্পিত ইটভাটা জমির সর্বনাশ ডেকে আনছে।  যা কৃষি নির্ভর দেশের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ।

ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য কাঠ লাকড়ি
ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য কাঠ লাকড়ি

জানা যায়, ইটভাটা নির্মাণের আগে পরিবেশ অধিদফতর থেকে অনুমতি বা ছাড়পত্র নিতে হয়, যার মেয়াদকাল থাকে এক বছর। তারপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইস্যু করা হয় তিন বছর মেয়াদি লাইসেন্স।

জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতরের অসাধু কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংস্থাকে ম্যানেজ করেই ভাটা মালিকরা ইট পুড়িয়ে থাকেন। ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেকটাই অপারগ।

ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে গাছের গুঁড়ি। ইটভাটা নির্মাণ-সংক্রান্ত আইনের ২০১৩ সালের ৫৯ নম্বর বিধিতে বলা আছে- আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদফতর বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো আইনের অধীন কোনোরূপ অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স, যে নামেই অভিহিত হোক, প্রদান করিতে পারবে না।

এসব আইন উপেক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদফতর সরাসরি যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে। কিন্তু এ জেলায় সরকারের এসব আইন-কানুন যেন সম্পূর্ণ অকার্যকর। আইন প্রয়োগ না থাকায় এখানে যে যেভাবে পারছে যত্রতত্র নির্মাণ করে চলছে ইটভাটা। ইটভাটা অনুসন্ধান কমিটি নামে প্রতিটি জেলায় একটি করে কমিটি রয়েছে।

মানবাধিকার কর্মী ও পরিবেশবাদী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপনের ফলে একদিকে কৃষি জমির উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে অন্যদিকে জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। দ্রুত অবৈধ ইটভাটাগুলো আইনের আওতায় আনা উচিত।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক
জামালপুরের জেলা প্রশাসক

জামালপুর জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম বলেন, ‘ইটভাটাগুলো যেন লাইসেন্স নিয়ে ভাটা পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়ে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করব। তারপরও যারা লাইসেন্স না নিয়ে ও সরকারের সংশ্লিষ্ট আইন না মেনে ভাটা পরিচালনা করবেন তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

জামালপুরে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে অবৈধ ইটভাটা

সময় ০৩:১৬:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রশাসনের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র কিংবা সরকারি কোনো অনুমোদন ছাড়াই জামালপুর জেলা সদরসহ সাত উপজেলার শতাধিক ইটভাটায় চলছে অবৈধভাবে ইট তৈরি। বেশিরভাগ ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে গাছের গুঁড়ি। আবার আবাসিক এলাকা কিংবা ফসলি উর্বর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটাগুলো। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের ব্যবসা-বাণিজ্য শাখা ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর সদর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, সরিষাবাড়ী ও বকাশিগঞ্জ উপজেলায় অন্তত ১১০টি ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ১২টির। বাকি ৯৮টি ভাটা কীভাবে কোন আইনে চলছে তার কোনো উত্তর নেই পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসনের কাছে। তবে জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বরাবরের মতোই বলছেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।

ডা :তাজুল ইসলাম বলেন, ইটভাটা সৃষ্ট দূষণে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত নানা রোগ দেখা দিতে পারে।

ইটভাটাসৃষ্ট দূষণ পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি উৎপাদন ও ফলমূলের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত এবং গাছপালার স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করছে।

এদিকে, ইটভাটার আগ্রাসনে নষ্ট হচ্ছে তিন ফসলি জমি। অপরিকল্পিত ইটভাটা জমির সর্বনাশ ডেকে আনছে।  যা কৃষি নির্ভর দেশের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ।

ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য কাঠ লাকড়ি
ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য কাঠ লাকড়ি

জানা যায়, ইটভাটা নির্মাণের আগে পরিবেশ অধিদফতর থেকে অনুমতি বা ছাড়পত্র নিতে হয়, যার মেয়াদকাল থাকে এক বছর। তারপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইস্যু করা হয় তিন বছর মেয়াদি লাইসেন্স।

জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতরের অসাধু কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংস্থাকে ম্যানেজ করেই ভাটা মালিকরা ইট পুড়িয়ে থাকেন। ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেকটাই অপারগ।

ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে গাছের গুঁড়ি। ইটভাটা নির্মাণ-সংক্রান্ত আইনের ২০১৩ সালের ৫৯ নম্বর বিধিতে বলা আছে- আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদফতর বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো আইনের অধীন কোনোরূপ অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স, যে নামেই অভিহিত হোক, প্রদান করিতে পারবে না।

এসব আইন উপেক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদফতর সরাসরি যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে। কিন্তু এ জেলায় সরকারের এসব আইন-কানুন যেন সম্পূর্ণ অকার্যকর। আইন প্রয়োগ না থাকায় এখানে যে যেভাবে পারছে যত্রতত্র নির্মাণ করে চলছে ইটভাটা। ইটভাটা অনুসন্ধান কমিটি নামে প্রতিটি জেলায় একটি করে কমিটি রয়েছে।

মানবাধিকার কর্মী ও পরিবেশবাদী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপনের ফলে একদিকে কৃষি জমির উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে অন্যদিকে জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। দ্রুত অবৈধ ইটভাটাগুলো আইনের আওতায় আনা উচিত।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক
জামালপুরের জেলা প্রশাসক

জামালপুর জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম বলেন, ‘ইটভাটাগুলো যেন লাইসেন্স নিয়ে ভাটা পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়ে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করব। তারপরও যারা লাইসেন্স না নিয়ে ও সরকারের সংশ্লিষ্ট আইন না মেনে ভাটা পরিচালনা করবেন তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।