সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নে পদে পদে টাকার খেলা

- সময় ০৫:৩৯:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
- / 355
ঢাকার সবচেয়ে কাছের সাভারের কাউন্দিরা ইউনিয়ন। নাগরিক সুবিধা বলতে যা বোঝায় তার কিছুই নেই; আছে পদে পদে বঞ্চনার গল্প। উল্টো নাগরিকদের ঘাঁড়ে নানা রকম ট্রাক্সের ফর্দ। সব-ই যে সরকারি ট্রাক্স বিষয়টি এমন নয়; ইউনিয়ন পরিষদের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা নিজেদের আঁখের গোছাতে চালু করেছেন নিত্য নতুন উপলক্ষ্য।
এ ইউনিয়নের বাসিন্দা, বিধবা সাজেদা। গত বছর তিনি হোল্ডিং ট্যাক্স হিসেবে ৩০০ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু এ বছর কর্তা ব্যাক্তিদের দাবি ২৫ হাজার টাকা ! সাজেদার কলেজ পড়ুয়া ছেলের কন্ঠেও এ নিয়ে ক্ষোভ।
এই ধরনের ঘটনাগুলি সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নে একটি সাধারণ চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই গ্রামের বাসিন্দা মোকসেদের সাথেও একইভাবে ২০ হাজার টাকার দাবির পর শেষ পর্যন্ত ৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু যখন তিনি ৪ হাজার টাকার রশিদ পান, অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা কোথায় গেল জানতে চাইতেই তাকে হুমকি দেওয়া হয়।
একটি বাড়ি মানেই একটি হোল্ডিং ট্যাক্স, সরকারি এমন নিয়মের বাইরে কোথাও কোথাও দাবি করা হচ্ছে রুম প্রতি টাকা।
বাকসাত্রা মৌজায় ইউনিয়নের উদ্যোক্তা আহমদ আলীর নতুন দোতলা আলিশান বাড়ি। এ বাড়ির ট্যাক্স ১২শ’ টাকা, অপরদিকে দুই রুম বিশিষ্ট বিধবা রোকসানা আক্তার এর ছোট এই বাড়িটির হোল্ডিং ট্যাক্সও ১২শ’ টাকা। একমাত্র উপার্জনক্ষম এই বিধবা কষ্টে মুখ লুকিয়ে জানালেন সেই বৈষ্যমের কথা।
এখানেই শেষ না। পঞ্চাশোর্ধ এই নারীর স্বামী মারা গেছেন প্রায় তিন বছর আগে। তিনি হজ্ব করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ তাকে স্বামীর মৃত্যুর সনদপত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
সাভারের একদমই শেষ প্রান্তের ইউনিয়ন হওয়ায় অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকে এখানকার অনিয়ম ও দুর্নীতি। এর আগে টিসিবি এবং ওএমএস এর চাল বিতরনের ক্ষেত্রেও বাড়তি ২০-৩০ টাকা করে নেয়ার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে।
জন্ম নিবন্ধন, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, দুগ্ধ ভাতা সহ সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচীর নানা সুবিধা গ্রহিতাদের জিম্মি করে বাড়তি অর্থ আদায়েরও তথ্য প্রমান রয়েছে টিম অ্যাফেয়ার্সের কাছে।
প্রায় ২৭ হাজার ভোটারের এই ইউনিয়নের চারপাশ নদী ঘেরা। এলাকাটিতে পয়:নিস্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বাসা-বাড়ির সমস্ত ময়লা আবর্জনা গিয়ে পড়ছে পাশের নদী তুরাগে। এ নিয়েও ক্ষোভ স্থানীয়দের মাঝে।
এসব সমস্যা সমাধানে স্থানীয়রা প্রতিনিয়ত ভীড় করছেন ইউনিয়ন পরিষদের সামনে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কাউন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সচিব জানান, জনবল স্বল্প থাকায় ট্যাক্স তুলতে লোক ভাড়া করা লাগে ও ২০২৩ ইং সালের নীতিমালার আলোকে নেওয়া হয় ট্যাক্স।
কর্মকর্তাদের এসব কথায় সন্তুষ্ট নন এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব যাদের কাছে তারাই এসব দুর্নীতির সাথে জড়িত।