০৩:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাত মার্চ: অবিনশ্বর এক মহাকাব্য

উৎপল দাস
  • সময় ১১:১৩:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫
  • / 66

সাত মার্চ

সাত মার্চ ১৯৭১—একটি দিন, একটি ভাষণ, একটি মহাকাব্য। এদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দাঁড়িয়ে যে ভাষণ দেন, তা শুধু কিছু শব্দের সংকলন ছিল না, ছিল একটি পরাধীন জাতির মুক্তির সনদ।

সেদিন দুপুরে লাখো জনতার উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এই এক ঘোষণাতেই তিনি বাঙালির মুক্তির দিকনির্দেশনা দিয়ে দিলেন। এই ভাষণ ছিল শোষিত, নিপীড়িত, পরাধীন বাঙালির হৃদয়ের স্পন্দন।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর থেকেই বাঙালির ওপর নেমে আসে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের দুঃশাসন। একে একে ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মাধ্যমে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি হয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটে, গণতান্ত্রিক রায় মানতে অস্বীকার করে। বঙ্গবন্ধু তখন ধাপে ধাপে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যান।

সাত মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের সরাসরি ঘোষণা দেননি, কিন্তু তার কৌশলী ভাষায় বুঝিয়ে দেন, স্বাধীনতা আসন্ন। তিনি বলেন, “প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।” এই আহ্বানই ছিল প্রতিরোধের প্রস্তুতি। তার এই ঐতিহাসিক ভাষণই মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণা হয়ে ওঠে।

এই ভাষণের পর সমগ্র বাঙালি জাতি এক হয়ে যায়, গড়ে তোলে প্রতিরোধ। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা বর্বর গণহত্যা শুরু করলে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর আসে স্বাধীনতা।

বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্ব ইতিহাসেও তা স্থান করে নিয়েছে। ইউনেস্কো ২০১৭ সালে এই ভাষণকে “মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড” তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা এর বিশ্বজনীন তাৎপর্যকে তুলে ধরে।

সাত মার্চের ভাষণ কেবল একটি দিন বা ভাষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি বাঙালির অস্তিত্ব, জাতিসত্তার চেতনা, এবং স্বাধীনতার চিরন্তন অনুপ্রেরণা। তাই এই ভাষণ অবিনশ্বর এক মহাকাব্য, যা চিরকাল বাঙালির হৃদয়ে জ্বলজ্বল করবে।

শেয়ার করুন

সাত মার্চ: অবিনশ্বর এক মহাকাব্য

সময় ১১:১৩:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫

সাত মার্চ ১৯৭১—একটি দিন, একটি ভাষণ, একটি মহাকাব্য। এদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দাঁড়িয়ে যে ভাষণ দেন, তা শুধু কিছু শব্দের সংকলন ছিল না, ছিল একটি পরাধীন জাতির মুক্তির সনদ।

সেদিন দুপুরে লাখো জনতার উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এই এক ঘোষণাতেই তিনি বাঙালির মুক্তির দিকনির্দেশনা দিয়ে দিলেন। এই ভাষণ ছিল শোষিত, নিপীড়িত, পরাধীন বাঙালির হৃদয়ের স্পন্দন।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর থেকেই বাঙালির ওপর নেমে আসে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের দুঃশাসন। একে একে ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মাধ্যমে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি হয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটে, গণতান্ত্রিক রায় মানতে অস্বীকার করে। বঙ্গবন্ধু তখন ধাপে ধাপে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যান।

সাত মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের সরাসরি ঘোষণা দেননি, কিন্তু তার কৌশলী ভাষায় বুঝিয়ে দেন, স্বাধীনতা আসন্ন। তিনি বলেন, “প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।” এই আহ্বানই ছিল প্রতিরোধের প্রস্তুতি। তার এই ঐতিহাসিক ভাষণই মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণা হয়ে ওঠে।

এই ভাষণের পর সমগ্র বাঙালি জাতি এক হয়ে যায়, গড়ে তোলে প্রতিরোধ। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা বর্বর গণহত্যা শুরু করলে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর আসে স্বাধীনতা।

বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্ব ইতিহাসেও তা স্থান করে নিয়েছে। ইউনেস্কো ২০১৭ সালে এই ভাষণকে “মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড” তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা এর বিশ্বজনীন তাৎপর্যকে তুলে ধরে।

সাত মার্চের ভাষণ কেবল একটি দিন বা ভাষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি বাঙালির অস্তিত্ব, জাতিসত্তার চেতনা, এবং স্বাধীনতার চিরন্তন অনুপ্রেরণা। তাই এই ভাষণ অবিনশ্বর এক মহাকাব্য, যা চিরকাল বাঙালির হৃদয়ে জ্বলজ্বল করবে।