সাংগ্রাই সুরে মাতোয়ারা পুরো পাহাড় | Bangla Affairs
০৭:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাংগ্রাই সুরে মাতোয়ারা পুরো পাহাড়

আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান
  • সময় ১১:২২:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  • / 21

সাংগ্রাই সুরে মাতোয়ারা পুরো পাহাড়

“সাংগ্রাইমা ঞিঞি ঞাঞা হির্কেজেহ পাহমে” যার অর্থ হল- বৈসাবি আসছে চলো একসাথে মৈত্রীবর্ষন খেলি’ এ-ই মধুর সুরের ছন্দে মাতোয়ারা পুরো পাহাড়ে এখন উৎসবের আমেজ। মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান উৎসব মাহা: সাংগ্রাই পোয়ে:। এই উৎসবকে ঘিরে প্রতিটি পাহাড় ও প্রত্যেক গ্রামপল্লীতে সেজেছে বর্ণিল সাজে। মাসব্যাপী এই আয়োজনকে ঘিরে পুরো পাহাড় জুড়ে বইছে আনন্দের হাওয়া। পাহাড়ের আনাচে কানাচে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা সম্প্রদায়ের সামাজিক উৎসবটি ছড়িয়ে পড়েছে। আজ থেকে আনন্দে শোভাযাত্রা মাধ্যমে শুরু হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমাদের অন্যতম ধর্মীয় সংস্কৃতি ও সামাজিক উৎসব মাহাঃ সাংগ্রাই পোয়েঃ বা জলকেলি উৎসব।

সকাল থেকেই ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠ প্রাঙ্গনে নিজস্ব সংস্কৃতি পোশাক পরিধান করে জড়ো হন মারমা,চাকমা,ম্রো, বম,খুমি, ত্রিপুড়াসহ পাহাড়ের ১১টি জাতিগোষ্টি মানুষ। এছাড়াও বিভিন্ন পেষ্টুন ব্যানার নিয়ে ছোট-বড় সকল বয়সের মানুষ শোভাযাত্রায় অংশ নেন। এই ঐতিহ্যবাহী সামাজিক সংস্কৃতি উৎসবে আকাশে বেলুল উড়িয়ে মঙ্গলময় শোভাযাত্রার শুভ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শামিম আরা রিনি। এছাড়াও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউটের পরিচালক নুক্রাচিং মারমা, আঞ্চলিক পরিষদে সদস্য কেএসমং মারমা,সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফা সুলতানা খান হীরামনি, উৎসব উদযাপন পরিষদে সভাপতি চনুমং মারমাসহ শতাধিক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা অংশ নেন।

সাংগ্রাই সুরে মাতোয়ারা পুরো পাহাড়
সাংগ্রাই সুরে মাতোয়ারা পুরো পাহাড়

উদ্বোধন শেষে জেলা শহর জুড়ে বের করা হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গলময় শোভাযাত্রায়। শহরে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউটের এসে শেষ হয়। অংশ নেন ১২টি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর। পরে শান্তি ও সমৃদ্ধির চেতনায় উজ্জীবিত মাহা সাংগ্রাইং” স্লোগানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট হল রুমে শুরু হয় বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা। সে পূজায় বয়োজ্যেষ্ঠদের মাঝে মোমবাতি, আগরবাতি, দেশলাই, ফলমূলসহ দান করেন আয়োজকরা।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, আসন্ন সাংগ্রাই পোয়েকে সামনে রেখে ১৩ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সাপ্তাহব্যাপী নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। ১৪ তারিখে শুরু হবে মুল আনুষ্ঠানিকতা। সকালে বিহারের দায়ক-দায়িকাদের উদ্দেশ্য ছোয়াইং (আহার) ফলমূল ও অর্থদান, বিকালে বুদ্ধাস্নান ও রাতে বিভিন্ন গ্রামের পিঠা তৈরি করা হবে। ১৫ তারিখ রাজার মাঠে ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা, তৈলাক্ত বাঁশ আরোহন ও ১৬ থেকে ১৮ তারিখ টানা তিনদিন মৈত্রী পানি বর্ষণের পাশাপাশি নিজেদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি পোশাকে নৃত্যরত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে উৎসব উদযাপন পরিষদ।

বম সম্প্রদায়ের তরুণী পিয়াল বম বলেন, আমাদের বম জনগোষ্ঠীরাও সকাল থেকে সকল জাতিগোষ্ঠীর একসাথে মিলিত হয়েছি। এতে আমরা খুব আনন্দিত। আর পুরনো দিনে বম জাতিগোষ্ঠীদের সাথে যে হয়রানী, হত্যাকান্ড ঘটনা হয়েছে সেই কলঙ্কিত দিনটি মুছে যাক আর নতুন বছরে শান্তি ফিরে আসুক।

সাংগ্রাই সুরে মাতোয়ারা পুরো পাহাড়
সাংগ্রাই সুরে মাতোয়ারা পুরো পাহাড়

ম্রো সম্প্রদায়ের তরুণ চংক্রি ম্রো বলেন, ম্রো ভাষায় চাংক্রান বলা হয়। এ উৎসবের আমরা উচ্ছ্বাসিত ও আনন্দিত। সকলে এক কাতারে মিলিত হয়ে আনন্দ ও মজা করব।

মারমা তরুণী হ্লাহ্লা সিং মারমা বলেন, এই সাংগ্রাই পোয়েঃ মারমাদের সামাজিক, সংস্কৃতি ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব। অপরজনকে শুদ্ধ জলের ভিজিয়ে পুরনো বছরে দুঃখ গ্লানি মুছে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া।

জেলা প্রশাসক শামিম আরা রিনি বলেন, পাহাড়ে যে সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি রয়েছে তাদের যে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সবগুলো মিলে বাংলাদেশের কালচারকে ঐক্যরিত সমৃদ্ধ করেছে। পাহাড়ের যে কালচার ও বৈচিত্র্য এই সাংগ্রাই উৎসবের মাধ্যমে তা নিশ্চিত হয়েছে। তাই সাংগ্রাই উৎসবের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা দুঃখ গ্লানি ভূলে আগামীতেও আনন্দময় দিন কাটুক সেই প্রত্যশা ব্যক্ত করেন তিনি

শেয়ার করুন

সাংগ্রাই সুরে মাতোয়ারা পুরো পাহাড়

সময় ১১:২২:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

“সাংগ্রাইমা ঞিঞি ঞাঞা হির্কেজেহ পাহমে” যার অর্থ হল- বৈসাবি আসছে চলো একসাথে মৈত্রীবর্ষন খেলি’ এ-ই মধুর সুরের ছন্দে মাতোয়ারা পুরো পাহাড়ে এখন উৎসবের আমেজ। মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান উৎসব মাহা: সাংগ্রাই পোয়ে:। এই উৎসবকে ঘিরে প্রতিটি পাহাড় ও প্রত্যেক গ্রামপল্লীতে সেজেছে বর্ণিল সাজে। মাসব্যাপী এই আয়োজনকে ঘিরে পুরো পাহাড় জুড়ে বইছে আনন্দের হাওয়া। পাহাড়ের আনাচে কানাচে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা সম্প্রদায়ের সামাজিক উৎসবটি ছড়িয়ে পড়েছে। আজ থেকে আনন্দে শোভাযাত্রা মাধ্যমে শুরু হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমাদের অন্যতম ধর্মীয় সংস্কৃতি ও সামাজিক উৎসব মাহাঃ সাংগ্রাই পোয়েঃ বা জলকেলি উৎসব।

সকাল থেকেই ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠ প্রাঙ্গনে নিজস্ব সংস্কৃতি পোশাক পরিধান করে জড়ো হন মারমা,চাকমা,ম্রো, বম,খুমি, ত্রিপুড়াসহ পাহাড়ের ১১টি জাতিগোষ্টি মানুষ। এছাড়াও বিভিন্ন পেষ্টুন ব্যানার নিয়ে ছোট-বড় সকল বয়সের মানুষ শোভাযাত্রায় অংশ নেন। এই ঐতিহ্যবাহী সামাজিক সংস্কৃতি উৎসবে আকাশে বেলুল উড়িয়ে মঙ্গলময় শোভাযাত্রার শুভ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শামিম আরা রিনি। এছাড়াও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউটের পরিচালক নুক্রাচিং মারমা, আঞ্চলিক পরিষদে সদস্য কেএসমং মারমা,সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফা সুলতানা খান হীরামনি, উৎসব উদযাপন পরিষদে সভাপতি চনুমং মারমাসহ শতাধিক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা অংশ নেন।

সাংগ্রাই সুরে মাতোয়ারা পুরো পাহাড়
সাংগ্রাই সুরে মাতোয়ারা পুরো পাহাড়

উদ্বোধন শেষে জেলা শহর জুড়ে বের করা হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গলময় শোভাযাত্রায়। শহরে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউটের এসে শেষ হয়। অংশ নেন ১২টি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর। পরে শান্তি ও সমৃদ্ধির চেতনায় উজ্জীবিত মাহা সাংগ্রাইং” স্লোগানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট হল রুমে শুরু হয় বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা। সে পূজায় বয়োজ্যেষ্ঠদের মাঝে মোমবাতি, আগরবাতি, দেশলাই, ফলমূলসহ দান করেন আয়োজকরা।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, আসন্ন সাংগ্রাই পোয়েকে সামনে রেখে ১৩ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সাপ্তাহব্যাপী নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। ১৪ তারিখে শুরু হবে মুল আনুষ্ঠানিকতা। সকালে বিহারের দায়ক-দায়িকাদের উদ্দেশ্য ছোয়াইং (আহার) ফলমূল ও অর্থদান, বিকালে বুদ্ধাস্নান ও রাতে বিভিন্ন গ্রামের পিঠা তৈরি করা হবে। ১৫ তারিখ রাজার মাঠে ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা, তৈলাক্ত বাঁশ আরোহন ও ১৬ থেকে ১৮ তারিখ টানা তিনদিন মৈত্রী পানি বর্ষণের পাশাপাশি নিজেদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি পোশাকে নৃত্যরত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে উৎসব উদযাপন পরিষদ।

বম সম্প্রদায়ের তরুণী পিয়াল বম বলেন, আমাদের বম জনগোষ্ঠীরাও সকাল থেকে সকল জাতিগোষ্ঠীর একসাথে মিলিত হয়েছি। এতে আমরা খুব আনন্দিত। আর পুরনো দিনে বম জাতিগোষ্ঠীদের সাথে যে হয়রানী, হত্যাকান্ড ঘটনা হয়েছে সেই কলঙ্কিত দিনটি মুছে যাক আর নতুন বছরে শান্তি ফিরে আসুক।

সাংগ্রাই সুরে মাতোয়ারা পুরো পাহাড়
সাংগ্রাই সুরে মাতোয়ারা পুরো পাহাড়

ম্রো সম্প্রদায়ের তরুণ চংক্রি ম্রো বলেন, ম্রো ভাষায় চাংক্রান বলা হয়। এ উৎসবের আমরা উচ্ছ্বাসিত ও আনন্দিত। সকলে এক কাতারে মিলিত হয়ে আনন্দ ও মজা করব।

মারমা তরুণী হ্লাহ্লা সিং মারমা বলেন, এই সাংগ্রাই পোয়েঃ মারমাদের সামাজিক, সংস্কৃতি ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব। অপরজনকে শুদ্ধ জলের ভিজিয়ে পুরনো বছরে দুঃখ গ্লানি মুছে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া।

জেলা প্রশাসক শামিম আরা রিনি বলেন, পাহাড়ে যে সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি রয়েছে তাদের যে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সবগুলো মিলে বাংলাদেশের কালচারকে ঐক্যরিত সমৃদ্ধ করেছে। পাহাড়ের যে কালচার ও বৈচিত্র্য এই সাংগ্রাই উৎসবের মাধ্যমে তা নিশ্চিত হয়েছে। তাই সাংগ্রাই উৎসবের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা দুঃখ গ্লানি ভূলে আগামীতেও আনন্দময় দিন কাটুক সেই প্রত্যশা ব্যক্ত করেন তিনি